পণ্য উৎপাদন করুন চাহিদা অনুযায়ী : প্রধানমন্ত্রী

বিটিসি নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিভিন্ন দেশের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তি পণ্যের গুণগত মান উন্নত অত্যন্ত জরুরি। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পণ্যের বাজার অনুসন্ধান এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী সে সব পণ্য উৎপাদন করতে হবে। মুষ্টিমেয় কয়েকটি পণ্যের ওপর রপ্তানি নির্ভরশীলতা কমিয়ে আমাদের এখন রপ্তানি বহুমুখীকরণের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশের সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার জাতীয় শিল্পনীতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে শিল্প উন্নয়নের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে গণ্য করছে। সরকারের নেওয়া কর্মসূচির ফলে দেশব্যাপী টেকসই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের দ্রুত প্রসার ঘটছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উদ্যোক্তাগণ ব্যবসা স্থাপন থেকে শুরু করে ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যবসায়িক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ ও সহায়তা, পরামর্শক সেবা ইত্যাদি এই ওয়ানস্টপ সেন্টার থেকে গ্রহণ করতে পারবে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে পণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শারীরিক অসুস্থতার দরুন তার ভাষণ প্রদান করেননি। এর পরিবর্তে তার ভাষণের লিখিত কপি অনুষ্ঠানে বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ‘ঠান্ডা লেগে’ প্রধানমন্ত্রীর গলা বসে গেছে। এ কারণে অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা প্রধানমন্ত্রীর লিখিত বক্তব্যের অংশবিশেষ পড়ে শোনান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মাইকে দাঁড়িয়ে শুধু বলেন, ‘আমার গলার অবস্থা ভালো নয়। এ জন্য বক্তব্য দিতে পারছি না, দুঃখিত’।
বাংলাদেশে কুটির শিল্পের সুদীর্ঘ গৌরবের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ঐতিহ্যবাহী জামদানি, নকশিকাঁথা এবং সিলেটের শীতল পাটি ইতোমধ্যে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য-তালিকায় স্থান পেয়েছে। উদ্যোক্তাগণ এ সকল পণ্যের ব্র্যান্ডিং-এর পাশাপাশি বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে পারেন। উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশীয় কাঁচামালনির্ভর শিল্পায়নের পাশাপাশি অঞ্চলভিত্তিক কাঁচামালের সহজলভ্যতা বিবেচনা করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। সরকার উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা প্রদান করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেই, তখন বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। অনেক দেশ বিশ্বমন্দার অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু আমরা সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে একটি শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। বিশ্বে এখন বাংলাদেশ মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৫২ মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেয়ে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশে উন্নীত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ১৯৯টি দেশে ৭৫০টি পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে ৪১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সফল এসএমই উদ্যোক্তাদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন এবং উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, শিল্প সচিব মো. আব্দুল্লাহ, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন কেএম হাবিবুল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, এসএমই মেলা দেশে উৎপাদিত এসএমই পণ্যের পরিচিতি বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্রেতা আকর্ষণ ও বাজার সমপ্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এ ধরনের মেলা আয়োজনের মাধ্যমে এসএমই খাতের অনেক সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হবে এবং যথাযথ স্বীকৃতি পাবে। তিনি বলেন, আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে অর্থাত্ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান মহিলা শ্রমিক লীগের নেতারা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তারা। প্রধানমন্ত্রী সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করার জন্য মহিলা শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীদের একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগঠনের পরলোকগত নেতাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
মহিলা শ্রমিক লীগ সভাপতি রওশন জাহান সাথীর সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামসুন্নাহার আক্তার চৌধুরী, কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক বিউটি আক্তার এবং অন্যান্য জেলা ইউনিট নেতারা বক্তব্য রাখেন।
শারীরিক অসুস্থতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ তো আমি বক্তৃতা দিতে পারবো না, আমি শুনবো। আমি তো সব সময় বলি, সবাই শুনতে পারে। কিন্তু আমার শোনা তো হয় না। আমি প্রত্যেক জেলা প্রতিনিধিদের কাছ থেকে শুনবো।’ প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আর বক্তব্য দিতে পারবো না। ঠাণ্ডা লেগে গলা একদম বসে আছে। একই কারণে সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় এসএমই মেলা ২০১৮’এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য না রাখার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সকালে বক্তৃতা দিইনি। পারি নাই। #’
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.