দীর্ঘ ৫৫ বছর পর চালু হলো চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুটে ট্রেন চলাচল

নীলফামারী প্রতিনিধি: দীর্ঘ ৫৫ বছর পর আবারও চালু হলো নীলফামারীর চিলাহাটির সঙ্গে ভারতের হলদিবাড়ীর রেলপথে ট্রেন চলাচল। দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে থাকা এই রেলপথ পুনরায় চালু হওয়ায় ঐ এলাকার মানুষজন খুশি। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর মানবাহি ট্রেন চলাচল শুরু হলেও তাদের এখন দাবী দ্রুত যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচলের।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে এগারটার সময় ভিডিও কনফারেন্সে এই রেল যোগাযোগের উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গণভবন থেকে শেখ হাসিনা এবং নয়াদিল্লি থেকে নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এসময় চিলাহাটিতে উপস্থিত ছিলেন রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, বানিজ্য মন্ত্রি টিপু মুন্সি,নীলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দীন,নীলফামারী -৩ আসনের সংসদ সদস্য আদিলুর রহমান, রেল সচিব সেলিম রেজা,নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরীসহ রেলওয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এবং অসংখ্যক উৎসুক জনতা।
দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্টানটি চিলাহাটী রেলস্টেশন সহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয়। আগত অতিথিদের জন্য স্টেশন চত্বরে তেরী করা হয় বিশাল প্যান্ডেল। দুপুর ১ টা ৩৫ মিনিটে চিলাহাটী রেলওয়ে স্টেশন থেকে বাংলাদেশের রেলের ইঞ্জিন সংযুক্ত ভারতের ৩০টি মালবাহি খালি ওয়াগন (বগি) ও ২টি গার্ড বগি নিয়ে ট্রেনটি ভারতের হলদিবাড়ীর দিকে রওনা হয়।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বাঁজি বাজিয়ে ও সবুজ ঝান্ডার সংকেত দিয়ে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন। ধীরগতিতে চলা ট্রেনটি চিলাহাটী রেলস্টেশন থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার রেলপথ ও মুক্তিরহাট সীমান্ত পেরিয়ে দুপুর ২টার পর হলদিবাড়ী রেলস্টেশনে পৌছে। নানা ফুল,রং,বেলুন ও ফেষ্টুনে সাজানো ছিল উদ্বোধনী ট্রেনটি।
ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ব্যানার। ট্রেনের চালক সহিদুল ইসলাম ট্রেনের হুইসেল বাজিয়ে যখন যাত্রা শুরু করেন তখন রেললাইনের দু’ধারে দাড়িয়ে থাকা হাজারো উৎসুক জনতা করতালি ও উল্লাস শুরু করেন। এসময় অনেকে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।
উদ্বোধনী ট্রেনটি দেখতে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের সীমান্তেও ছিল সে দেশের অসংখ্যক মানুষের ভীড়। এসময় দু’দেশের সীমান্তে কড়া নজরদারীতে ছিল বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যরা।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান এই অঞ্চলের ব্যবসা-বানিজ্যের প্রসার ঘটাতে বর্তমান সরকার পুনরায় এই রেলপথটি চালু করার উদ্যোগ নেন। তারেই ফলশ্রুতিতে আজ ট্রেন চলাচল শুরু হলো। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে এই রুটে যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচল করবে বলে তিনি জানান।
উদ্বোধনী ট্রেনের যাত্রা দেখতে আসা চিলাহাটী মাষ্টার পাড়ার অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য হবিবর রহমান, কৃষক নুর ইসলাম, মিজাগজ্ঞ গ্রামের শিক্ষক আমিনুর রহমান মান্নি,বউবাজারের কৃষক লুৎফর রহমান সহ অনেকে জানায় দীর্ঘ দিনের প্রতিক্ষার আজ অবসন হলো। এখন তাদের দাবী অচিরে যেন এই রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু করে।
সূত্র মতে,ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত ভারতে এই অঞ্চলের অন্যতম প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম ছিল চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুট। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে এই রেল রুটটি বন্ধ হওয়ার আগে এ পথে দার্জিলিং থেকে খুলনা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত নিয়মিত যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করতো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ও ভারত সরকার দুই দেশের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়ার রেল রুটটগুলো পুনরায় চালুর উদ্যোগের অংশ হিসেবে আজ চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেল যোগাযোগ শুরু হলো।
জানা গেছে চিলাহাটি-হলদিবাড়ীর রেল রুট চালুর ফলে আবারও এ পথে বাংলাদেশ থেকে নেপাল, ভুটান ও ভারতের অঙ্গ রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। এটি ঢাকা থেকে ভারতের দার্জিলিং যাওয়ার অন্যতম প্রধান রুটে পরিণত হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর জলঢাকা (নীলফামারী) প্রতিনিধি এরশাদ আলম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.