দেশ থেকে পাচার হয়েছে পাঁচ লাখ হাজার কোটি টাকা : রাশেদ খান মেনন


নিজস্ব প্রতিবেদক:  হজরত শাহ মুখদম (রু:) এর পূণ্য ভূমি শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির বিভাগীয় জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই বিভাগের অন্যান্য জেলা থেকে বিপুল পরিমাণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শ্রমজীবী,কৃষক,শ্রমিক,আদিবসি দলে দলে আসতে থাকে।

বিকাল পাঁচটায় জনসভা লোকে লোকারন্য হয়ে যায়। পাঁচটার দিকে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য জননেতা ফজলে হোসেন বাদশা।

তিনি তার বক্তব্যে দেশের খেটে খাওয়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কৃষক,শ্রমিক মেহনতি মানুষের কথা তুলে ধরেন।উত্তরাঞ্চল থেকে সারা দেশে খাদ্য দ্রব্য সরবরাহ করা হয়। অথচ এই অঞ্চলের মানুষদের কথা ভাবা হয় না।

দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি বলেছেন জিরো টলারেন্স এর কথা,দুর্নীতিবাজদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না।আপনার এই ঘোষণার বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

রাজশাহীর পদ্মা নদী আজ দখল হয়ে যাচ্ছে আপনি এই ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করুন। রেশম শিল্প চালু করুন।
ফজলে হোসেন বাদশা র বক্তব্য শেষ হওয়ার পর বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

দেশ থেকে পাঁচ লাখ হাজার কোটি টাকার উপরে পাচার হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

গতকাল শনিবার বিকেলে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে আয়োজিত বিভাগীয় জনসভায় অংশ নিয়ে এ মন্তব্য করেন মেনন। ২১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বিভাগীয় এ জনসভার আয়োজন করে ওয়ার্কার্স পার্টি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেনন বলেন, এক টাকা নয় দু’টাকা নয়, ২০১৪ সালে এক বছরে ৭৬ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। আমি বলি, আজকে সেই টাকার পরিমাণ পাঁচ লক্ষ হাজার কোটি টাকার উপরে। তা দিয়ে একটি বাজেট আমরা তৈরি করতে পারতাম। দুদক এ বিষয়ে কথা বলে না।

তিনি বলেন, যত টাকা পাকিস্তানিরা নিয়ে গেছে, তার চেয়েও বেশি টাকা এ ক’বছরে পাচার হয়ে গেছে। পার্লামেন্টে যখন ঋণ খেলাপিদের নাম প্রকাশ করা হয় তখন একই সঙ্গে অবশ্যই টাকা পাচারকারীদের নাম প্রকাশ করতে হবে। তখন আমরা দেখব, অনেক পরিচিত লোক রয়েছেন। অনেক পরিচিত নেতা রয়েছেন, যাদের কথা লুকানোর জন্যই নাম প্রকাশ করা হয় না।

মেনন আরও বলেন, প্রতিদিন ব্যাংক লুট হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক যখন দেওলিয়া হয়ে যাবে, তখন এর দায় নাকি নিতে হবে জনগণকে। কেন জনগণ ব্যাংক ডাকাতদের দায় নেবে?

দেশে এখন উন্নয়ন হলেও বৈষম্য বাড়ছে উল্লেখ করে মেনন বলেন, আজকে উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু বৈষম্য হচ্ছে পাহাড় সমান। আমাদের মাথাপিঁছু আয় ১৯০৯ ডলার। কিন্তু যারা দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করেন তাদের দৈনিক মাথাপিঁছু আয় এক ডলারেরও কম। এ বৈষম্য কেবলমাত্র অংকের হিসাবে নয়।

তিনি যোগ করেন, ৭৪ সালে আমাদের ছিল চারজন কোটিপতি। আর এখন আমাদের কোটিপতির সংখ্যা এক লক্ষ ২২ হাজার। কেবল কোটিপতি নয়, এরা কোটি কোটি কোটিপতি। তাদের জীবনযাপন, তাদের আয়েশ, তাদের বিলাস বাংলাদেশের যুবকদেরকে হতাশ করে।

চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযান নিয়ে তিনি বলেন, যখন কেউ ধরা পড়ে তখন বলেন, দল কোনো দায় নেবে না। তাহলে কে দায় নেবে? বনে থাকলে দাঁপিয়ে বেড়াবেন। আর বনের মধ্যে যখন অন্যায় করে ধরা পড়ে যাবেন তখন বলবেন, দায় নেব না। এ দায় নিতে হবে। যে সমস্ত ভোগবাদী নীতি আমার দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সেই নীতি বাদ দিয়ে আমরা স্লোগান তুলেছি ২১ দফার ভিত্তিতে নায্যতা-সমাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার প্রতি আস্থা রাখতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে সামাজিক ন্যায় বিচার, সমতা, মানবিক মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। আমরা সেই সংবিধানের পথে হাঁটতে চাই, চলতে চাই। দেশ উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে। ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হবে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হবে। তখন যেন আবার স্লোগান দিয়ে বলতে না হয়, কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না।

রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকুর সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। এতে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য মোস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি, মাহমুদুল ইসলাম মানিক ও কামরুল আহসান।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.