নাটোরের সিংড়া পৌরসভা বিশ্বের সেরা ৩০ নগরের তালিকায়!

নাটোর প্রতিনিধি: একটি নিরাপদ গণপরিবহন সেবা হিসেবে নাটোরের সিংড়া পৌরসভায় শুরু হয়েছিলো জার্মানী দাতা সংস্থা জিআইজেড প্রদত্ত পরিবেশবান্ধব ই-রিক্সা ও ই-এম্বুলেন্স সার্ভিস ‘চলো’। করোনা মহামারীর শুরুতে সংক্রমণ রোধকল্পে বন্ধ হয় গণপরিবহণ। ফলে সিংড়াতেও থেমে যায় গাড়ির চাকা। রোগী ও আক্রান্তদের হাসপাতালে আনা নেয়ার জন্য চালু ছিলো শুধু সরকারী হাসপাতালের এম্বুলেন্স, কিন্ত চাহিদার নিরীখে তা নিত্যান্তই অপ্রতুল।
মহামারীর এই সময় যখন বিশ্বব্যপী লকডাউনে বন্ধ গণপরিবহন, তখন করোনা আক্রান্ত, রোগী পরিবহন ও মানবিক খাদ্য সহায়তা বিতরণে ই-রিক্সা ও এম্বুলেন্সকে মাঠে নামান সিংড়া পৌরসভার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস। নিরাপদ গণপরিবহন হিসেবে দেয়া তিন ও চার চাকার গাড়িগুলো বাংলাদেশের একটি পৌর শহরে করোনাকালে সুরক্ষা ও মানবিক সংকটে কাজের প্রতিবেদন জার্মানির টুমি টেলিভিশন’এ প্রচারিত হলে তা নজরে আসে চীনের নগর উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা সংগঠন জুয়াংজু ইন্টারন্যাশনাল আরবান ইনোভেশন টেকনিকাল কমিটির।
জুয়াংজু ইন্টারন্যাশনাল এওয়ার্ড কমিটি এবার সিংড়া পৌরসভাকে ই-পরিবহন সার্ভিসের ব্যতিক্রমী ব্যবহারের কারণে ‘আন্তর্জাতিক নগর উন্নয়ন উদ্যোগ’ সম্মাননা প্রদানের জন্য নির্বাচিত করেছে।
ই-মেইলের মাধ্যমে সিংড়া পৌরসভাকে এ তথ্য জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
খবরটি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের সিংড়া পৌরসভায় জিআইজেডের ‘চলো’ গণপরিবহন সার্ভিসের কো-অর্ডিনেটর বিনায়ক চক্রবর্তী।
আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, কিউবা, ডেনমার্ক, মিশর, ফ্রান্স, জার্মানী, ভারত, ইরান, ইজরাইল, জাপান, কোরিয়া, মেক্সিকো, মরোক্কো, নেদারল্যান্ড, পোল্যান্ড, সেনেগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব-আমিরাতের নগর উন্নয়নে নতুন উদ্যোগের সাথে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের নাটোর জেলার সিংড়া পৌরসভার নাম। আরও খুশির খবর আর্জেন্টিনার পরেই দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশের এই পৌরসভা।
প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বিনায়ক চক্রবর্তী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, বাংলাদেশী মূল্যমান প্রায় ১ কোটি টাকা থেকে কেনা মোট ১২টি অটোরিক্সা মধ্যে ৬টি চার চাকার গাড়ি আর বাঁকি ৬টি তিন চাকার গাড়ি নিয়ে ২০১৯ সালের নভেম্বরে চালু হয় চলো সার্ভিস। চার চাকার ৪টি গাড়িতে ৮ টি সীট রয়েছে। এই গাড়ি প্রতিটির মূল্য প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। অপর ২টি চার চাকার গাড়ির প্রতিটির মূল্য ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
অপরদিকে বাঁকি ৬টি তিন চাকার গাড়ির মধ্যে ৩টির প্রতিটির মূল্য ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং অপর তিনটির প্রতিটির মূল্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ১২টি গাড়ির মধ্যে চার চাকার দুইটি গাড়িকে এ্যাম্বুলেন্স হিসেবে আর বাকি ১০টি পাবলিক পরিবহণ হিসেবে পৌর এলাকায় যাত্রীসেবায় নিয়োজিত ছিলো।
গাড়িগুলোর প্রতিটিতে উন্নত মানের ব্যাটারী ও মটর রয়েছে। এগুলোকে চার্জ দেয়ার জন্য পৌরসভার পাশেই নির্মাণ করা হয় প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যায়ে চার্জিং স্টেশন। গাড়িগুলো প্রায় শব্দহীনভাবে চলে। কোনো ধোয়া নিঃসরণ হয় না এবং ব্যাটারীগুলো পূণঃব্যবহারযোগ্য হওয়ায় পরিবেশবান্ধব ও জলবায়ু সহায়ক।জুয়াংজু ইন্টারন্যাশনাল এওয়ার্ড কমিটি আন্তর্জাতিক এ স্বীকৃতির সাথে পাঠিয়েছে ৪১পৃষ্টার একটি তথ্য বিবরণী।
বিবরণী সূত্রে জানা যায়, টেকনিকাল কমিটির নিকট গত নভেম্বরে বিশ্বের ৬০টি দেশের ১৭৫টি নগরের ২৭৩টি ‘উন্নয়ন উদ্যোগ প্রস্তাবনা’র নাম যা বাস্তবায়নাধীন। এর মধ্যে ১৫৮ নগরের ৫৫টি উদ্যোগ প্রস্তাবনা গৃহীত হয়। ১৫৮টি নগরের মধ্যে ৪৫টি নগর চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়। এর মধ্যে ১৫টি নগর ‘শর্টলিস্টেড’ ও বাকী ৩০টি নগরকে ‘ডিজার্ভিং’ হিসেবে এই সম্মাননা দেয়া হল। এই ৩০ নগরের তালিকায় দেশের দিক থেকে বাংলাদেশের সিংড়া পৌরসভা দ্বিতীয় ও ক্রমিক নম্বরের দিক থেকে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে।
সিংড়া পৌরসভার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ই-পরিবহন সার্ভিসের মাধ্যমে করোনাকালে সুরক্ষা ও লকডাউনে ঘরে ঘরে মানবিক খাদ্য সহায়তা পৌছে দিয়ে আজ আন্তর্জাতিকভাবে যে স্বীকৃতি অর্জিত হলো, তা সিংড়া পৌরবাসীকে উৎসর্গ করছি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের কাছে আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি সিংড়াবাসীর জন্য উন্নত ও আধুনিক নাগরিক সেবা নিশ্চিতে বরাবরের মতো এ ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করেছেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক নাটোরটাইমস টোয়েন্টিফোরকে বলেন, বিরল এই সম্মাননা করোনাযুদ্ধের স্বেচ্ছাসেবকদের উৎসর্গ করছি। বিশেষ করে সিংড়া পৌরসভার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌসকে যিনি সামাজিক দুরুত্ব নিশ্চিত ও মানবিক সংকটে সিংড়া পৌরবাসীর সেবায় ৫৫ দিনের নিজের ঘরে প্রবেশ করেননি। ভবিষ্যতে আমার পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের একমাত্র পৌরসভা হিসেবে স্বীকৃতি মেলায় উল­াস প্রকাশ করেছে সিংড়াবাসী।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.