পাটকলের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনাই মন্ত্রণালয়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ

খুলনা ব্যুরো: পুরাতন মেশিনারীজগুলো ওভারহোলিং করে নতুন আঙ্গিকে পাটকলকে চালু করা, মৌসুমে পাট ক্রয়, মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, বদলী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ, অবসর নেয়া শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বকেয়া পরিশোধ এবং আন্তর্জাতিক বাজার তৈরিই রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বর্তমান সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় যে সক্রিয় থাকবে প্রথম কার্যদিবসেই তেমন আভাস মিলেছে। বিশেষ করে সরাসরি শ্রমিক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত থাকা খুলনার সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান আবারো শ্রম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় এ অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। প্রথম কর্মদিবসে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী পাটকে ব্র্যান্ডিং করার প্রতিশ্রুতি দেয়ায় দেশের পাটকলগুলো যে অতীত ঐতিহ্যে ফিরে যাচ্ছে সেটিও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দায়িত্ব নেয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে পাটমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, পাটকে ব্রান্ডিং করার পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে পাটের দাম কমানো হবে। পাটকলের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের সবচেয়ে বড় সংকটই হচ্ছে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না হওয়া। এ ক্ষেত্রে বিজেএমসির দুর্বল মার্কেটিংকেও দায়ী করেছেন কেউ কেউ। নতুন মন্ত্রী বিষয়টি অনুধাবন করে প্রথম দিনেই এ জায়গাটি নিয়ে কথা বলেছেন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকায় অবস্থানরত খুলনার বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের পরিচালক মো: মিজানুর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, দায়িত্ব নিয়েই গতকাল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান অর্থমন্ত্রী ও পাটমন্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। পাটকলের ব্যাপারে তাদের সাথে তিনি কথা বলেছেন। মেশিনারীজ পরিবর্তনসহ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কি কি পদক্ষেপ নেয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে পাটজাত পণ্য বিক্রির জন্য মার্কেটিং জোরদার করারও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের এমনটিও উল্লেখ করেছেন শ্রম পরিচালক।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী শ্রমিক নেতারাও। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় পাটকল খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিল। এ মিলটির শ্রমিক সংগঠন ক্রিসেন্ট জুট মিলস্ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন-সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, নতুন পাটমন্ত্রী যেহেতু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা পাশাপাশি তিনি একজন শিল্পপতিও। একইসাথে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন-বিজেএমসি’র চেয়ারম্যানও নতুন। সুতরাং পাটকলগুলো যে অতীত ঐতিহ্যে ফিরে যেতে পারে সেটি আশা করা যায়।

জাতীয় নির্বাচনের আগে খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের সকল বকেয়া পরিশোধ করা হলেও পাটক্রয়ের টাকা না দেয়ায় বর্তমানে উৎপাদন অনেকটা শূন্যের কোঠায় উল্লেখ করে সোহরাব হোসেন বলেন, এই মুহূর্তে পাটকলের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। উৎপাদন কম হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদিত পাটপণ্যও পড়ে থাকা আরও একটি চ্যালেঞ্জ। নতুন মন্ত্রী এসব বিষয় নিয়ে ভাববেন এমনটিই খুলনার শ্রমজীবী মানুষের প্রত্যাশা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

খালিশপুরের প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলের স্থায়ী শ্রমিক নূর ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, বর্তমানে মিলগুলোতে মজুরী বকেয়া না থাকলেও কাঁচা পাটের বেশ অভাব রয়েছে। আর পাট না থাকার ফলে উৎপাদনও নেই। মজুরী কমিশন দেয়ার ব্যাপারে গত সরকারের আমলে জাতীয় সংসদে পাশ হয়ে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর পর্যন্ত হলেও এখনও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৪ সাল থেকে যারা অবসর গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে এখনও অনেকেই বকেয়া পাননি। এতে ওইসব শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের পরিবারে চলছে হাহাকার। এ অবস্থায় নতুন পরিষদকে এসব বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন-বিজেএমসি’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শেখ রহমত উল্লাহ বিটিসি নিউজকে বলেন, বিজেএমসির নতুন চেয়ারম্যান শাহ মো: নাসিম মঙ্গলবার তার দপ্তরে গিয়েছেন। নতুন পাটমন্ত্রীও দায়িত্ব বুঝে নিয়ে গতকাল থেকে অফিস করা শুরু করেছেন। পাট ক্রয়ের জন্য সরকারের ঘোষিত ৩৭ কোটি টাকার মধ্যে এ পর্যন্ত ২৬ কোটি টাকা এসেছে। বাকী ১১ কোটি টাকা আজ/কালের মধ্যে আসতে পারে। তা’ দিয়ে পাট কেনা হলে হয়ত ১৫ দিনের মতো মিলগুলো ভালভাবে চলবে। এছাড়া নতুন সরকারের নতুন পরিষদও পাটকল নিয়ে নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। এর মধ্যদিয়ে পাটকলের ঐতিহ্য রক্ষা হবে বলে তিনি মনে করছেন।

খুলনাঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে বর্তমানে তিনশ’ পনের কোটি টাকার পাটজাত পণ্য অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব পণ্য বিক্রির জন্য আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি করাও বিজেএমসি এবং পাট মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পাটের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনা হবে বলেও তিনি আশা করছেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.