পথে বসতে বসেছে রাজশাহীর ডেকোরেটর ব্যবসায়ীরা !

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বব্যাপি চলমান করোনা ভাইরাসের কারনে স্থবির হয়ে পড়েছে সকল প্রকার কার্যক্রম। অন্যান্য দেশের ন্যায় এই ভাইরাস বাংলাদেশের ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারী হিসেবে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন হাজারের উপরে মানুষ এই ভাইরাসের আক্রান্ত হচ্ছে। মৃত্যুর মিছিলও কম নয়। দেশে প্রায় গড়ে প্রতিদিন ৩৫ জনের উপরে মানুষ মারা যাচ্ছে।

এই অবস্থা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ সরকার এক সময় নিত্য প্রয়োজীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারী-বেসরকারী অফিস সমূহ বন্ধ করে দেন। সেইসাথে সকল প্রকার গণজমায়েত ও অনুষ্ঠান করা নিষিদ্ধ করেন। বেশ কিছুদিন এগুলো বন্ধ থাকার পর প্রয়োজনের তাগিদে সরকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারী বেসরকারী অফিস, যানবাহনসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান শর্তসাপেক্ষে খুলে দেন। কিন্তু গনজমায়েত ও সকল প্রকার অনুষ্ঠান করা এখনো বন্ধ রয়েছে।

ফলে দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় রাজশাহীর ডেকোরেটর ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। করোনার কারনে দীর্ঘ ৪মাস ডেকোরটের ব্যবসা বন্ধ থাকায় তারা পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

এই বিষয়ে আজ বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী ডেকোরেটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম এর নিকট তাদরে অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজশাহী মহানগরীতে প্রায় ১৫০টি ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারা এই ব্যবসার উপরেই নির্ভরশীল। তারা অন্য ব্যবসা জানেন না। বিগত ৪ মাস হলো তারা একেবারেই বসে আছেন। এ অবস্থায় এই চারমাসের তাদের প্রায় ছয় কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বিগত ঈদের তারা কোন কাজ করতে পারেন নি। এছাড়াও এই মৌসুমে বিয়েসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান ব্যপকভাবে হয়ে থাকে। জনগণের প্রয়োজন মাফিক ডেকোরেটর সামগ্রী সরবরাহ করতে হিমশিম খান তারা। অথচ এই চার মাসে তাদের একটি ডেকোরেটর সামগ্রী বাহিরে যায়নি। অথচ দোকান ও গোডাউন ভাড়া এবং বিদ্যুৎ বিল ও কর্মচারীর বেতনসহ অন্যান্য ভাতাতি প্রতিমাসের তাদের পরিশোধ করতে হচ্ছে।

এছাড়াও গত বছরের ঈদে নগরীর ঈদগাহ সমুহ ডেকোরেশননের একটি বিশাল টাকা তারা এখনো পাননি। এতে করে বর্তমানে তারা আরো বিপদের মধ্যে রয়েছে বলে তিনি।

মাজহারুল বলেন, ডেকোরেটর ব্যবসা ছাড়া তারা আর কোন ব্যবসা জানেন না। বর্তমানে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে আর কয়েক মাস ব্যবসা না করতে পারলে পথে বসা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। এখনই তাদের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। তাদের অবস্থার কথা কাউকে বলতেও পারছেন না।

আগামীতে পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তায় নামা ছাড়া তাদের কোন পথ খোলা থাকবেনা বলে জানান তিনি। তিনি সমিতির পক্ষ থেকে দ্রুত তাদের ব্যবসা চালুর করার লক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিয়েসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান করার অনুমিত প্রদানের জন্য রাজশাহী সিটি মেয়র মেয়র ও কর্তৃপক্ষসহ সরকারের নিকট দাবী জানান।

এদিকে ডোকোরেটর মালিক সমিতির প্রধান উপদেষ্ঠা গোলাম সারওয়ার স্বপন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমানের এই ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তাদের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, আর্থিক প্রণোদনা ছাড়া তারা কেউ ঘুড়ে দাঁড়াতে পারবেনা।

তিনি বলেন, এই ব্যবসা থেকে সরকার বছরের হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পান। এই ব্যবসা বন্ধ হলে একদিকে যেমন ব্যবসার সাথে জড়িত মানুষগুলো পরিবার নিয়ে পথে বসতে, তেমনি সরকার হারাবে বিশাল আকারের রাজস্ব। সবদিক বিবেচনা করে সহজ শর্তে, সহজ কিস্তিতে এবং নামমাত্র সুদে ব্যাংক থেকে ঋন প্রদান করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি ।
এছাড়াও অত্র সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি শওকত আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এন্তাজ আলী, দপ্তর সম্পাদক রাবিবুর রহমান বাবু ও ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আবুল বাশার পিন্টু সাধারণ সম্পাদকের কথার সাথে সুর মিলিয়ে বলেন, এই সমস্ত লোকসানতো তাদের হচ্ছেই সেইসাথে তাদের ডেকোরেটর সামগ্রী যেমন কাঠের টেবিলে ঘুন ধরছে, সামিয়ানা ও অন্যান্য ডেকোরশেন কাপড় ব্যবহার না হওয়ায় ফাঙ্গাস ধরে কাপড়গুলো নষ্ট হতে বসেছে।

এই অবস্থায় বসে থাকতে থাকতে তাদের যে সামান্য জমানো অর্থ ছিলো তা শেষ হয়ে গেছে। এখন অন্যের নিকট ঋন কিংবা ধার করে তাদের চলতে হচ্ছে। এক কথায় তারা বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে জানান তারা। এই ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে এবং ব্যবসার সাথে জড়িত পরিবারের সদস্য এবং কর্মীদের কথা বিবেচনা করে স্বাস্থবিধি মেনে দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল প্রকার অনুষ্ঠান করার অনুমতি প্রদানের জন্য রাসিক মেয়র, কর্তৃপক্ষ ও সরকারের প্রতি দাবী জানান। সেইসাথে ব্যাংকের সুদ মওকুপের অনুরোধ করে তারা।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ ফজলুল করিম (বাবলুরাজশাহী। # 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.