দিঘলিয়ার ঐতিহ্যবাহী সেনহাটি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন ২৮ ফেব্রুয়ারি

দিঘলিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি: দিঘলিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সেনহাটি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির ত্রিবার্ষিক নির্বাচন আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম দিকে প্রার্থী সংকট দেখা দিলেও শেষ অবধি দুইটা প্যানেলে মোট ২৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বাজার কমিটির নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বাজারটির নির্বাচন নির্ধারিত সময় থেকে প্রায় দুই বছর পর নির্বাচনের তফশীল ঘোষনা করা হয়েছে। বাজার কমিটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোল্লা ফারুখ হোসেনকে।
নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমাদানের তারিখ ছিল ৭ ফেব্রুয়ারি। প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি। এ নির্বাচনে ৩৯৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।
এবারে উক্ত বাজারের ত্রিবার্ষিক নির্বাচনে যে দুইটা প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে তারা হচ্ছে হাজী-নবী পরিষদ ও নজরুল-ইকরাম পরিষদ। যদিও দুইটা পদে একজন করে দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে ভোটাররা নানা সমস্যা ও অনিয়মের কারণে নতুন নেতৃত্বের দিকে ঝুকছে। নতুন নেতৃত্বের প্যানেল হলো হাজী-নবী পরিষদ। এ প্যানেলে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আলহাজ্ব এখতিয়ার শেখ (চেয়ার)।
তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হচ্ছেন: নজরুল-ইকরাম পরিষদের সাবেক সভাপতি মোল্যা নজরুল ইসলাম (আনারস)। হাজী-নবী পরিষদে সহ-সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক সহ-সভাপতি সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন (গোলাপ ফুল)।  তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী নজরুল-ইকরাম পরিষদের মোঃ জাকির মুন্সী (দেয়াল ঘড়ি)। হাজী-নবী পরিষদে সাধারণ সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হাফিজুর রহমান নবী (সাইকেল)।
তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নজরুল-ইকরাম পরিষদের মোঃ ইকরাম খান (হারিকেন) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী ফুয়াদ হাসান বাবু (তালাচাবি)। সহ সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হাজী-নবী পরিষদে মোঃ আকবর আলী (হরিণ)। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নজরুল-ইকরাম পরিষদের মোঃ ইমরাণ শেখ (কাস্তে) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ শাহিন হোসেন (মোরগ)।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে হাজী-নবী পরিষদ থেকে নির্বাচন করছেন শ্রী শ্যামল মন্ডল (আম)। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নজরুল-ইকরাম পরিষদের শ্রী শুনিল বিশ্বাস(মাছ)।
প্রচার সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হাজী-নবী পরিষদ থেকে মোঃ হায়দার আলী (টেবিল)। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নজরুল-ইকরাম পরিষদের মোঃ জব্বার শিকদার (টিউবওয়েলের)। দপ্তর সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হাজী-নবী পরিষদ থেকে মোঃ আবু তালেব(সিলিং ফ্যান)।
তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নজরুল-ইকরাম পরিষদের মোঃ মুরাদ হোসেন(ফুটবল)। কোষাধ্যক্ষ পদে হাজী-নবী পরিষদ থেকে মোঃ সবুজ শেখ (হাতি) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
এ ছাড়া ৪টি সদস্য পদের বিপরীতে ৬জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছকরছেন। তারা হলেন হাজী-নবী পরিষদ থেকে (১) মোঃ বাবলু (হাঁস), (২) মোঃ মহিউদ্দিন (হাতুড়ি) ও (৩) মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন (ফুল কপি)। নজরুল-ইকরাম পরিষদে (১) মোঃ আহাদ খলিফা (কাপ পিরিচ), (২) মোঃ কুদ্দুস মৃধা (কাঁঠাল) ও (৩) মোঃ শহিদুল ইসলাম (গাভী)।
সেনহাটি বাজারের হোল্ডিং বেদখল, নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, নিরাপত্তার অভাবসহ নানা কারণে বাজারের উন্নয়ন কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছিল। যদিও গত অর্থ বছরে সরকারিভাবে বাজার উন্নয়নের ব্যাপক কাজ হয়েছে।
