নির্বাচনের তফসিল অক্টোবরে

বিটিসি নিউজ ডেস্ক:একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথে ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অগ্রসর হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ডিসেম্বর মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে আগামী অক্টোবর মাসে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম এ ঘোষণা দেন। তফসিল ঘোষণার সুনিদৃষ্ট তারিখ না জানালেও নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইসি আলোচনা করে নির্বাচনের তারিখ ও তফসিল ঘোষণার তারিখ চূড়ান্ত করবে। তবে অক্টোবরেই তফসিল ঘোষণা করা হবে।

সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ উপলক্ষ্যে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় জানানো হয়, প্রশাসনিক  ও স্থানীয় জনগণ এবং সংসদ সদস্যদের (এমপি) চাহিদার ভিত্তিতে সংসদীয় ২৫টি আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিতর্কিত ওই নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে ভোট ছাড়াই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ২৯ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা আছে। দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। চলতি বছর ১২ জানুয়ারি সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা হবে বলে দেশবাসীকে জানান। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনার মাহবুবু তালুকদার নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কথা জানান। এ খবর প্রচারের পর পরই প্রধান নির্বাচন কমিশনার দ্বিমত করলেও কয়েকদিন পর তিনি আবার সেনা মোতায়েন হতে পারে বলে জানান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে। ইসি সে ভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। উল্লেখ নির্বাচনকালীর নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট, সিপিবি, বাসদ, গণফোরাম, বিকল্পধারাসহ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হলেও এই প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক ভাবে তফসিলের বিষয়ে একটি দিনক্ষণের ঘোষণা এলো নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। তবে দেশের সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী মহল, নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে এখনো হতাশ। তাদের অভিযোগ এক পক্ষ নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারলেও অন্য পক্ষকে সভা সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এ ছাড়াও জাতিসংঘ, প্রভাবশালী দেশ, দাতাসংস্থাসহ আন্তর্জাতিক মহল সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের পরামর্শ দিয়েই যাচ্ছে। তারা নির্বাচনে সহায়তার প্রস্তাবও দিয়েছে। এমনকি যে ভারত আন্তর্জাতিক মহলের চাপ উপেক্ষা করে কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে ৫ জানুয়ারীর পাতানো নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছিল এবং বর্তমান সরকারের গ্রহণযোগ্যতা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে ওকালতি করেছে; সেই ভারতের শাসনকরাও দিল্লী থেকে বার্তা দিয়েছে তারা এবার বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্ব দেখতে চাচ্ছেন। কোনো দলের সঙ্গে নয় পিপলস টু পিপলস সম্পর্ক গড়তে চান। আবার বিএনপির পক্ষ থেকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি এখনো করা হচ্ছে। বর্তমানে তারা কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এমনকি দলটি খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যাবেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপির এসব দাবি পূরণের কোনো নমুনা এখনও দেখা যাচ্ছে না। আর বিএনপি আগামী ভোটে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে আসবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি তারা বলছেন নির্বাচনকালীন সরকারের নেতৃত্ব থেকে শেখ হাসিনাকে সরে দাঁড়াতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইনকিলাবকে বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাহলেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে।

বড় দুই দলের বিপরীতমুখী অবস্থান এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের তফসিলের ঘোষণা এলো। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চেয়ারম্যান এবং এইচ টি ইমামকে কো চেয়ারম্যান এবং ওবায়দুল কাদেরকে সদস্য সচিব করে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করেছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ভোট যখনই হোক, আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। তবে কমিশনের তফসিলের বিষয়ে এখন কোনো বক্তব্য নেই। এটা আমাদের দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া হবে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৩০ জানুয়ারি সিলেট থেকে এই প্রচারণা উদ্বোধন করেন তিনি।

এবার ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৫টি আসনে পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। তবে ঢাকার কোন আসনের সীমানা বদল হয়নি। কারণ একটি সীমানার পরিবর্তন করা হলে, এর সঙ্গে আরো পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়। প্রথম খসড়ায় ৪০টি সংসদীয় আসনের সীমারেখায় পরিবর্তন আনার কথা ভাবা হলেও পরে ২৫টি আসনে পরিবর্তন আনা হয়। এই পরিবর্তন সরকার বা স্থানীয়দের চাপে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম বলেন, এসব আসন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত নেওয়া হয়েছে। সব কিছু ভেবেই এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরিবর্তিত সংসদীয় আসনগুলো বেশির ভাগই ২০০৮ সালে নির্বাচনের সময়ের সীমানায় ফিরে গেছে। আর বাকি ২৭৬টি আসন দশম নির্বাচনের সময়ের মতো রয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রতি সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন আদমশুমারি রিপোর্টের ভিত্তিতে জনসংখ্যার অনুপাত, প্রশাসনিক সুবিধা, ভৌগলিক  বিবেচনায় নিয়ে সংসদীয় আসেন সীমানা পরিবর্তন করে থাকে। সে অনুযায়ী এবার আদমশুমারি রিপোর্ট প্রকাশিত না হলেও এমপি ও স্থানীয় জনগণের চাহিদার ভিত্তিতে এসব আসনের সীমানায় এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। তিনি জানান, পরিবর্তন আনা সংসদীয় আসনগুলো হচ্ছে- নীলফামারী-৩ ও ৪, রংপুর-১ ও ৩, কুড়িগ্রাম-৩ ও ৪. সিরাজগঞ্জ-১ ও ২, খুলনা-৩ ও ৪, জামালপুর-৪ ও ৫, নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫, সিলেট-২ ও ৩, মৌলভীবাজার-২ ও ৪, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-৫ ও ৬, কুমিল্লা-৬, ৯ ও ১০ এবং নোয়াখালী-৪ ও ৫।

উল্লেখ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের জন্য নির্বাচন কমিশন গত ১৪ মার্চ ৩৮টি আসনের সীমানা পরিবর্তন এনে ৩০০ আসনের খসড়া গেজেট আকারে প্রকাশ করে। এর পক্ষে-বিপক্ষে দাবি ও আপত্তি গ্রহণ করে কমিশন। এতে আপত্তি জানিয়ে ৪০৭টি এবং ইসির পক্ষ সমর্থন করে ২২৪টি আবেদন জমা পড়ে। গত শনিবার এসব আপত্তির পর থেকে শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে গতকাল চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.