নাটোর প্রতিনিধি: ক্রিম, ছানা আর ঘি—নাটোরে এগুলোর অধিকাংশই তৈরি হচ্ছে মহিষের দুধ থেকে। পাশাপাশি মাংসের কদরও অনেক। আবার গরুর চেয়ে মহিষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। তাই খামারিদের লোকসানের আশঙ্কাও কম। এসব কারণে দিনে দিনে বাড়ছে বিনিয়োগ। নাটোর জেলাতেই এখন মহিষের খামার আছে ৬১১টি।
একসময় চর ও পরিত্যক্ত জমিতে খোলা জায়গায় পালন করা হতো মহিষ। এখন কমেছে চারণভ‚মি। যে কারণে বেড়েছে খামার। তবে সেই খামার লাভজনক বলে মহিষ পালনকে ঘিরেই চলছে নাটোরের বিশাল এক জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা।
নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, নাটোরের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়াসহ সকল উপজেলাতেই পালন করা হচ্ছে মহিষ। বেশি আছে লালপুর উপজেলার বিভিন্ন চর আর পদ্মা নদীর পাড় সংলগ্ন গ্রামগুলোতে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, জেলার ৬১১টি খামারে মহিষ আছে ৭ হাজার ২৪৮টি। এরমধ্যে লালপুর উপজেলায় সর্বোচ্চ ৩৮০টি খামার আছে। এক উপজেলাতেই মহিষ আছে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি।
সরেজমিনে লালপুর উপজেলার আড়ানী বাকনা চরে দেখা মেলে মহিষের খামার। স্থানীয় খামারিরা জানালেন, ওই চরে রয়েছে ১৫টি খামার। একেকটি খামারে গড়ে ২০টি করে মহিষ।সেখানে কথা হয় খামারি রফিকের সঙ্গে।
রফিক জানালেন, তার খামারের ছয়টি মহিষ দুধ দিচ্ছে। প্রতিটি থেকে দিনে ৫-৭ লিটার দুধ পাওয়া যায়। দুধ পরীক্ষা করে তাতে কী পরিমাণ ক্রিম রয়েছে সেটার ওপর ভিত্তি করে দাম পাওয়া যায়।
রফিক বলেন, প্রতিদিন দুধ বিক্রি করে ১২-১৩শ’ টাকা পান। এ ছাড়া অনেকে মাংসের জন্য মহিষ কিনে নিয়ে যায় তার কাছ থেকে। যাবতীয় খরচ বাদে তার বছরে দুই লাখ টাকা লাভ থাকে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মহিষের দুধের ক্রেতা উপজেলার নাগশোষা এলাকার পঙ্কজ ঘোষ বলেন, এলাকায় তিনিসহ মোট চারজন ঘোষ আছেন। প্রতিদিন খামারিদের কাছ থেকে দুধ কিনে তারা ক্রিম, ছানা ও ঘি বানান। নিজস্ব ক্রিম তৈরির মেশিন আছে তাদের প্রত্যেকের।
পঙ্কজ ঘোষ আরও বললেন, এক কেজি মহিষের দুধে ১৫০ গ্রাম ক্রিম পাওয়া গেলে তারা ৭০ টাকা দেন। ক্রিম ছাড়া দুধের পাতলা অংশ থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তারা ছানা বানান। প্রতিদিন ১০-১২ কেজি ক্রিম তৈরি করেন তিনি। জানালেন, এক কেজি ক্রিম থেকে গড়ে ৪৫০ গ্রাম ঘি হয়।
জেলার বাইরে থেকেও মিষ্টি দোকানিরা এসে তাদের কাছ থেকে ছানা কেনেন। যা দিয়ে রসগোল্লা, চমচম, কাঁচাগোল্লা তৈরি হয়। এ ছাড়া ঘি ব্যবসায়ীরাও তাদের কাছ থেকে ক্রিম কিনে নিয়ে যান বলে জানান পঙ্কজ ঘোষ। প্রতি কেজি ঘি পাইকারি বিক্রি করছেন ৮শ’ টাকায় এবং প্রতি কেজি ক্রিম ৩০০ টাকায়।
শহরের মাদ্রাসা মোড় মাংস বাজারের ব্যাবসায়ী জুয়েল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, প্রতিদিন তারা একটি করে মহিষ জবাই করে মাংস বিক্রি করেন। মহিষের মাংসের প্রতি কেজি ৬০০ টাকা করে দাম তুলনামূলক কম বলে ক্রেতারাও কেনে। প্রতিদিন একটি মহিষ বিক্রি করে তার ৩-৪ হাজার টাকা লাভ থাকে।
দিঘাপতিয়া ঘোষপাড়ার ঘি ব্যাবসায়ী ভোলা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, মহিষের দুধের ক্রিম কিনে নিজেরা বাড়িতে ঘি তৈরি করে সেটা ১২শ টাকায় বিক্রি করেন। এর লাভ দিয়ে তার ৫-৬ সদস্যের সংসার ভালোই চলছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, মহিষের জাত উন্নয়নের কাজ চলছে। ভারতীয় জাতের সঙ্গে দেশি জাতের মিশ্রণে উন্নয়ন করা গেলে দুধের পরিমাণ বাড়বে। বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুরে কৃত্রিম প্রজননের কাজ চলছে। দ্রুত লালপুর উপজেলাতেও শুরু হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.