নাটোরের মৌচাক মিষ্টি ভান্ডারে ভ্যাট প্রশাসনের হানা!

নাটোর প্রতিনিধি:নাটোরের মৌচাক মিষ্টান্ন ভান্ডারের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকি সহ ভোক্তাদের সাথে প্রতারনার অভিযোগ
উঠেছে। এই মিষ্টির দোকানে চড়া দামে মিষ্টি বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ ওঠার পর এবার হানা দিয়েছে ভ্যাট প্রশাসন। বছরের পর বছর ভ্যাট ছাড়া আকাশচুম্বী দামে মিষ্টি বিক্রি করে রাজস্ব ফাঁকি দেয়া দোকানটিতে ভ্যাট প্রশাসনের দুইজন সিপাহী ও এবং একজন ইন্সপেক্টর নিযুক্ত করা হয়েছে।

তারা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন কত টাকার মিষ্টি বিক্রি করছে তা তদারকি করছেন। একই সাথে ক্রেতা মিষ্টি কেনার সাথে সাথে ওই কর্মকর্তা মিষ্টির দামের নেবার সাথে সাথেই ভ্যাটের পরিমাণ হিসেব করে আলাদা করছেন। এখন মিষ্টি কিনলেই নগদ টাকা ভ্যাট কেটে নেওয়া হচ্ছে।স্থানীয়দের অভিযোগ, নাটোরে দাপটের সাথে মিষ্টি বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান মৌচাকের নাম শোনেননি
এমন মানুষ খুব কমই রয়েছে। কিন্ত আকাশচুম্বী দামের কারণে এ দোকানটির মিষ্টি কিনে খাবার সামর্থ্য নেই সকলের । শহরের অনান্য দোকানগুলোতে বহুকষ্টে ৮/১০ পদের মিষ্টি পাওয়া গেলেও মৌচাকে মিষ্টান্ন ভান্ডারে মেলে ৪১ পদের বাহারী মিষ্টি।

সম্প্রতি নাটোর জজ কোর্টের আইনজীবি আমিনুল ইসলাম মৌচাক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অশোভন আচরণ ও টাকার রশিদ না দেয়ার জন্য লিখিত অভিযোগ করেন জেলা প্রশাসক বরাবর। এছাড়া মৌচাক মিষ্টির দোকানের নামে নানা রকম অভিযোগ ওঠে।উত্তর চৌকির পাড় কালুর মোড় থেকে পূর্ব দিকে পায়ে হাঁটা পথ প্রায় ৫০ ধাপ গেলেই রাস্তার উত্তর পাশে মৌচাক মিষ্টান্ন ভান্ডারের কারখানা । সুবিশাল লোহার গেট দক্ষিণে রাজবাড়ির বেড়চৌকি। তিন পাশ জুড়ে রয়েছে মানুষের বসতি। কারখানার ভিতরে প্রবেশ করতে গেলে লড়াই করতে হবে উড়ছে মাছির সাথে। ছানা থেকে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে নোংরা আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। ঢাকনা ছাড়াই রাখা আছে মিষ্টি ভর্তি কড়াই।

মাথায় ক্যাপ ছাড়াই শ্রমিক কাজ করছে। অপরিচ্ছন্ন স্থানে রাখা আছে মিষ্টির কাজে ব্যবহৃত সসপেন, প্লেট, কড়াইসহ প্রয়োজনীয় বাসন। এক লাইনে প্রায় ১৫টা উনুন জ¦লছে।কারখানাতে কর্মরত কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টা চলে এই কারখানা। দিনে ১৬ জন এবং রাতে ১৭ জন শ্রমিক কাজ করে। তবে মৌচাক কর্তৃপক্ষের দেওয়া শ্রমিক সংখ্যা ও বাস্তবিক চিত্রে অনেক তারতম্য রয়েছে।মিষ্টি তৈরির কারিগর রিয়াজ জানান, মাথায় ক্যাপ পড়লে গরম লাগে তাই খুলে রেখেছি। তবে মালিক সকল কারিগরকে ক্যাপ দিয়েছে এবং কাজের সময় ক্যাপ ব্যবহারের নির্দেশ রয়েছে।উত্তর চৌকিরপাড় কালুর মোড় এলাকার আবুল বাসার জানান, মৌচাক কারখানায় প্রায় ১২টা চুলা আছে যার সঠিক ভাবে ধোঁয়া নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। আর তার বাড়িতে ধোঁয়ার কারনে টিনের চাল সহ গাছ পালার ক্ষতি হচ্ছে।

