নটিংহ্যামে চার-ছক্কার বন্যায় ভেসে গেল ইংল্যান্ড

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে একবারেই ভিন্ন এক রূপে দেখা গেল ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সারির দলের কাছে ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ হওয়া পাকিস্তানকে। নটিংহ্যামে চার-ছক্কার তুফান বইয়ে দেয়া ম্যাচে লিভিংস্টোন শতক হাঁকালেও জয়ের হাসি হেসেছেন বাবর আজমরাই।
গতকাল শুক্রবার (১৬ জুলাই) প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ইংলিশরা। ব্যাটিংয়ে নেমে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। শুরু থেকেই বিধ্বংসী রূপ ধারণ করেন এ দুই ব্যাটসম্যান। পাওয়ার-প্লেতে ৪৯ রান সংগ্রহ করা পাকিস্তান দ্বাদশ ওভারেই পূর্ণ করে শতরান।
সেখানেই থামেননি দুজন, বরং ধারণ করেন আরও ভয়ানক রূপ। ইংলিশ বোলারদের তুনোধুনো করে পরের ৫০ রান তোলেন মাত্র ১৯ বল থেকে। অর্থাৎ দলীয় ১৫০ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান। আর ইংল্যান্ডকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন ডেভিড উইলি।
১৫৩.৬৫ স্ট্রাইক রেটে ৪১ বলে ৬৩ রান করে আউট হন রিজওয়ান। তবে এদিন পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা এতই বিধ্বংসী ছিলেন যে, দুই অঙ্কে পৌঁছানো পাঁচজনের মাঝে রিজওয়ানের এই স্ট্রাইক রেটও ছিল সর্বনিম্ন।
তার বিদায়ে ক্রিজে এসেই ঝড় তোলেন শোহাইব মাকসুদ। তবে ইনিংস লম্বা করতে পারেননি তিনি। টম কারানের বলে ২ ছক্কা আর ১ চার হাঁকিয়ে ৭ বলে ১৯ রান করে বিদায় নেন মাকসুদ। পরের ওভারে বিদায় নেন বাবর আজমও। শতক থেকে ১৫ রান দূরে থেকে ডেভিড উইলির দ্বিতীয় শিকার হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন কাপ্তান। তার ৪৯ বলে ৮৫ রানের ইনিংসে ছিল ৮ চার আর ৩ ছক্কার মার।
এরপর টর্নেডো গতিতে ৪৬ রানের জুটি গড়েন ফখর জামান ও মোহাম্মদ হাফিজ। দুজনই মারেন একটি করে চার আর তিনটি করে ছক্কা। হাফিজ ১০ বলে ২৪ রান করে ১৯তম ওভারে ও ফখর ৮ বলে ২৬ রান করে শেষ ওভারে আউট হন। যাতে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৩২ রান করে থামে পাকিস্তান। শেষ পাঁচ ওভারে ৭৭ রান সংগ্রহ করে দলটি।
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় ইংল্যান্ড। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে নিজের বলে নিজেই অসাধারণ এক ক্যাচ নিয়ে স্বাগতিক উদ্বোধনী জুটি ভেঙে দেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। ৬ বলে মাত্র ১ রান করে ফেরেন ডেবিড মালান। তবে অপর প্রান্তে বিধ্বংসী রূপ ধারণ করতে থাকেন জেসন রয়।

রয়কে সঙ্গ দিতে পারেননি জনি বেয়ারস্টো ও মঈন আলী। ৭ বলে ১১ রান করে শাহীনের গতির কাছে পরাস্ত হন বেয়ারস্টো। টাইমিংয়ে গড়বড় করে ক্যাচ দেন ইমাদ ওয়াসিমের হাতে। আর মঈন আলীকে সাজঘরে পাঠান মোহাম্মদ হাসনাইন, দারুণ ক্যাচ নেন হারিস রউফ। ফলে ৪৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ইংল্যান্ড।

তবে চতুর্থ উইকেটে রয়কে সাথে নিয়ে ৩৪ রান যোগ করে সেই চাপ সামলে নেন লিয়াম লিভিংস্টোন। ১৩ বলে ৩২ রান করে শাদাব খানের বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে রয় ফিরলেও অপর প্রান্তে চলতে থাকে লিভিংস্টোনের দানবীয় ব্যাটিং প্রদর্শনী। এসময় তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে থাকেন অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান।
দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ১৭ বলেই অর্ধশতক পূরণ করেন লিভিংস্টোন। মরগ্যানও তার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে গিয়েই ধরা পড়েন রউফের হাতে। ১৫ বলে ১৬ রান করেন অধিনায়ক। এরপর আর কেউ যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেনি লিভিংস্টোনকে। তবুও দুর্দান্ত এক শতক হাঁকান এই মারকুটে।
তবে বাকিদের ব্যাটে ঝড় না ওঠায় পুরো চাপটাই এসে পড়ে লিভিংস্টোনের ওপর। শতরান পূর্ণ করার পর ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে শাহীনের হাতে ক্যাচ দিলে সমাপ্তি ঘটে এক অসাধারণ ইনিংসের। ৯টি ছক্কা আর ৬টি চারের মারে মাত্র ৪৩ বলে ১০৩ রান তুলে আউট হন লিভিংস্টোন।
শেষ দিকে লুইস গ্রেগরি ১১ বলে ১০ আর ডেভিড উইলি ১১ বলে ১৬ রান করলেও তা শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমায়। পাকিস্তানি বোলারদের তোপের মুখে লোয়ার অর্ডার দ্রুত আউট হলে ২০১ রান তুলেই অলআউট হয় ইংল্যান্ড। ৩১ রানের জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে যায় সফরাকারীরা। ম্যাচ সেরার পুরষ্কার ওঠে শাহীন শাহ আফ্রিদির হাতে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.