পলাশবাড়ীতে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ 

গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ  গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় বিশ্বব্যাংকের অর্থ্যায়নে বাস্তবায়নাধীন এলজিএসপি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের মধ্যে দিয়ে চলছে বাস্তবায়ন কাযক্রম। অভিযোগ উঠেছে বিগত বছরগুলোর মত ২০১৭-২০১৮  অর্থ বছরেও এ উপজেলায় এলজিএসপি প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থের কাজ নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৃর্ণমূল পযায়ে ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে শক্তিশালী করতে তৃতীয় লোকাল গর্ভন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট ( এলজিএসপি-৩) নামে এ প্রকল্পটি কাজ করলে সুষ্ঠু মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় কিছু ইউপি চেয়ারম্যানগণ কাজে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে এ প্রকল্পের সিংহভাহ বরাদ্দকৃত অর্থ পকেটস্থ করছেন।  উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে প্রকল্প এলাকা ঘুরে জানা যায়, এলজিএসপি কাজে বরাদ্দকৃত অর্থের ২০ থেকে ৩০ ভাগ এর বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়নি।
এলজিএসপি নামে এ প্রকল্পের মূল কথাই ছিল উন্নয়ন কর্মকান্ডে স্থানীয় লোকজনকে সরাসরি সম্পৃক্ত করা। তাদের পরামর্শ ও চাহিদা অনুযায়ী প্রকল্প গ্রহণ করে সচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা। কিন্তু কিছু ইউপি চেয়ারম্যান তা না করে নিজের ইচ্ছামতো প্রকল্প তৈরি করে বরাদ্দে ২০ থেকে ৩০ ভাগ কাজ করে বাদবাকি সবই কাগজপত্রে ঠিকঠাক দেখিয়ে বাস্তবায়ন দেখানো হলেও মূলত বাস্তবে মাঠ পযায়ে চিত্র ভিন্ন।
সূত্র জানায় হাতে গোনা কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কোথাও এলাকার লোকজনকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। ফলে এলজিএসপির মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদকে আরও গনমূখি করা ও এর সক্ষমতা বাড়ানোর যে উদ্দেশ্য সরকারের ছিল তা ভেস্তে যেতে বসেছে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের জন্য।
জানা গেছে, সারাদেশে ২০১১ সালে ৫ বছর মেয়াদী এলজিএসপি -১ এর কাযক্রম শেষ হলে পরবর্তী সময়ে আরও ৩ বছরের জন্য এলজিএসপি -২ এর নামে কাযক্রম বাস্তবায়িত হয়। ২০১৪ সালে এলজিএসপি -২ এর মেয়াদ শেষ হলে আবারও ৫ বছরের জন্য এলজিএসপি -৩ এর কাযক্রম শুরু হয়।
দেশের ৫ হাজার ৪’ শ ৪৫ টি ইউনিয়ন পরিষদের মতো গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নে ২০১৭ – ২০১৮ ইং অর্থ বছরের জন্য ২  কিস্তিতে প্রায় ২ কোটি ২৯ লাখ ১১ হাজার ৭’ শ ৫০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।  বরাদ্দ পাওয়ার পর ইউপি চেয়ারম্যানগণ স্ব- স্ব ইউনিয়নে প্রকল্প গ্রহণ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসে জমা করেন। দাখিলকৃত ইউনিয়ন পরিষদের এ সব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাপতিত্বে রেজুলেশন পূর্বক অনুমোদন হয়।
এই অনুমোদনকৃত ৯ টি ইউনিয়নের  প্রকল্পের সূত্র ধরে উপজেলার ৬ নং বেতকাপা ৭ নং পবনাপুর, ৮ নং মনোহরপুরসহ আরোও বেশ কয়টি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে প্রকল্পের বিপরীতে যে পরিমান অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তার ২০ থেকে ৩০ ভাগের বেশি ব্যয় করা হয়নি। শুধু কাগজপত্র ঠিকঠাক করে যে সব প্রকল্পে ইউকালভার্ট, ইউ- ড্রেন নিমার্ণ, ব্রীজ নির্মাণ, প্যালাসাইডিং করা হয়েছে তা নিম্ন মানের ইটের খোয়া,  রড ও সিমেন্টের পরিমাণ কম দেয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে চেয়ার, টেবিল, ব্রেঞ্চ সরবরাহ করা হয়েছে তা অত্যন্ত নিম্নমানের কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। অনেক প্রকল্প অপ্রয়োজনীয় ও পুরাতনকে সংস্কার করে নতুনভাবে বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে, যেমন বেতকাপা ইউনিয়নের মোস্তফাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় সামনের গেট ও প্রচীর নির্মাণের কথা থাকলেও সেখানে শুধু প্রচীর প্লাস্টার করে বাকী টাকা পকেটস্থ করা হয়েছে। অপরদিকে একই ইউনিয়নের ১ লাখ ৮০ টাকা ব্যয়ে ৯ নং ওয়ার্ডে শাহজাহানের বাড়ী হইতে ফরিদের বাড়ী পযন্ত রাস্তাটি ইটের সলিংকরণ করা হয়েছে অত্যন্ত নিম্নমানের, যা সাইড ভেঙ্গে যাচ্ছে। এখানকার সাইড ড্রেনটি গত অর্থ বছরের।
