নাগেশ্বরীতে গো-খাদ্যের চরম সংকট বিপাকে খামারীরা


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে টানা বর্ষণ আর দফায় দফায় বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সবজি ও আমন ক্ষেতসহ অন্যান্য ফসলের। নষ্ট হয়েছে ঘাস লতা পাতাসহ সকল তৃণভূমি।

ভারি বর্ষণের ফলে পঁচে গেছে শুকনো খর। ফলে চরম সংকট দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের। গো-খাদ্যের এমন সংকটে বিপাকে পড়েছেন ছোট বড় সব ধরণের খামারি ও গৃহস্থরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী গত শতবর্ষের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিলো এবারের বৃষ্টিপাত এবং ভারি বর্ষণ। একের পর এক আঘাত হানে বন্যা। এক ধাপের বন্যার পানি নেমে যেতে না যেতেই শুরু হয় পরবর্তী ধাপের বন্যার।

এভাবেই পঞ্চম ধাপ পর্যন্ত বন্যায় অতিষ্ট করে সকলকে। দির্ঘস্থায়ী এমন বন্যায় তলিয়ে যায় নাগেশ্বরী উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৩টি ওয়ার্ড।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী এতে নিমজ্জিত হয় ৬ হাজার ৫৫ হেক্টর জমির রোপা আমন, ২১৫ হেক্টর জমির মাষকালাই, ৩০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত।অপরদিকে প্রাণি সম্পদ অফিসের তথ্যানুযায়ী দীর্ঘসময় পানির নিচে ডুবে থাকে ২শ ৭৩ একর গো-চারণভূমি। জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়ে যায় ৫১ একর জমিতে লাগানো বিভিন্ন জাতের ঘাস।

এদিকে টানা বৃষ্টিতেপচে নষ্ট হয়ে গেছে গো-খাদ্যের শুকনো খরের স্তুপ। অতিবৃষ্টিতে নতুন করে খর প্রস্তুত করে রাখাও সম্ভব হয়নি খামারী ও গৃহস্থদের। ফলে খাদ্য সংকটে পড়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার গরু, ২১ হাজার ২৪টি ছাগল, ১ হাজার ১০২ টি ভেরা। এসব পশুর মুখে খাবার দেয়া নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন মালিকরা।

তারা জানায় বন্যার আগে প্রতি একশ খরের আটির দাম ছিল ২শ থেকে ৩শ টাকা। অথচ এখন বিক্রি হচ্ছে ১২শ থেকে ১৩শত টাকায়। তবুও মিলছে না খর। এদিকে মাড়াই করা খরের দাম আরও বেশি। প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২শত টাকা দামে। অপরদিকে দাম বেড়েছে সব ধরনের পশু খাদ্যের। বাধ্য হয়ে গবাদি পশু বাঁচাতে বিলের কচুরিপানা, কচি কলাগাছ, বাঁশের পাতা, কাঁঠালের পাতার উপর ভরসা করছেন মালিকরা।

এ অবস্থায় খাদ্য সংকটে থাকা গবাদি পশু মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। খাদ্য সংকটের কারণে অনেকে স্বস্তা দামেই বিক্রি করে দিচ্ছেন তাদের গৃহপালিত পশু। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন পশু পালনকারীরা।

রায়গঞ্জ ইউনিয়নের মোশারফ হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানায়, যে খর ৫শ টাকায় কেনা যেতো সে খর একন ৭ হাজার টাকায় কিনেছেন তিনি। ঠিক মতো খাবার না পেয়ে তার গরুর চেহারা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই চরা দামে খর কিনতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। আব্দুল জলিল জানান, খরের অভাবে অনেকে কম দামেই গরু বিক্রি করছেন। তিনিওি খরের অভাবে কিছুদিন আগে কম দামেই গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। গুরু যে দামে কিনেছেন ১ বছর লালনপালন করার পর একই দামে সে গরু বিক্রি করতে হয়েছে তাকে।

নাগেশ্বরী পৌরসভার লোকমান হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানায়, টানা বৃষ্টির কারনে তার অনেক খর পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে তিনি এবার ৯ হাজার টাকার খর কিনেছেন। অথচ অন্য সময় এসব খরের দাম সর্বচ্চ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫শ টাকা। নারায়নপুর ইউনিয়নের করিম মিয়া বলেন, চরাঞ্চলের সব চারণভূমি বন্যায় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ঘাসের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই ধানের কুঁড়ো, খুদের ভাত দিয়ে চলছে তার চারটি মহিষের জীবন।

এদিকে খাবারের অভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে ছাগল-ভেরাগুলোও। এমন অবস্থার জন্য দীর্ঘমেয়াদী বন্যা আর টানা বৃষ্টিকেই দায়ী করছেন তারা।

গো-খাদ্যের সংকটের কথা স্বীকার করে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রফিকুল আলম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ইতোমধ্যে ২শ ৫০ পরিবারকে ৭ মে.টন পশুখাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া চলমান সংকটে থাকা ও ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি মো. হাফিজুর রহমান হৃদয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.