পোরশায় নারী কেলেংকারী শিক্ষক আলমগীরের চাকরিচ্যুতের দাবী এলাকাবাসীর


নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর পোরশায় শিক্ষক আলমগীর কবির (৩৮) এর বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারী সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ ধর্ষণ মামলায় গত ২০ অক্টোবর থেকে তিনি নওগাঁ জেলহাজতে রয়েছেন। আলমগীর কবির উপজেলার সুহাতী (বৈদ্যপুর) গ্রামের সাইফুদ্দিন মন্ডলের ছেলে এবং তিনি কালিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক। নারী কেলেংকারী শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করাসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দরিদ্র বিধবা নারী (৩০) জীবন জীবিকার জন্য শফিকুল ইসলাম সহ গ্রামের বিভিন্ন জনের বাড়িতে কাজ করেন। তবে দিন শেষে শফিকুল ইসলামের বাড়িতে রাত্রি যাপন করেন। বিভিন্ন সময় শিক্ষক আলমগীর কবির ওই বিধবা নারীকে কুপ্রস্তাব দিতেন। কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর শফিকুল ইসলাম ওই নারীকে বাড়িতে রেখে স্বপরিবারে তার মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। এ সুযোগে রাত ৮টার দিকে বাড়িতে ঢুকে শিক্ষক আলমগীর কবির বিধবাকে জোর পূর্বক ধর্ষন করেন। তার ডাক চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে শিক্ষক পালিয়ে যান।
পরে বাড়ির মালিককে বিষয়টি অবগত করা হয়। পরদিন ভুক্তভোগী বাড়ির মালিক শফিকুল ইসলামসহ পোরশা থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। পরে নওগাঁ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলাটি আমলে নিয়ে পোরশা থানার অফিসার ইনচার্জকে এফ.আই.আর হিসেবে রেকর্ড পূর্বক পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করা হয়। তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা প্রমানিত হওয়ায় আলমগীর কবিরকে আটক করে গত ২০ অক্টোবর আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

শিক্ষক আলমগীর কবিরের অত্যাচারে গ্রামের কিশোরী ও নারীদের দুশ্চিন্তায় ও আতংকের মধ্যে থাকতে হতো। গ্রামের মেয়েদের বিরক্ত করা নিয়ে গ্রাম্য শালিসে বেশ কয়েকবার জরিমানা ও শাস্তি প্রদান করা হয়। তিনি সরকার দলীয় বিভিন্ন পদপদবী ব্যবহার করে গ্রামের লোকদের ভয়ভীতি দেখাতেন। ভয়ে গ্রামের কোন লোক প্রতিবাদ করার সাহস পেতেন না। প্রভাবশালী নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে থেকে তিনি এসব অপকর্ম করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফলে অন্যায় করেও বার বার পার পেয়ে যান। ওই শিক্ষকের নারী কেলেংকারিসহ অপকর্মের জন্য তার বাবা-মা ও ভাইদের সঙ্গেও দুরুত্ব বেড়ে গেছে। তিনি একজন শিক্ষক হয়ে যে অপকর্ম করে থাকেন, তার কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা কি শিক্ষার পাওয়ার আশা করে। জেল থেকে ছাড়া পেলে আবারও তিনি ভয়ংকর হয়ে উঠবেন বলে মনে করছেন। তার অপকর্মের বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবী- তাকে অনতিবিলম্বে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরিচ্যুত করা হোক।

স্থানীয় ডা: শরিফুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, আগে থেকেই শিক্ষক আলমগীর কবিরের চরিত্র ভাল ছিলনা। গ্রামের মেয়ে ও বউয়ের খুবই বিরক্ত করত। মেয়েরা রাস্তাঘাটে একা যেতে ভয় করত তার কারণে। যারা মানুষ গড়ার কারিগরী তাদের চরিত্র যদি এমন হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা কি শিখবে। ইতোপূর্বেও গ্রাম্যে একাধিক বার বিচার সালিস হয়েছে। এসব কারনে বাবা-মা ও ভাইদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ভাল না।

স্থানীয় আরেক বাসীন্দা হাবিবুল বাসার বিটিসি নিউজকে বলেন, নিজেকে আওয়ামীলীগের নেতা দাবী করে স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখান। সব নেতারা তার পকেটে থাকে বলে জাহির করেন। চাকরি করে মাসে অনেক টাকা আয় করেন। এজন্য সবাইকে হেয় প্রতিপন্ন করেন। তার সমকক্ষ নাকী কেউ না। গ্রামে প্রায় ৮০টি বাড়ী আছে। সবাই তার অত্যাচারে অতিষ্ট। তিনি আরো বলেন, গত ১৪ বছর আগে গ্রামের এক মেয়েকে অপহরন করে রাজশাহীতে নিয়ে গিয়ে ৭ জন মিলে ধর্ষণ করে। ঘটনায় শিক্ষক আলমগীর কবিরকে ৩ মাস কারাভোগ করতে হয়। এরপর চাকরি বাঁচানো জন্য ওই মেয়েকে বিয়ে করতে বাধ্য হন তিনি। তার সংসারে এখন দুই ছেলে-মেয়ে।

প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক একরামুল হক শাহ বিটিসি নিউজকে বলেন, শুনেছি ওই শিক্ষক নারী কেলেংকারি সাথে জড়িত। তবে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম কানুন মেনেই তিনি শিক্ষকতা করেন। আমাদের কোন সমস্যা হয়না।

পোরশা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী মৃধা বিটিসি নিউজকে বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

পোরশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হয়। এরপর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আমাদের সহযোগীতা নিয়ে আসামী আলমগীর কবিরকে আটক করা হয়।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নওগাঁ প্রতিনিধি মো: আব্বাস আলী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.