৮ নং মনোহরপুর ইউনিয়নে মনোহরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কক্ষের মেঝে পাকা করণ ও বাউন্ডারি প্রচীর নাম মাত্র নির্মাণ করা হলেও ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকার ৩ ভাগের এক ভাগও কাজ করা হয়নি। অথচ উক্ত ইউনিয়নের মানুষদের এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে উক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চুটকু নিজের ইচ্ছামত একই বিদ্যালয়ে ৭ নং প্যাকেজে ব্রেঞ্জ সরবরাহ ৪১ হাজার টাকার ও একই প্যাকেজের ১০ নাম্বারে মনোহরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে  ম্যাল্টিমিডিয়া প্রোজেক্টর সরবরাহ ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়।
এই বিদ্যালয়ে ৩ টি প্যাকেজের মোট বরাদ্দ ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬’ শ ৬৬ টাকা বরাদ্দ দেখানো হয়েছে।
এদিকে ৬ নং  বেতকাপা ইউনিয়নের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে রওশনবাগ দ্বি- মুখি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩ লাখ টাকার বায়োমেট্রিক যন্ত্র স্থাপন দেখানো হলেও এখানকার সচেতন নাগরিকদের প্রশ্ন আসলেই কি এই মেশিনের দাম ৩ লাখ টাকা?
এদিকে উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নে ইটের সলিং করণ কেউ ২ লাখ টাকায় ২০০ গজ করেছেন, আবার কোন ইউনিয়নে ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকায়  ২০০ গজ ইটের সলিং  করেছেন। কেউ ১ লাখ টাকায় ইউড্রেন করেছেন আবার কেউ ২ লাখ টাকাতেও এ রকম ইউড্রেন করতে পারেন নাই।
আবার উপজেলা ত্রাণ ও দুযোগ অধিদপ্তর থেকে এসব ইউড্রেন ৬০ হাজার টাকায় নির্মাণ করারও নজির আছে।
এদিকে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর এডিবি থেকে বিভিন্ন স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রাচীর ১ লাখ টাকায়, গেট নির্মাণ ১ লাখ টাকায় করার নজির আছে।
এখানে প্রশ্ন, উপজেলা ত্রাণ দপ্তর ও উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর এত কম টাকায় এসব কাজ করতে পারলে এলজিএসপিতে সেই গেট, প্রাচীর, প্যালাসাইডিং, ইউড্রেন করতে তিনগুন টাকা লাগে কেন?  এটা সচেতন এলাকাবাসীর প্রশ্ন?
এদিকে ৭ নং পবনাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহআলম ছোট বাবা নিজ ইচ্ছামত বন্ধ নাসরিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার প্রকল্প দিয়ে নামকাস্তে কাজ করে বাকী টাকা পকেটস্থ  করেছেন। এখানকার এলাকাবাসীর প্রশ্ন, তাহলে অডিট টিম কি দেখে বিল দেয় ? তিনি জানেন না স্কুলটির রেজিস্ট্রেশন নেই।
একই ইউনিয়নের ৪ নং প্যাকেজে পবনাপুর ইউনিয়নের মালিয়ানদহ টেংরা বাদিয়াখালী পাকা রাস্তার মাথা হতে রাজা মেম্বারের বাড়ী পযন্ত এইচবিবিকরন ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই রাস্তাটি করার পরপরই ইট খসে খসে ভেঙ্গে পড়ে যায়। যা এখন চেয়ারম্যান দিঘির কচুরি দিয়ে ঢেকে রেখেছেন।
চরের হাট এফএম দ্বি- উচ্চ বিদ্যালয়ে উচু নিচু ব্রেঞ্চ সরবরাহ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার এখানেও  একই অবস্থা। এখানকার বরাদ্দকৃত অর্থেরও নয় ছয়।
এব্যাপারে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মেজবাউল হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, আসলে মূলত এসব কাজ দেখেন গাইবান্ধা থেকে। আমিও কাজগুলো ঠিকমত হয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখব। যে সব প্রকল্পে কাজ করা হয়নি তা সরেজমিন দেখে বাস্তবায়ন করে নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মোঃ শাহরিয়ার কবির আকন্দ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.