নকশিকাঁথায় স্বাবলম্বী লালমনিরহাটের নারীরা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: সূক্ষ্ম হাতে সূঁচ আর রং-বেরঙের সুতায় গ্রামবাংলার বউ-ঝিয়েরা মনের মাধুরী মিশিয়ে নান্দনিক রূপ-রস ও বৈচিত্র্যের যে কাঁথা বোনেন, তা-ই নকশিকাঁথা।
জীবন ও জগতের নানা রূপ প্রতীকের মাধ্যমে ফুটে উঠে নকশিকাঁথায়। আবহমান কাল ধরে নকশিকাঁথায় যে শিল্পকর্ম ফুটে উঠেছে, তা বাংলার শিল্প, সংস্কৃতি, সমাজ ও প্রকৃতির প্রাচীন ঐতিহ্য। আর সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া এ নকশিকাঁথা বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করে সংসারে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ফিরিয়ে এনেছেন লালমনিরহাটের হতদরিদ্র নারীরা।
জানা যায়, সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসা নকশিকাঁথা শিল্প আজ লালমনিরহাটের অনেক নারীকে স্বাবলম্বী করে তুলছে। সংসারে ফিরিয়ে দিয়েছে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। শৌখিন মানুষদের কাছে আজও নকশিকাঁথার চাহিদা থাকায় সংসারের কাজের পাশাপাশি এ অঞ্চরের হতদরিদ্র নারীরা এ শিল্পকর্মের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে রেখেছেন, তৈরি করছেন নকশিকাঁথা। এতে একেকজন নারী মাসে আয় করছেন পাঁচ-ছয় হাজার টাকা। ফলে আগের মতো আর অভাব নেই সংসারে।
এবার মুদ্রার অপর পিঠটি দেখে নেওয়া যেতে পারে। নকশিকাঁথা শিল্পের সঙ্গে জড়িত এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করায় প্রসার ঘটাতে পারছেন না। আর কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি ও সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা না পাওয়ায় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের পড়তে হয় নানা সমস্যায়। সমস্যাগুলো দূর করতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে এ শিল্পটি।
নকশিকাঁথা তৈরি করেন এমন কয়েকজন নারী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের তৈরি কাঁথা ও চাদরের চাহিদা রয়েছে শৌখিন মানুষদের কাছে। তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক লোক এসে এখান থেকে কাঁথা ও চাদর কেনেন। তবে অর্থ সংকট থাকায় আমরা বেশি পণ্য তৈরি করতে পারি না। তাই যারা কাপড় ও সুই-সুতা আমাদের আগে কিনে দেয়, আমরা শুধু তাদের জন্যই ভালোভাবে কাঁথা তৈরি করতে পারি। তবে পুঁজি থাকলে আমরা অনেক ধরনের কাঁথা ও চাদর তৈরি করতে পারতাম, যা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা যেত।
লালমনিরহাটের বকুল ফুল যুব মহিলা সমিতির সভাপতি রশিদা বেগম মিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, নকশিকাঁথার চাহিদা থাকায় এ শিল্পের বাণিজ্যিক প্রসারে দরিদ্র এ অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতির চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে। কিন্তু বিপণন সমস্যার কারণে জেলার বাইরে বিক্রি হচ্ছে না এ অঞ্চলের নকশিকাঁথা। ফলে পিছিয়ে রয়েছে শিল্পটি।
জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা কার্যালয়ের প্রোগ্রাম অফিসার নাছিমা পারভীন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, এ অঞ্চলে যদি কোনো উদ্যোক্তা বা সংস্থা নকশিকাঁথা তৈরি করছে এমন নারীদের একত্রিত করে কাজ করেন, তাহলে পাল্টে যাবে এখানকার অর্থনৈতিক চিত্র।
লালমনিরহাট যুব উন্নয়ন অধিদফতরের জেলা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আকবর আলী খান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, এ শিল্পের উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগে গ্রামীণ নারীদের প্রশিক্ষিত করা প্রয়োজন। তাহলে গ্রামীণ নারীদের দারিদ্র্য দূর হবে, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান এবং টিকে থাকবে নকশিকাঁথার মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় ঐতিহ্য।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.