প্রতারণা করে রাসিকের ৮০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা : মেয়রের অভিযোগ

(সংবাদ সম্মেলনে রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম. খায়রুজ্জামান লিটন)

প্রেস বিজ্ঞপ্তি:   

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আসসালামু আলাইকুম।

আপনারা জানেন যে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন দেশের মধ্যে অন্যতম একটি সিটি কর্পোরেশন। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মহানগরীর সকল নাগরিকের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, সবুজায়ন, বায়ু দূষণ কমানো, ইপিআই কার্যক্রমে জাতীয়ভাবে পরপর ১০ বার দেশসেরা হওয়া সহ নানাবিধ ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অদম্য অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতায় ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের প্রাণের মহানগরী রাজশাহীও উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে।
এমতাবস্থায় গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, আন্তর্জাতিক একটি চক্র জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধমে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপতৎপরায় লিপ্ত হয়েছে। চক্রটি কৌশলে আমার পাসপোর্ট জালিয়াতি, ভুয়া ইমেইল আইডি ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার ও সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তার ভূয়া নাম, পদবী ও স্বাক্ষর ব্যবহারের মাধ্যমে কোরিয়ান SHINSHIN Global Co. Ltd নিকট হতে ৮টি ফায়ার ফাইটিং ট্রাক ক্রয়ে ৯টি ভুয়া ডকুমেন্ট তৈরি করে চুক্তিপত্র সম্পাদন করেছে বলে জানতে পেরেছি।
এখানে উল্লেখ থাকে যে, SHINSHIN Global Co. Ltd তৃতীয় কোন পক্ষ দ্বারা প্রতারিত হয়েছে নাকি SHINSHIN Engineering Co. Ltd এর প্রেসিডেন্ট Byeong Cheol SHIN ও তার সহযোগীরা নিজেরাই বিভিন্ন ভূয়া ডকুমেন্ট তৈরি করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে ফাঁসানোর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে, তা যথাযথ তদন্ত ও তথ্য প্রমাণ প্রাপ্তি সাপেক্ষে জানা যাবে। তবে আমার সাথে ফোনালাপ কিংবা আমার ইমেইলে যোগাযোগ না করে ভূয়া ইমেইলে যোগাযোগের মাধ্যমে চুক্তিপত্র সম্পাদনের বিষয়টি অবহিত করার পরও দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে B.C. Shin কর্তৃক একাধিকবার যোগাযোগ ও মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করায় আমার ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণœ হয়েছে। যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টের গভীর অপচেষ্টা।
প্রিয় সাংবাদিকবন্ধুরা,
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন বাংলাদেশের একটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কার্যাবলীর মধ্যে ফায়ার ফাইটিং সেবা অন্তভর্‚ক্ত নয়। বাংলাদেশে ফায়ার ফাইটিং এর জন্য ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স নামক একটি স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ সরকারী সংস্থা রয়েছে। স্বভাবতই, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ফায়ার ফাইটিং ট্রাক ক্রয়ের কোন প্রশ্নই আসে না। বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক ও অযৌক্তিকও।
বাংলাদেশে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া P.P.A-২০০৬ ও P.P.R-২০০৮ অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের সকল ক্রয় কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। যে কোন পণ্য (যানবাহন) ক্রয়ের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মেনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সরবরাহকারীর নিকট থেকে ক্রয় করা হয়ে থাকে। সরাসরি বিজ্ঞপ্তি ব্যতিরেকে সরকারি অর্থের মাধ্যমে এরূপ বৃহৎ অংকের পণ্য (যানবাহন) কোন সরবরাহকারীর নিকট থেকে ক্রয়ের সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে কোরিয়ান SHINSHIN Global Co. Ltd এর সাথে ১০.১২ Million USD এর সরাসরি ক্রয়চুক্তি সরকারি ক্রয় নীতিমালা পরিপন্থি ও বাস্তবসম্মত নয়।
সম্মানিত সাংবাদিক ভাইয়েরা,
গত ১৩-০১-২০১৮ তারিখে SHINSHIN Engineering Co. Ltd রাজশাহীতে ১০০ MW Solar Power Plant নির্মাণের আগ্রহ দেখিয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বরাবর পত্র দেয়। পত্রের প্রেক্ষিতে সেই সময়ে SHINSHIN Engineering Co. Ltd এর প্রেসিডেন্ট B.C. Shin রাজশাহীতে আসেন। একাধিক আলোচনার পর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে Solar Power Plant নির্মাণে অনাগ্রহ দেখানোয় সে সময়েই পত্রযোগাযোগসহ এ বিষয়টির সমাপ্তি ঘটে।
এর প্রায় তিন বছর পর ০১.১২.২০২১ তারিখে B.C. Shin তার টেলিফোন নম্বর থেকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যাডভাইজার মোঃ আশরাফুল হককে ফোন করে ০৮টি ফায়ার ফাইটিং ট্রাক রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ক্রয়ের বিষয়ে জানতে চান। তখন সিটি কর্পোরেশনের সাথে কোম্পানিটির কখনোই যোগাযোগ না হওয়ার বিষয়টি B.C. Shin কে জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর B.C. Shin কয়েকটি ই-মেইল পাঠিয়ে তার কোম্পানি থেকে ০৮টি ফায়ার ফাইটিং ট্রাক ক্রয় বিষয়ক ভুয়া ডকুমেন্ট প্রেরণ করেন। সিটি কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যাডভাইজার মোঃ আশরাফুল হকের নিকট প্রেরিত ডকুমেন্ট ও পূর্বের কথিত ইমেইলসমূহ যাচাই করে দেখা যায় যে, B.C. Shin ০৮টি ফায়ার ফাইটিং ট্রাক ক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় যোগাযোগ একটি ভূয়া ইমেইল এড্রেস (khzzaman_liton@yahoo.com) এর সাথে করেছেন। যা আমার ইমেইল এড্রেস নয়। প্রকৃতপক্ষে, আমার ইমেইল এড্রেস khzaman_liton@yahoo.com। লক্ষনীয় যে, আমার ইমেইল এড্রেস থেকে B.C. Shin এর যোগাযোগকৃত ইমেইল এড্রেসে একটি জেড (z) বেশি। B.C. Shin তার কথিত অর্থ লেনদেনের কোনো পর্যায়ে তিনি আমার সাথে ফোনালাপ বা আমার প্রকৃত ইমেইল এড্রেসে কোন ইমেইল প্রেরণ করেননি।