শব্দ দুষণের ফলে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার সমস্যা হয়। উচ্চস্বরে গান, শ্রমিকদের চিৎকার ও চেচামেচি করে কথা বলা, বাসনপত্রের শব্দে রাতে তাদের ঘুমাতে সমস্যা হয়। কারখানাটি দ্রুত স্থানান্তরের জন্য প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি সহ এলাকাবাসী।লিলি বেগম নামে অপর একজন অভিযোগ করেন, তার বাড়ির সাথে লাগানো কারখানা কাজ করা শ্রমিকরা দিনের বেলায় তাদের পারিবারিক কথা শুনতে পায় ও প্রতিউত্তর করে। মৌচাক কারখানার এই অভিযোগের বিষয়গুলি নিয়ে বিচার শালিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে । শালিসে মধ্যস্থতাকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মালেক শেখ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, উভয়পক্ষের শুনানি শেষে রায় দেওয়া হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ স¤পর্কে কারখানা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয় যেন এ ধরনের অভিযোগ এলাকাবাসী আর যাতে না করে।এমন বিভিন্ন অভিযোগ ও ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে এলাকাবাসীর মধ্যে। তাদের অভিযোগ, মৌচাক কর্তৃপেক্ষর অনেক ক্ষমতা। নাটোরের বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের নাম করে তারা চলে ।

নাটোর রাজবাড়ির বেড়চৌকি ও পুকুর লিজার তৈয়ব আলী খান জানান, বেড়চৌকির উত্তর পাশে মৌচাক মিষ্টি কারখানা তাদের দূর্গন্ধময় বর্জ্য দিঘীর পানিতে ফেলে। ফলে প্রায় প্রতিদিন পুকুরের মাছ মরে ভাসতে দেখা যায়। কারখানা কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করলে তারা কিছুদিন দিঘীতে পানি নিষ্কাশন বন্ধ রেখেছিল। কিন্তু বর্তমানে রাস্তার নিচ দিয়ে পাইপ লাইনে আবার পানি ফেলছে। তিনি এ ব্যপারে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দোকানের ম্যানেজার মনির হোসেন বলেন স্থানীয় এমপি সাহেব আমাদের প্রতিষ্ঠানের কাঁচাগোল্লা নিয়ে যান প্রধানমন্ত্রীর জন্য। নাটোরের মৌচাক মিষ্টি ভান্ডারে ভ্যাট প্রশাসনের হানা!

আমাদের নামে সকল অভিযোগ বানোয়াট। গভীর রাতে শব্দদূষণ হয় এই কথার সত্যতা স্বীকার করে তিনি জানান, এলাকাবাসী এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছিল। পরে কারখানার শ্রমিকদের নিষেধ করা হয়েছে তারা যেন কোন রকম শব্দ না করে।আবাসিক এলাকায় কারখানা তৈরির বিষয়ে বিসিক শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক দিলরুবা দিপ্তি জানান, বিসিক শিল্প নগরী কোন আবাসিক এলাকায় কারখানা তৈরির অনুমোদন দেয় না।

বি.এস.টি.আই অথবা পরিবেশ অধিদপ্তর আবাসিক এলাকায় কারখানা তৈরির অনুমোদন দিয়েছে কিনা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেন তিনি।নাটোর কাস্টম¯ অফিসের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো: আব্দুল লতিফ জানান, মৌচাক মিষ্টান্ন ভান্ডারের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ আগে থেকই ছিল। এজন্য উদ্ধতন কর্মকর্তার নির্দেশে ২৩ মার্চ থেকে মৌচাক মিষ্টান্ন ভান্ডারে ভ্যাট প্রশাসনের দুইজন সিপাহী ও এবং একজন ইন¯েপকটরকে নিযুক্ত করা হয়েছে যাতে করে তারা আর কর ফাঁকি দিতে না পারে। এই কার্যক্রম মৌচাক দিয়ে শুরু হলেও

পর্যায়ক্রমে শহরের সব বড় বড় দোকান গুলোতে যারা সরকারের ভ্যাট ফাঁকি দেয় তাদের প্রতি নজর
রাখা হবে।মৌচাকে কাস্টম¯ অফিসের ভ্যাট অভিযানের ফলে দেখা যায় ক্রেতাদের থেকে ভ্যাট আদায় শুরু হয়েছে। সোমাবার সন্ধ্যায় দোকানটিতে গিয়ে দেখা যায় এমদাদুল হক নামের ভ্যাট প্রশাসনের একজন সৈনিক পদমর্যাদার কর্মকর্তা বিক্রিত মিষ্টির দামের নেবার সাথে সাথেই ভ্যাটের পরিমাণ হিসেব করে আলাদা করছেন। ফলে যে কাাঁচাগোল্লা এতদিন প্রতি কেজি বিক্রি হত চারশত টাকায়, ভ্যাটসহ

এখন ক্রেতাকে গুনতে হচেছ চারশত ষাট টাকা করে।ক্রেতাদের দাবী ভ্যাট দিয়ে পণ্য কেনার তার আগে কর্তৃপক্ষকে ঠিক করে দিতে হবে দামের বিষয়টি। মৌচাক সহ মিষ্টির দোকান গুলো যে লাভ করছে ভ্যাট ছাড়াই, তারা কি সরকারকে ভ্যাট দিচ্ছে। ভ্যাট প্রয়োগ করলে কাাঁচাগোল্লা সহ অন্যান্য মিষ্টির দাম আগের অবস্থানে নেওয়ার দাবী জানান তারা ।#