নওগাঁয় পাসপোর্ট অফিসের ভূমি অধিগ্রহণের টাকা বন্টন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ


নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের টাকা সুষ্ঠুভাবে বন্টন না করার অভিযোগ উঠেছে জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ শাখার) অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।

জমির মালিক ২৫ জন হলেও ১২জনকে গত ১৮ আগস্ট ভূমি অধিগ্রহণের পুরো অর্থ বাবদ প্রায় ২ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এতে অধিগ্রহনের টাকা থেকে ১৩জন বঞ্চিত হয়েছে। ঘটনায় গত ২২ আগষ্ট বঞ্চিতদের পক্ষ থেকে রতন হোসেন নওগাঁ জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেছেন।

বঞ্চিতরা হলেন:  রহিম উদ্দিনের ছেলে- মৃত উমর আলী মন্ডলের ছেলে হাসান আলী (রতন হোসেন), হাবিবুল্লাহ (স্বপন) ও মেয়ে রিতা আকতার, মৃত রেখা আক্তারের ছেলে আরিফুল। রহিম উদ্দিনের মেয়ে- লাইলী বেগম ও মৃত সুফিয়া বেওয়ার ছেলে বাবুল হোসেন, ফজলুর রহমান, আবুল কালাম আজাদ, আব্দুস সালাম ও মেয়ে হেনা, আলেফা, মাফুজা, মাসুদা।

 

জানা গেছে, নওগাঁ শহরের জেলা কারাগারের বিপরীতে চকপাথুরিয়া মৌজায় ৯১ নং দাগে যে ২৫ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ওই জমির ক্রয় সূত্রে মালিক ছিলেন নওগাঁ সদর উপজেলার কুমাইগাড়ি গ্রামের মৃত দৌলত মন্ডলের ছেলে রহিম উদ্দিন মন্ডল। রহিম উদ্দিনের মৃত্যুর পর মুসলিম ফারায়েজ অনুযায়ী তার স্ত্রী আমিরন বেওয়া (মৃত) এবং তিন ছেলে (আমির উদ্দিন মন্ডল, উমর আলী মন্ডল ও আব্দুর রাজ্জাক- সকলেই মৃত) ও দুই মেয়ে (লাইলী বেগম ও মৃত সুফিয়া বেওয়া) ওই জমির মালিকানা প্রাপ্ত হন।

নিয়ম অনুযায়ী সর্বশেষ প্রকাশিত রিভিশনাল সার্ভে বা আরএস খতিয়ানে রহিম উদ্দিনের স্ত্রী এবং তিন ছেলে ও দুই মেয়ের নাম উল্লেখ থাকার কথা। কিন্তু সেটেলমেন্ট দপ্তরের ভুলে আরএস খতিয়ানে রহিম উদ্দিনের দুই ছেলে আমির উদ্দিন মন্ডল ও আব্দুর রাজ্জাকের নাম প্রকাশ পাই। বিষয়টি জানার পর ২০১১ সালে নওগাঁ প্রথম সাব জজ আদালতে বাটোয়ারা মামলা (নং ৫৯/১১) মামলা করা হয়। মামলায় মৃত রহিম উদ্দিনের মেয়ে লাইলী বেগমসহ ১২ নাতী-নাতনী পক্ষভুক্ত হন।

স্থানীয় ভূমি অধিগ্রহণ অফিস থেকে ২০১৭ সালের প্রথম নোটিশ ইস্যু করা হয়। পরবর্তীতে আরও দু’টি নোটিশ ইস্যু করা হয়। তখন ১৩জন ওয়ারিশ ওই জমি নিয়ে আদালতে বাটোয়ারা মামলা চলমান থাকায় জমির ক্ষতিপূরণের অর্থ কাউকে পরিশোধ না করার জন্য নওগাঁ ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা জয়া মারীয়া পেরেরা কয়েক দফা শুনানী করেন। গত ২৭/০২/১৮ ইং তারিখে শুনানীতে জয়া মারীয়া পেরেরা বাটোয়ারা মামলা নিষ্পত্তি কিংবা বাদী-বিবাদী পক্ষের মধ্যে আপোষ মিমাংসা না হওয়া পর্যন্ত কাউকে জমি অধিগ্রহণের টাকা দেয়া হবেনা বলে জানানো হয়। পরবর্তীতে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা জয়া মারীয়া পেরেরা বদলী হয়ে যান এবং যোবায়ের হোসেন নামে এক কর্মকর্তা তার স্থলাভিষিক্ত হন।

মামলার বাদী পক্ষের লাইলী বেগম বিটিসি নিউজকে বলেন, যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে পৈত্রিক সূত্রে আমরাও তার মালিক। জমির বন্টন সংক্রান্ত বাটোয়ারা মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। যোবায়ের হোসেন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর তাকে বিষয়টি অবগত করা হয় এবং ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু তিনি তা আমলে না নিয়ে তড়িঘড়ি করে এবং আদালতকে অবজ্ঞা করা জমির মালিক ২৫ জন হলেও ১২জনকে গত ১৮ আগস্ট এক পক্ষের হাতে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ কোট ৯২ লাখ ৭২ হাজার টাকার চেক তুলে দেন।

জমি অধিগ্রহনের টাকা পেয়েছেন তাদের মধ্যে একজন মৃত আমির উদ্দিন মন্ডলের ছেলে ফেরদৌস রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, একটি পক্ষ মামলা করেছিল তা নিষ্পতির পর আমরা অধিগ্রহনের টাকা পেতে দেরি হয়েছে। আমরা যে জমির টাকা পেয়েছি তা থেকে ওই ১৩ জনের কোন সম্পর্ক নাই। তাদের জমি আলাদা স্থানে পড়ে আছে।

অভিযোগকারী রতন হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, ঘটনায় গত ২২ আগষ্ট বঞ্চিতদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করা হয়। কিন্ত অদ্যাবদি এ বিষয়ে বঞ্চিতদের কাউকে সংশ্লিষ্ঠ অফিসে ডাকা হয়নি। দ্রুত সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন তিনি।

এব্যাপারে জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, সঠিক নিয়ম মেনেই এবং আদালতের জিপির মতামত নিয়ে ক্ষতিপুরনের অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন অনিয়ম করা হয়নি। এরপরেও বাদি পক্ষরা যদি আদালতে মামলা করে রায় নিয়ে আসতে পারে। তখন পরিশোধিত অর্থ ফেরত এনে তাদের মাঝে বন্ঠন করা হবে।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো: হারুন অর রশীদ বিটিসি নিউজকে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নওগাঁ প্রতিনিধি মো: আব্বাস আলী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.