পথে বসেছে ৩০-৩৫টি পরিবার: চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাদক সম্রাট শাহিদ রানা টিপু’র চলছে রমরমা মাদক ব্যবসা, সক্রিয় সহযোগিরা

বিশেষ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাদক সম্রাট শাহিদ রানা টিপু সুলতানের নামে বেশ কিছু মামলা থাকলেও চলছে রমরমা ব্যবসা। সক্রিয় সহযোগিরাও। মামলা এবং বিপুল পরিমান হেরোইন ও ইয়াবার চালানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও থামছেনা মাদক ব্যবসা। একটার পর একটা চালান নিয়ে ধরা পড়েছে-তবে পালিয়ে গেছেন তিনি, আবার তার লোক মাদক নিয়ে ধরা পড়ছে পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে।
দীর্ঘদিন থেকেই মাদকের ব্যবসা করে গড়েছেন পাহাড় পরিমান সম্পদও। কালো টাকার প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন। তবে মাদক নিয়ে ধরা পড়ায় নিজের নামে একাধিক মামলা এবং তার লোকজন হেরোইন ও ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়লেও তাঁর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা হচ্ছেনা। বিষয়টি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের আবু বক্কর ঝাটু’র ছেলে শাহিদ রানা টিপু (সুলতান) এর নামে ২০১৭ সালে সারা দেশের মাদক ব্যবসায়ীদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার তালিকায় শীর্ষে (১ নম্বর) শাহিদ রানা টিপু সুলতানের নাম পাওয়া যায়। তারপরও তাঁর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা হয়নি। বন্ধও হয়নি এই মাদক স¤্রাটের মাদক ব্যবসা। তাঁর অবৈধ মাদক মালামাল বহন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে মামলায় ফেঁসে গিয়ে পথে বসেছেন এলাকার ৩০ থেকে ৩৫টি পরিবার।
কালো টাকার মালিক হওয়ায় এবং চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত থাকায় তাঁর মাদক ব্যবসা এবং প্রতিপক্ষ বা এলাকার নিরীহ মানুষের উপর অমানুষিক অত্যাচার চালালেও ভয়ে মুখ খুলতে পারেনা ভূক্তভোগীরা। একটি হত্যা মামলারও প্রধান আসামী(এই মামলায় জামিনে আছেন) শাহিদ রানা টিপু সুলতান।
তাঁর মাদক ব্যবসার অন্যতম সহযোগিরা হচ্ছেন, সদর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের মৃত মতিউর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান হবি (৪৫), একই ইউনিয়নের হুররোপাড়ার হোসেন আলীর ছেলে তাসলিম উদ্দিন (৪৩) ও মোঃ গাফ্ফার মন্ডলের ছেলে রবু (৪০), সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের হাবিবুর রহমানের ছেলে মোর্তুজা (দিতু) (৪২), একই ইউনিয়নের চাকপাড়ার মৃত হারুন এর ছেলে (সাবেক মেম্বার) মোঃ নাদিম (৪০) (নৌকার মাঝি), একই ইউনিয়নের গোয়ালডুবি গ্রামের মোজাম্মেলের ছেলে নাজিবুল (৩৮) (নৌকার মাঝি)।
এছাড়াও রয়েছে অনেক নামে বেনামে সহযোগি, তাদের তাৎক্ষনিকভাবে প্রয়োজনমত কাজে ব্যবহার করে শাহিদ রানা টিপু। নতুন নতুন কৌশল করে এলাকার দরিদ্র মানুষদের ভয় বা টাকার লোভ দেখিয়ে মাদক বহনের কাজে ব্যবহার করেন তিনি। এদিকে, কেউ তাঁর মাদক বহন করার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে এবং বহনকারীর নামে মামলা হলে, তাঁর কোন খোঁজ নেয়া হয় না। এদিকে, এসব মাদক ব্যবসা ও এলাকায় ত্রাসের রাজস্ব বন্ধ করার জোর দাবী ভূক্তভোগী ও এলাকাবাসীর।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের আবু বক্কর ঝাটু’র ছেলে শাহিদ রানা টিপু (সুলতান) অনেক আগে থেকেই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। প্রথমে কম পরিমানে মাদক নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও দিনে দিনে তাঁর মাদক সাম্যাজ্য বৃদ্ধি হতে থাকে। মাদক নিয়ে ধরা পড়লেও অজ্ঞাত কারণে বেশ কয়েকবারই মামলায় তার নাম দেয়া হয়নি বা জড়ানো হয়নি। এভাবেই চালাতে থাকে মাদক ব্যবসা।
পেশী শক্তি ও অর্থের প্রভাব খাটিয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থীকে হারিয়ে নির্বাচিত হন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহিদ রানা টিপু। মাদক ব্যবসার জন্য আরও সুবিধা হয়ে যায়। দেদারসে চালাতে থাকেন মাদক ব্যবসা। ধরাও পড়েন বেশ কয়েকবার। মামলাও হয় নিজের নামে (পলাতক হিসেবে)। ২০১৫ সালে ৫ জুলাই ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ২০০ পিস ইয়াবাসহ র‌্যাবের হাতে আটক হয় তার গাড়িচালক চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার কলোনীপাড়ার একরামুল হকের ছেলে মোঃ ইশা খান।
