পলাশবাড়ীতে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ব‍্যাগের কারখানা গড়ে ১৫ লাখ টাকার মালিক ফরহাদ-নাজমা দম্পতি 

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: ব‍্যাগ আমাদের নিত‍্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রায় প্রতিটি কাজে ব‍্যাগ ব‍্যবহার করে থাকি। মানি ব‍্যাগ থেকে শুরু করে শপিং ব‍্যাগ, সকল কাজেই আমরা ব‍্যাগের ব‍্যবহার করে থাকি।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা এই বিভিন্ন রকমের ব‍্যাগ নিয়ে ব‍্যবসা করতে চায় কিন্তু কোথা থেকে কিভাবে কিনবে তা তারা জানে না।
সফলতা একদিনে আসেনা, এজন্য প্রয়োজন দৃঢ় মনোবল ও আত্মবিশ্বাস। এই মূলমন্ত্রে দারিদ্রকে জয় করেছেন গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী পৌরসভার বৈরিহরিণমাড়ী গ্রামের বাচ্চা মিয়ার ছেলে ফরহাদ-নাজমা দম্পতি। ব্যাগ তৈরীর কারখানা আজ তাদের এনে দিয়েছে সফলতা। নিজের ভাগ্য আর সমাজ পরিবর্তনের ইচ্ছা নিয়ে দিন-রাত নিজের কারাখানায় নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এ দম্পতি। চান অবহেলিত নারীদের প্রতিষ্ঠিত করতে।
ফরহাদ-নাজমা দম্পতি যখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সংসারে চলছে নানান টান-পোড়েন। এ সময় স্বামী-স্ত্রী মিলে ২০০৮ সালে সমিতি থেকে ১০ হাজার টাকা  ঋণ নিয়ে শুরু করেন ব‍্যাগ তৈরির কারখানা। বর্তমানে তার কারখানার মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ এবং গরুর খামারে আরো ৫ লাখ টাকা।
এর পাশাপাশি বাড়ীতেই গড়ে তুলেছেন গরুর খামার। তার খামারে রয়েছে দুটি বিদেশী দুধেল গাভী ও ৪টি বাছুর। এর মূল্য প্রায় ৫ লাখ টাকা। এর থেকে প্রতিদিন ৭ লিটার করে দুধ পাওয়া যায়। দ্বিতলা বাড়ী তৈরি করেও এখন পুঁজি দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ টাকা।
সেলাই মেশিন হাতে নিয়ে কেবল ফরহাদ-নাজমা দম্পতি স্বাবলম্বী হননি, আত্মনির্ভরশীল করেছেন গ্রামের ৪০ জন নারী-পুরুষকে। তাদের গড়ে তোলা এই কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে অবহেলিত প্রায় ৩০ জন নারীর। সমাজ পরিবর্তনে ফরহাদ-নাজমা দম্পতির মতো দেশের সকল নারীরা এগিয়ে এলে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর হবে বলে মনে করেন এই উদ‍্যোক্তা।
সরেজমিনে ফরহাদ-নাজমা দম্পতির ব‍্যাগ কারখানায় গিয়ে দেখাযায়, ৫ হাজার টাকা মাসিক বেতনে কাজ করছেন পৌরসভার নুনিয়াগাড়ী গ্রামের ভ‍্যান চালক হবিবারের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম, বৈরিহরিণমাড়ী গ্রামের ভ‍্যানচালক জেনারুলের স্ত্রী মিনা বেগম ও রেজা মিয়ার স্ত্রী রিক্তা বেগম।
এছাড়াও কারখানা থেকে ব‍্যাগের সরঞ্জাম বাড়ীতে নিয়ে গিয়ে ব‍্যাগ তৈরি করেন, পৌরসভার বৈরিহরিণমাড়ী গ্রামের শ্রীপুরের ভ‍্যান চালক হাবুর স্ত্রী চামেলী, এনামুলের স্ত্রী ঝরণা বেগমসহ আরো ৩০ জন।
চামেলী এবং ঝরণা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, আমরা সংসারের কাজ সেরে ১৫,২০,২৫, ৩০ ডজন ব‍্যাগ প্রতিদিন তৈরি করি। প্রতি ডজন ব‍্যাগ তৈরি বাবদ আমাদের দেওয়া হয় ১৫ টাকা। এতে করে আমাদের প্রতিদিন আড়াইশ থেকে তিনশত টাকা আয় হয়। আমরা এখন স্বাবলম্বী। আমাদের স্বামীরা এখন আমাদের সম্মান করে কথা বলে।
এদিকে পৌরসভার বৈরিহরিণমাড়ী গ্রামের ভ্রাম‍্যমান ব‍্যাগ বিক্রেতা জেনারুল ইসলামের  ছেলে মেহেদী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, কারখানা থেকে পাইকারি দামে ব‍্যাগ কিনে জেলার এবং জেলার বাহিরের হাট-বাজারের দোকান-পাটে বিক্রি করি। এতে করে প্রতিদিন আমার লাভ হয় ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা। এরকম আমরা ৫ জন ভ্রাম‍্যমান ব‍্যাগ বিক্রেতা আছি।
ফরহাদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ২০০৮ সালে মাত্র ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আমার ব‍্যাগ কারখানা শুরু করি। বতর্মানে আমার কারখানায় ৪০ জন নারী -পুরুষ কাজ করছে। এ কারখানার পুঁজি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। এছাড়া বাড়ীতে গড়ে তুলেছি বিদেশী গরুর খামার। যার মূল্য বতর্মানে ৫ লাখ টাকা। এসবই হয়েছে মাত্র ১০  হাজার টাকা পুঁজি খাটিয়ে। আমি সরকারি সাহায্য সহযোগিতা ব‍্যাংক ঋণ পেলে আমার কারখানাটি আরো বড় করতে পারতাম। আমার কারখানার ব‍্যাগ কুড়িগ্রাম,গোবিন্দগঞ্জ, পাঁচবিবি,সাদুল্লাপুর,ঘোড়াঘাটসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকেরেরা এসে নিয়ে যায়।
এব‍্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, আমি ফরহাদ-নাজমা দম্পতিকে ধন‍‍্যবাদ জানাই এরকম একটি ব‍্যাগের  কারখানা গড়ে তুলে গ্রামের নারীদের স্বাবলম্বী করার জন‍্য। ইচ্ছা থাকলে মানুষ অনেক কিছু করতে পারে, যা ফরহাদ-নাজমা করে দেখিয়েছে। আমি তাদের আরো সফলতা কামনা করছি। পাশাপাশি  আমাদের উপজেলার তরফ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মোঃ শাহরিয়ার কবির আকন্দ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.