নাটোরের বাগাতিপাড়া ১ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষের চিকিৎসা দিচ্ছেন মাত্র ৪ জন চিকিৎসক

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জনসংখ্যা ১ লক্ষ ৩০ হাজার। এই জনসংখ্যার সেবায় স্থানীয় ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ১৪টি পদ থাকলেও বর্তমানে চিকিৎসক মাত্র ৪ জন। গড়ে ৩২ হাজার ৭৫০ জন রোগীর বিপরীতে চিকিৎসক মাত্র একজন। চিকিৎসক-জনবল ও যন্ত্রপাতি সংকটের মধ্যেই মেডিক্যাল অফিসার নাজমুল হাসানকে সম্প্রতি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বদলীর আদেশ দেওয়া হয়েছে। এতে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হওয়ায় দূর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। এছাড়া কর্মচারী পদের জনবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংকটে হাসপাতালটি নিজেই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ জন রোগী ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫০০-৫৫০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। মোট ১৪ জন চিকিৎসকের পদের বিপরীতে মাত্র চার জন চিকিৎসক সেবা প্রদান করছেন।

তারা হলেন:  উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. রাসেল, মেডিকেল অফিসার আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ ও মেডিকেল অফিসার নাজমুল ইসলাম।

তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিতে আরও চারজন চিকিৎসকের পদায়ন থাকলেও বিভিন্ন কারনে তারা হাসপাতালের বাইরে রয়েছেন। এদের মধ্যে দুই জন চিকিৎসক দীর্ঘ দিন যাবত কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ইয়াসের আরাফাত ছয় বছর ও মেডিকেল অফিসার মোফাজ্জল শরিফ সাড়ে চার বছর ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন।

তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান আছে। মামলা নি®পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই দুটি পদে কাউকে নিয়োগ প্রদান করা যাচ্ছে না। প্রেষণে (ডেপুটেশন) রয়েছেন গাইনি ও ডেন্টাল সার্জন পদের দুই চিকিৎসক। এনেসথেশিয়া পদ দীর্ঘ কাল যাবতচিকিৎসকহীন রয়েছে। শিশু, চক্ষু এবং অর্থপেডিকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে কোন চিকিৎসক নেই।

এছাড়াও ১৭টি স্বাস্থ্য সহকারির পদের বিপরীতে রয়েছে ১২জন। ১৬ জন নার্সের বিপরীতে রয়েছেন ১৩ জন। অফিস সহকারীর ৩ টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১ জন।

এছাড়া পরিসংখ্যানবিদ ও টেকনিশিয়ানের দুইটি শূন্য রয়েছে। শিশু, চক্ষু এবং অর্থপেডিকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদ না থাকায় রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। হাসপাতালটিতে এক্স-রে মেশিন থাকলেও তা দুই বছর ধরে অকেজো। দুটি ইসিজি মেশিন থাকলেও সেগুলো ঠিকমত কাজ করে না। এছাড়া আসবাবপত্র ও বিভিন্ন বিভাগে যন্ত্রপাতির সংকটও রয়েছে।

সাইলকোনা গ্রামের ইদিস আলী ও আব্দুস সালাম বিটিসি নিউজকে বলেন, হাতেগোনা কিছু রোগের পরীক্ষা করা হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জটিল কোন রোগ পরীক্ষা হয় না।

দায়ারামপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা শহিদুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিতে আসায় চিকিৎসকদের নিকট থেকে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না। কোনরকমে সমস্যা জানিয়ে ঔষধ লিখে নিতে হয়।

ক্যাব, বাগাতিপাড়া শাখা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল আফতাব খান সুইট বিটিসি নিউজকে বলেন, বলেন, চিকিৎসাসেবা সংবিধানস্বীকৃতি অন্যতম মৌলিক অধিকার হলেও বাগাতিপাড়াবাসী দীর্ঘদিন থেকে বঞ্চিত। সরকার তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দেয়া শুরু করলেও বাগাতিপাড়ায় এর প্রতিফলন নেই।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ আমিনুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, মাত্র ৪ জন ডাক্তার দিয়ে রোগীদের সেবা দিতে সাধ্যমতো চেষ্টা করেও পারছিনা। এসব সমস্যার বিষয়ে একাধিক বার চিঠি দিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। চিকিৎসক সঙ্কটের পরেও রোহিঙ্গা ক্যা¤েপ ডা. নাজমুল ইসলামের বদলির আদেশ হয়েছে। এই বদলির আদেশ বাতিলের জন্য করা হয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক পদায়ন ও সেবা বৃদ্ধিতে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। অচিরেই সংকট কেটে যাবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.