এই মামলায় চরবাগডাঙ্গার টিপু সুলতান, পৌর এলাকার নামোশংকরবাটীর আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে আতাউর রহমান ও কক্সবাজারের দক্ষিন রাখাইনপাড়ার ঊছা সিং রাখাইন (সাবেক মেম্বার) এর ছেলে মং সে প্র রাখাইন অরফে হৈরি কে পলাতক আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে এই মামলায় আদালত হাতেনাতে মাদক নিয়ে আটক হওয়া আসামী ইশা খানকে ১৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন। বাকিরা খালাস পায়। বিষয়টি মামলার এজাহার সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এছাড়া, ২০১৬ সালে বিজিবির হাতে ১০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার হয়। এঘটনায় তার মাদক বহনকারী সহযোগি রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানার আষাড়িয়াদহ নতুন গ্রামের আবুল কালাম অরফে ঝড়ুর ছেলে মোঃ কালু মিয়া, একই এলাকার মৃত আনিস উদ্দিনের ছেলে আনারুল ইসলাম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের টিপু সুলতান কে পলাতক আসামী হিসেবে মামলা দায়ের করে (ডিএমসি বিওপি) বিজিবি’র হাবিলদার মোঃ জাফর আলী। গোদাগাড়ী মডেল থানার মামলা নম্বর-৬, তারিখ-০৫/০১/২০১৬।
অন্যদিকে, ২০১৪ সালে সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ তারিখ ৩০০ পিস ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আটক হয় তার মাদক বহনকারী সহযোগি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার কোদালকাটি গ্রামের মাস্টারপাড়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে মোঃ রেজাউল করিম। ইয়াবাসহ আটক মোঃ রেজাউল করিম কে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এই মামলায় আটক ৩০০ পিস ইয়াবার প্রকৃত মালিক চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের টিপু সুলতান অরফে ল্যাংড়া টিপু এবং টিপুর এক সহযোগি বলে জানার পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। বিষয়টি মামলার এজাহার সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গোদাগাড়ী মডেল থানার মামলা নম্বর-২২, তারিখ-১৭-০৯-২০১৪।
এদিকে, ২০১৬ সালের ১১ই জুন গোদাগাড়ী থানার কসাইপাড়া গ্রামের (রাজশাহী-চাঁপাই মহাসড়কে) ৮০০ পিস ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আটক হয় তার মাদক বহনকারী গোদাগাড়ী আচুয়া কসাইপাড়ার মৃত আব্দুল লতিফ এর ছেলে জিয়ারুল অরফে জিয়া আটক হয়। আটক জিয়ার দেয়ার দেয়া তথ্যে এই বিপুল পরিমান ইয়াবার প্রকৃত মালিক চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের টিপু সুলতান অরফে ল্যাংড়া টিপু বলে মামলার এজাহার সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে, ২০২৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী ঢাকার বিমান বন্দর জোনাল টিম, গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগ (ডিএমপি) ঢাকা এর অভিযানে ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা মূল্যের ২ কেজি ১০০ গ্রামে হেরোইনসহ তাঁর মাদক বহনকারী গোদাগাড়ী থানার বালিয়াঘাটা গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসোইন এর ছেলে আল আমিন (৩০), চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের তেররশিয়া গ্রামের নোমান আলীর ছেলে জুলমত (৪০) কে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। এছাড়া এই মামলায় একই এলাকার কালামকে পলাতক আসামী করা হয়। তবে আটক মালামাল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের টিপু সুলতান এর হলেও অজ্ঞাত কারণে মামলায় তাকে জড়ানো হয়নি বলে একটি সুত্র জানায়। ঢাকার দারুস সালাম থানার মামলা নম্বর-১৮, তারিখ-১১/০২/২০২৩।
