পানির মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ওয়ার্কার্স পার্টির অভিনব প্রতিবাদ, প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি

প্রেস বিজ্ঞপ্তি: রাজশাহীতে ওয়াসা কর্তৃক পানির তিনগুণ মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে অভিনব প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি রাজশাহী মহানগর। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে তারা এ প্রতিবাদ করেন। পরে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সেখানে গেয় দেখা যায়, ওয়ার্কার্স পার্টির নারী সদস্যরা ওয়াসার পানিভর্তি মাটির কলসি হাতে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। কলসিতে গায়ে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রতিবাদী স্নোগান সম্বলিত সাদা কাগজ। সেখানে লেখা হয়েছে- ‘ওয়াসার পানি দূর্গন্ধযুক্ত, দাম বৃদ্ধি মানবো না,’ ‘ওয়াসার পানিতে মাথার চুল উঠে যায়, দাম বৃদ্ধি মানবো না,’ ‘ওয়াসার পানিতে ময়লা থাকে; খাওয়া যায় না, দাম বৃদ্ধি মানবো না।’
গত মাসের শুরুর দিকে পানির দাম আগের মূল্যের তিন গুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা)। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি থেকে নগরবাসীকে অতিরিক্ত তিন গুণ মূল্য পরিশোধ করার কথা।
প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়ার স্মারকলিপিতে বলা হয়, বর্তমান সময়ে সবক্ষেত্রেই পিছিয়ে থাকা একটি অঞ্চল রাজশাহী। এখানকার মানুষের আত্ম-সামাজিক অবস্থা খুব ভালো নয়।এমন পরিস্থিতিতে কোনরকম গণশুনানী ও মতামত গ্রহণের বাইরে গিয়ে রাজশাহীতে পানির দাম এক লাফে তিনগুণ বাড়িয়েছে ওয়াসা। এ নিয়ে বিবৃতি, মানববন্ধনসহ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করার পরও ওয়াসা বর্ধিত নতুন মূল্য কার্যকর করে চলেছে। প্রতিষ্ঠানটির নেওয়া এমন বিতর্কিত উদ্যোগে নগরীর জনমনে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। যা অচিরেই সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করছে।
স্মারকলিপিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে তিনদফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলে- রাজশাহী ওয়াসার পানির দাম তিনগুণ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শহরের ৩০টি ওয়ার্ডে গণশুনানী করে জনমতের ভিত্তিতে পানির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে এবং সরকারি প্রণোদনা নিয়ে ওয়াসার সেবার মান উন্নয়নের উদ্যোগ অতি দ্রুত গ্রহণ করতে হবে।
স্মারকলিপি দেওয়ার আগে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা-কর্মীরা। সমাবেশ থেকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে শীঘ্রয়ই রাজশাহী ওয়াসা ভবন ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়ে তারা বলেন, কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সবার আগে মানুষের স্বার্থের কথা চিন্তা করতে হবে। মনে রাখতে হবে- রাজশাহীতে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে; কিন্তু মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়নি। শহরকে সাজানো হয়েছে; তবে মানুষের কর্মসংস্থানের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিন্তা করা জরুরি। ওয়াসা তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে মানুষের গণসাক্ষর গ্রহণের মধ্যদিয়ে এবং তাদের সাথে নিয়ে দ্রুতই ওয়াসা ভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন, মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, জেলার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা, সম্পাদকমন্ডলির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল মতিন, মনির উদ্দীন পান্না, নাজমুল করিম অপু, মনিরুজ্জামান মনির, মহানগর সদস্য শাহীনুর বেগম, সাঈদ চৌধুরী, আব্দুল খালেক বকুল, মোশারোফ হোসেন, জেলা যুবমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য কামরুল হাসান সুমন প্রমুখ।
পানির মান নিয়ে আগে থেকেই নগরবাসীর অসন্তোষ ছিল। সেবার মান না বাড়িয়ে ওয়াসার পানির দাম হঠাৎ তিন গুণ বাড়ানো অযৌক্তিক বলছেন নগরবাসী। অনেকের অভিযোগ, ওয়াসার পানি সব সময় ঠিকমতো পাওয়া যায় না। আবার প্রায়ই পানের অযোগ্য পানি সরবরাহ করা হয়। এমন অবস্থায় পানির দাম বাড়ানোর ঘোষণায় তাঁরা ক্ষুব্ধ। ওয়াসার এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে গত কয়েক দিন ধরে গণসংযোগ লিফলেট বিতরণ ও সমাবেশ করেছে মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টি।
সংবাদ প্রেরক জগদীশ রবিদাস। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.