এরপরও গত ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে তিনি আমার বরাবর কথিত যে Demand Notice প্রেরণ করেছেন, তার সংযুক্তি হিসেবে প্রাপ্ত ০৯টি ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাই করে আমার পাসপোর্ট জালিয়াতি ও ভূয়া ইমেইল আইডি ব্যবহার, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তার ভূয়া নাম, পদবী ও স্বাক্ষর ব্যবহারের বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। যার কিছু বর্ণনা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো। B.C. Shin এর ডকুমেন্টে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের যে প্যাড ব্যবহার করা হয়েছে, তা কর্পোরেশনের নয়। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এর যে নাম দেখানো হয়েছে, সে নামে কোন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সিটি কর্পোরেশনে কখন কর্মরত ছিলেন না। চুক্তিতে মো: ইসলাম খান উদ্দিন নামে সিটি কর্পোরেশনের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার নাম, পদবী ও সীল উল্লেখ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সিটি কর্পোরেশনে মো: ইসলাম খান উদ্দিন নামে কোন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বর্তমানে কর্মরত নেই বা কখনো ছিলেন না। এতে প্রমানিত হয়, কোরিয়ান SHINSHIN Global Co. Ltd এর প্রদানকৃত চুক্তিপত্রটি বানোয়াট ও ভূয়া।
এছাড়া ইমেইলে (GMT+1) টাইম জোন দেখা যায়। যা বাংলাদেশ (GMT+6) বা দক্ষিণ কোরিয়া (GMT+9) এর টাইম জোন নয়। বরং GMT+1 টাইম জোন নাইজেরিয়াসহ কয়েকটি দেশের। ডকুমেন্টে প্রদত্ত ইমেইল এড্রেস ও মোবাইল নাম্বার আমার নয়। ডকুমেন্ট হিসেবে সংযুক্ত আছে পাসপোর্টের দুটি জাল পাতা। সেখানে প্রদত্ত আমার নাম, পাসপোর্ট নাম্বার, ইর্মাজেন্সী কন্টাক্ট ও অন্যান্য তথ্যাদি সঠিক নয়। পাসপোর্টে থাকা ছবিটি পাসপোর্ট সাইজের না। আমার ছবিটি পোস্টার বা ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করে পাসপোর্টে লাগানো হয়েছে। সুতরাং B.C. Shin এর কথিত লেনদেনের দায় আমার বা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর উপর বর্তায় না।
আন্তর্জাতিক বাজার হতে বাংলাদেশে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তফশিলী ব্যাংকে এল.সি খোলার মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করা হয়ে থাকে। কোরিয়ান SHINSHIN Global Co. Ltd তাদের স্ব-ব্যাখ্যাত আবেদনপত্রে দাবী করেছে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র মহোদয় কোরিয়ান SHINSHIN Global Co. Ltd কে ফিলিপাইন ও যুক্তরাজ্যের জনৈক ব্যক্তিবর্গকে ৭৮,৮৯৩ USD প্রদান করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সংযুক্তিতে তঞ্চকতাপূর্ণ ক্রয়চুক্তিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় কোরিয়ান SHINSHIN Global Co. Ltd কর্তৃক দক্ষিণ কারিয়ায় উৎপাদিত ফায়ার ফাইটিং ট্রাক রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে সরবরাহ করবেন। সেক্ষেত্রে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র মহোদয় কর্তৃক কোরিয়ান SHINSHIN Global Co. Ltd কে ফিলিপাইন ও যুক্তরাজ্যে অর্থ প্রেরণের নির্দেশনার দাবীটি হাস্যকর ও অযৌক্তিক।
আমার ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় অপতৎপরতায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে বোয়ালিয়া মডেল থানায় জিডি করা হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে বাংলাদেশ দূতাবাস, সিউল, দক্ষিণ কোরিয়াকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। চক্রটির বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আজকের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য গুরুত্বসহকারে আপনাদের স্বনামধন্য গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ/প্রচারের মাধ্যমে দেশ ও জাতির সামনে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করবেন বলে আশা করি। দীর্ঘক্ষণ আমার বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শোনায় আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।                                                                                এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন
                                                                                                                           মেয়র
                                                                                                                           রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিটি কর্পোরেশনে প্যানেল মেয়র-১ ও ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন, সচিব মোঃ মশিউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ারিং এডভাইজার মোঃ আশরাফুল হক, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইমরানুল হক প্রমুখ।
সংবাদ প্রেরক স্বা/-জনসংযোগ কর্মকর্তা, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.