এছাড়া, ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিমান বন্দর থানা পুলিশের হাতে ৮৯০ গ্রাম হেরোইনসহ আটক হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গুনিপাড়ার তাসিকুল ইসলামের ছেলে এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী মোঃ আব্দুল বারী (২০)। আটক আব্দুল বারী কে ৬ ফেব্রুয়ারী আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। এঘটনায় আটক হওয়া ৮৯০ গ্রাম হেরোইন এর প্রকৃত মালিক চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের শাহিদ রানা টিপু সুলতান বলে নিশ্চিত করে বারির পরিবার।
তবে এই বিপুল পরিমান হেরোইন নিয়ে বারী ধরা পড়লেও কোন খোঁজ নেয়নি প্রকৃত মালিক চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাদক ব্যবসায়ী টিপু সুলতান বলে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন তার পরিবার।
এব্যাপারে বারীর মায়ের সাথে কথা হয় বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদকের। আব্দুল বারীর মা জানান, আমার লেখাপড়া করা ছেলেকে টাকার লোভ দেখিয়ে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান মাদক নিয়ে পাঠিয়ে দিয়ে আমার ছেলের জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। এসব ঘটনার আমরা কিছুই জানতাম না। বারীর বাবা চরম অসুস্থ, উনাকে নিয়েই আমরা পরিবারের সবাই অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছি। হঠাৎই শুনি বারি হেরোইন নিয়ে ধরা পড়েছে। বারীর সাথে কথা বলে জানতে পারি, আটক ৮৯০ গ্রাম হেরোইন এর প্রকৃত মালিক চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের শাহিদ রানা টিপু চেয়ারম্যান। কিন্তু চেয়ারম্যানের মাদক নিয়ে ধরা পড়লেও এখন পর্যন্ত কোন খোঁজই নেই নি চেয়ারমান বা তাঁর লোকজন।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও জানান, যে মাদক ব্যবসায়ী টিপু চেয়ারম্যান আমার ছেলের জীবন মাদক দিয়ে শেষ করেছে, তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে এলাকার মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করার ব্যবস্থা নেবেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তিনি আর বলেন, আমরা দরীদ্র মানুষ। কোথায় পাবো টাকা, কোথায় পাবো লোকজন। আমার ছেলেকে মুক্ত করার জন্য? মাদক ব্যবসা করে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু ও তার লোকজন টাকা লুটছেন। আর অন্যদিকে, আমার ছেলে ও অন্যান্যদের টাকার লোভ দিয়ে বা বাধ্য করে মাদক বহন করিয়ে ফাঁসিয়ে দিচ্ছেন। মাদক পাঠিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা কামাচ্ছেন, আর যখন তার মাল নিয়ে ধরা পড়ছে, তখন আর খবর পর্যন্ত রাখেন না। এভাবে অনেক পরিবারকে ফাঁসিয়ে পথে বসিয়েছেন টিপু চেয়ারম্যান ও তার লোকজন। তবে এসব মামলায় শেষ পর্যন্ত কি হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার একজন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, মাদক সম্রাট চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহিদ রানা টিপু দীর্ঘদিন থেকেই মাদক ব্যবসা করে দেশের যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বেশ কয়েকবার ধরাও পড়েছে, মাদক ফেলে পালিয়েও গেছেন অসংখ্যবার। কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন তিনি। তার লোকজন বিপুল পরিমান মাদক হেরোইন ও ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়ছে। তারপরও কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না তার বিরুদ্ধে। তার অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ট। কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পর্যন্ত পারছে না। মাদক সম্রাট টিপুর অবৈধ মালামাল নিয়ে ধরা পড়ার পর কোন খোঁজ না নেয়ায় এলাকার প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি পরিবার পথে বসেছে এবং মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এদিকে, তাঁর মাদক সিন্ডিকেটের লোকজন মাদক বহনের জন্য এলাকার যুবক ও দরিদ্র মানুষদের কাউকে টাকার লোভ দিয়ে, কাউকে আবার বাধ্য করে বলেও এলাকার একাধিক সুত্র জানায়।
