টিউশনি হারিয়ে বিপাকে হাবিপ্রবির বহু শিক্ষার্থী 

হাবিপ্রবি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ইতিমধ্যেই স্থবির হয়ে পরেছে পুরো দেশ। লকডাউন হচ্ছে একের পর এক জেলা। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা পাশাপাশি বৃদ্ধি পাচ্ছে লাশের সারি। বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না নানা শ্রেনিপেশার মানুষ। ওষ্ঠাগত হয়ে গেছে খেটে-খাওয়া মানুষের জীবন।
এই যখন বাস্তবতা, তখন কাজ না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন অস্বচ্ছল ও দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। টিউশন বন্ধ থাকায় এসব শিক্ষার্থীরা তাই শঙ্কায় প্রহর গুনছেন মেস ভাড়া পরিশোধ সহ পারিবারিক নানা সমস্যা নিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক নির্ভর বিভিন্ন গ্রুপ ও সাংবাদিক সমিতি অফিশিয়াল গ্রুপে মেসভাড়া মওকুফের দাবী উত্থাপন করেছেন হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এ ব্যাপারে নেতিবাচক সাড়া দিয়েছেন মেস মালিকেরা, উপরন্তু চাপ দিয়ে যাচ্ছেন মেস ভাড়ার পরিশোধের জন্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংকট থাকায় অনাবাসিক শিক্ষাথীরা শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে বিভিন্ন মেস ও ভাড়া বাসাবাড়িতে বসবাস করে আসছেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ক্যাম্পাস। কবে খুলবে জানিনা। ততদিন পর্যন্ত কি মেস ভাড়া বহন করতে হবে আমাদের? পেটে খাবার নেই, তার উপর মেসভাড়া!’ মেসে না থেকেও যা পরিশোধ করতে হবে আমাদের’। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের কারণে মেসগুলো চলে, বৈশ্বিক মহামারীর মতো এমন দুঃসময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এভাবে টাকা নেওয়া একেবারেই অনুচিত ও অমানবিক। করোনার এ সময়টাতে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের মেসভাড়া মওকুফ করা দরকার’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফিশারিজ অনুষদের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের জেলা লকডাউন ঘোষণা করেছেন জেলা প্রশাসন প্রায় একমাস আগে। দিনমজুর বাবার হাতে নেই কোন কাজ। বাড়িতে থাকা সঞ্চয়ও প্রায় শেষের দিকে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে কারো কাছে হাতও পাততে পারিনা। এদিকে বারবার ফোন দিচ্ছে মেস মালিক’ ।
এদিকে বিজ্ঞান অনুষদের আরেক শিক্ষার্থী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ” টিউশনি করে একদিকে নিজের খরচ বহনের পাশাপাশি কিছু টাকা জমিয়ে বাসা পাঠাতাম। কিন্তু এখন সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। বাবার শারীরিক সমস্যা থাকায় ইদানিং দুঃচিন্তায় অসুস্থতা আরো বেড়ে গিয়েছে। পেট যেখানে লকডাউন মানে না সেখানে মেসভাড়া পরিশোধ করা বিলাসিতা মনে করছি “।
এদিকে করোনা মোকাবেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তার পাশাপাশি কাজ করছে শিক্ষার্থীদের নানা সংগঠন। এর মধ্যে রয়েছে করোনা মোকাবিলায় হাবিপ্রবিয়ানের পাশে হাবিপ্রবিয়ান, আভিমূখ্য, HEART, হাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা যখন অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ঠিক সে মুহূর্তে মেস মালিকদের ভাষ্য জানতে মেস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুনকে শিক্ষার্থীদের দাবীর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘একেবারে ছাড় দিতে রাজী নয় কোন মেস মালিক, তবে একান্ত নিডিদের হেল্প করবে’।
উক্ত বিষয়ে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. ইমরান পারভেজ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে অবগত হয়েছি শিক্ষার্থীদের এসমস্যার বিষয়ে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক সহ মেস মালিকের সাথে সভা করে সকলে যাতে উপকৃত হয় এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। আশাকরি খুব দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে “।
উল্লেখ্য যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর চিন্তা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হাবিপ্রবি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি মোঃ মিরাজুল আল মিশকাত। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.