প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের নির্মান কাজেও দায়িত্বহীনতা, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ হাসিনা হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্মাণকাজ দুই বছর ধরে বন্ধ

রংপুর ব্যুরো:  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ বরাদ্দে নির্মানাধীন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ হাসিনা হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্মাণকাজ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতার কারনে দুই বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে। এতে নির্মানাধিন ভবনের রডে মরিচা ধরে গেছে। কাজ শুরু করা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা । ইতোমধ্যে প্রকল্পে বরাদ্দ আসা ২০ কোটি টাকা ফেরত গেছে, চলতি অর্থ বছরেওর বরাদ্দ আসা ১৭ কোটি টাকা ফেরত যাওয়ার প্রহর গুনছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পের নির্মাণকাজে এমন অনিশ্চয়তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্র প্রকাশ, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ভবন দুটির নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কিছুদিন পর বিল পরিশোধ সংক্রান্ত জটিলতায় নির্মানকাজ বন্ধ হয়ে যায়। এতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নির্ধারিত বরাদ্দের কাজ শেষ না হওয়ায় ১৮ কোটি টাকা ফেরত গেছে। আর চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রয়েছে সাড়ে ১৭ কোটি টাকা। এবছরও নির্ধারিত বরাদ্দের কাজ শেষ হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ পাওয়া অর্থও ফেরত যেতে পারে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুল জলিল মিয়া ২০১২ সালের ১০ মে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি ছাত্রী হল এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বামীর নামে প্রতিষ্ঠিত ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর জন্য একটি স্বতন্ত্র ভবন নির্মানে বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন। আবেদনের ২ মাস ১২ দিন পর ওই বছর ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে একটি চিঠির মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সচিব এবং শিক্ষা ও প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীকে ভবন দুটি নির্মাণের লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন এবং গৃহিত কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করতে বলা হয়। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এমন নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ওই বছরেই বিষয়টি যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্লানিং কমিশনে ওঠে। প্লানিং কমিশন হয়ে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় যায় প্রকল্পটি। প্রস্তাবনায় ৬তলা ছাত্রী হল এবং ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণের কথা বলা হয়।  কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় ৬ তলা হলকে ১০ তলা নির্মাণের ঘোষণা দেন। সেই হলে কীচেন, ডাইনিং, বিউটি পার্লার, লন্ড্রিসহ কী কী সুবিধা থাকবে তাও তিনি উল্লেখ করেন। ফলে এই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং প্রকল্পটি প্রায় ১০০ কোটি টাকার প্রকল্পে রুপান্তরিত হয়।

সূত্র মতে, ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কন্ফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্পের নির্মান কাজের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পাঁচ মাস কাজ যেতে না যেতেই ২০১৭ সালের ৬ মে তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. এ কে এম নূর-উন-নবীর দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। ৭ মে নতুন ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরই নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ তুলে কাজ বন্ধ করে দেন বর্তমান ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। এরই মধ্যে বিশ^বিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বিশ^বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ তদারকি করার জন্য বর্তমান ভিসি তাঁর ভাগ্নে প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদেরকে বিশ^বিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস কমিটির সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন। অপরদিকে এই ভবন নির্মানে নিয়োজিত আর্কিটেককে অব্যাহতি দিয়ে নতুন আর্কিটেক হিসেবে ভিসির  সেই ভাগ্নে মঞ্জুর কাদেরকে নিয়োগ দেযা হয়। যিনি এই ভবন নির্মানের প্রথম আর্কিটেক নিয়োগের ওপেন টেন্ডারে কাজ পান নি। এভাবে গত দুই বছরেও এই কাজের কোন অগ্রগতি হয়নি। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় নির্মানাধিন ভবনের রডে মরিচা ধরেছে।

এই ভবন দুটি নির্মানের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বিটিসি নিউজকে বলেন, প্রকল্পের ৩০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এখনও ৭০ ভাগ কাজ বাকি আছে। ভবনের নকশা পরিবর্তন করার কারনে কাজ বন্ধ রয়েছে। আগামী জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে। কিন্তু কাজ শেষ করা অসম্ভব। এই কাজ শেষ করতে নকশা জটিলতা কাটানোর পর আরও অন্তত এক বছর সময় লাগবে।

বিশ^বিদ্যালয়ের উপ সহকারী প্রকৌশলী কমলেশ চন্দ্র সরকার বিটিসি নিউজকে বলেন, আগামী জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। ভবন দুটির নির্মানকাজ শুরু হবার পর প্রায় একবছর বন্ধ ছিল। তাই আরও কিছুটা সময় লাগবে। অর্থ ফেরত যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত অর্থবছরে কিছু টাকা ফেরত গেছে। তবে এবছর যাতে টাকা ফেরত না যায় সে ব্যাপারে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন আশা করি পদক্ষেপ গ্রহন করবে।

এ ব্যপারে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ বিটিসি নিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রী অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজ দুটি দ্রুত গতিতে সম্পন্ন করার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে এর দায়দায়িত্ব সব প্রশাসনকে বহন করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বর্তমান সেক্রেটারি তাবিউর রহমান প্রধান বিটিসি নিউজকে জানান, পুর্ববর্তি প্রশাসন নকশা বহির্ভুতভাবে কিছু কাজ করার কারনে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। এজন্য প্রধান প্রকৌশলীকে বরখাস্তও করা হয়েছে। তারা যদি অনুমোদন নিতো তা হলে হয়তো জটিলতা হতো না। সেকারনে কাজটি মন্থর গতিতে চলছে এতোদিন। এখন সব জটিলতা কেটে গেছে। পুরোদমে কাজ চলছে। নির্দিস্ট সময়ের মধ্যে কাজ না হলেও খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই ভবন দুটির কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।

এ ব্যপারে কথা বলতে ভিসি প্রফেসর ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ’র সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায় নি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রংপুর ব্যুরো প্রধান সরকার মাজহারুল মান্নান।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.