বাজারের উন্নয়ন ও সমস্যা নিয়ে কথা হয় সেনহাটি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি ও নজরুল-ইকরাম পরিষদের সভাপতি প্রার্থী মোল্যা নজরুল ইসলাম। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, তার মেয়াদের মধ্যে সেনহাটি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির অফিস ছিল জরাজীর্ণ টিনের ঘর। আমরা সেটাকে তিনতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একতলা সমাপ্ত করেছি।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মারুফুল ইসলাম ও সেনহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী জিয়াউর রহমানের সহযোগিতায় আমরা ২৮ লক্ষ টাকা উন্নয়ন অনুদান পেয়েছি। সেটা দিয়ে আমরা মাছ বাজার শেড, মাংশ ও মুরগীর শেড, কাঁচা বাজার শেড করেছি। যেখানে ১০/১১ টা পাকা দোকান ঘর পাকা করা হয়েছে। যেটা বাজারের নিজস্ব সম্পদ। আমরা বাজারের পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন করেছি। ২টা পাকা টয়লেট ও পেশাবখানা করেছি। ঘাট সংস্কার কাজ করেছি। আমি ও আমার পরিষদ নির্বাচিত হলে আমরা বাজারের সকল প্রকার উন্নয়ন করব। নদীর ঘাটের আধুনিকায়নসহ ঘাটের পাশে মালামাল রাখার পাকা ঘর করব। পাশে এ জন্য আমাদের জায়গা ও ঘর আছে যেটা হোটেল হিসেবে ভাড়া দেওয়া আছে। বাজারের ড্রেন করা হবে। নদীর ঘাটের আধুনিকায়নসহ বাজারের পুরানো ঐতিহ্যবাহী ঘাট নির্মাণ করার চেষ্টা করব। বাজারের পরিবেশ শান্ত রাখা, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত রাখতে সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
সেনহাটি বাজার বণিক সমিতির ত্রিবার্ষিক নির্বাচনে হাজী-নবী পরিষদ থেকে সভাপতি প্রার্থী আলহাজ্ব এখতিয়ার শেখ, সহ-সভাপতি প্রার্থী সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হাফিজুর রহমান বাজারের সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তারা এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা সেনহাটি বাজার সন্ত্রাসমুক্ত, নিরাপদ ও মাদকমুক্ত রাখব। ব্যবসায়ী ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ করব। বাজারের প্রয়োজন এমন সকল উন্নয়ন তরান্বিত করব। বাজারের জলাবদ্ধতা নিরসনে আধুনিক ড্রেন করা হবে। পুরা বাজার সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় এনে সকল ক্যামেরা সচল রাখব। নৈশ পাহারা শক্তিশালী করা হবে। বাজারের ফেরত যাওয়া প্রকল্প ফিরিয়ে এনে বাজার উন্নয়ন করা হবে। ঐতিহ্যবাহী বাজার ঘাটটি নির্মাণ করা হবে। কাঁচা বাজার ঘাট ও মসজিদ সংলগ্ন ঘাটের ছাউনিসহ আধুনিকায়ন করব। বাজারের ভেতরের সকল রাস্তা পাকা করব।
সেনহাটি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির ত্রিবার্ষিক নির্বাচনে স্বতন্ত্র সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী গাজী ফুয়াদ হাসান বাবু বাজারের নানা সমস্যা ও উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে বাজারের সকল প্রকার উন্নয়ন করবেন। পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণ করবেন। বাজারের ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।
সেনহাটি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির ত্রিবার্ষিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান মোল্লা ফারুখ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত করা হবে।
এ কারণে আমরা দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুল আলম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মারুফুল ইসলাম, দিঘলিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ রিপন কুমার সরকার, দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খান নজরুল ইসলাম, প্রেসক্লাব, সেনহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী জিয়াউর রহমানকে সকল প্রকার সহযোগিতার জন্য পত্র দিয়েছি।
 ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাজার উন্নয়ন চাঁদা পরিশোধ করার জন্য নোটিশ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচনী বিধিমালা মেনে চলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর দিঘলিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি সৈয়দ আবুল কাসেম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.