এই মাদক সম্রাটের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জোরালো ভূমিকা নেয়া প্রয়োজন। এলাকার, দেশের এবং যুব সমাজ কে রক্ষার স্বার্থে মাদক সম্রাট শাহিদ রানা টিপু ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এদিকে, সীমান্ত এলাকার ভারতের রামনগর, তারানগর, খান্দুয়া, কাটাখালি, কৃষ্টসাইল, মহালদারপাড়া, কুতুবপুর, বাহুড়া, এসব রুট দিয়ে বাংলাদেশে চোরাচালান সামগ্রী প্রবেশ করে।
তবে এসব জানাজানি হওয়ায় মাদক চোরাচালানের রুট পরিবর্তন করে গোদাগাড়ী রুট বাদ দিয়ে চরবাগডাঙ্গা, বাখোরআলী, ফরিদপুর, হাকিমপুর, কোদালকাটি চর, বকচরসহ বিভিন্ন রুট দিয়ে চোরাচালান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
তারপরই নতুন কৌশল গ্রহণ করেন টিপু চেয়ারম্যান। নিজে মাদক সামগ্রী বহন না করে এলাকার যুবক ও দরিদ্র শ্রেনীর মানুষদের দিয়ে মাদক বহন করাতে থাকেন। টিপু চেয়ারম্যানের লোকজন চোরাইপথে ভারতে গিয়ে নৌকায় বিভিন্ন রুট দিয়ে মালামাল চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চাকপাড়ার নৌকার মাঝি মোঃ নাদিম ও গোয়ালডুবি গ্রামের নৌকার মাঝি নাজিবুলসহ বেশ কিছু নৌকায় বহন করে পাচার করা হচ্ছে।
এদিকে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের মোঃ আইয়ুব আলী (৫৭) হত্যা মামলার ৬৩ জন আসামীর মধ্যে প্রধান আসামী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহিদ রানা টিপু (সুলতান)। এই মামলায় বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন বলে জানা গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার মামলা নম্বর-২১, তারিখ-১০/০৩/২০১৮।
অন্যদিকে, প্রায় বছর খানেক আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহিদ রানা টিপু’র চাচাতো চাচা আলমগীর হোসেন প্রায় ২৯ হাজার ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় ধরা পড়েন। বর্তমানে তিনি জেলখানায় আছেন। তাঁরই আরেক সহযোগি ২০১২ সালে চরবাগডাঙ্গা ইউপি’র গোঠাপাড়ার পিন্টু ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়ে এবং মামলা চলমান আছে।
এছাড়া, শাহিদ রানা টিপু’র ২০০ গ্রাম হেরোইন বহন করার সময় ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর গিধনীপাড়ার মৃত আজিজুলের ছেলে মোঃ সেলিম (২৭) পুলিশের হাতে আটক হয়। বর্তমানে সেলিম জেলখানায় রয়েছে।
এব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহিদ রানা টিপুর সাথে বার বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে, ফোনে রিং হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এব্যাপারে চেয়ারম্যান শাহিদ রানা টিপুর মাদক সিন্ডিকেটের সহযোগি মোঃ মর্তুজা হোসেন (দিতু)’র সাথে কথা হলে তিনি জানান, অনেক বছর আগে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহিদ রানা টিপু এসবের সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু এখন মাদক ব্যবসার সাথে তাঁর কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমি বেশিরভাগ সময়ই তাঁর সাথে থাকি। কিন্তু বর্তমানে মাদক ব্যবসা ব্যাপারে কোন যোগাযোগ দেখিনি। চেয়ারম্যান পরিষদের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।
বর্তমান সময়ে বা ২০১৪ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত মাদক বহন করে ধরা পড়া এবং ধরা পড়া লোকজনের কাছ থেকে চেয়ারম্যানের মালামালের তথ্য পাওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, আমার এসব জানা নেই। আমার জানামতে তিনি এখন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকেন না। গরুর বীটে গরুর ব্যবসার কথা বলতে পারেন, কিন্তু অন্য কিছু ব্যবসার সাথে আমি কোনদিন জড়িত ছিলাম না। আরেক সহযোগি তাসলিম উদ্দিন এর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অপর সহযোগি নৌকার মাঝি নাজিবুল বলেন, চেয়ারম্যান শাহিদ রানা টিপু কে চিনি। তবে তাঁর অবৈধ মাদক পারাপার করিনা। এসব আমি কোনদিনই করিনি। আমার ছোট ডিঙ্গি নৌকায় স্বাভাবিক মানুষ ও মালামাল পারপার করি। তবে সীমান্তের ওপারের কোন মালামাল পার করিনা। এসব কথা সঠিক নয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.