টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে লাখ লাখ অশ্রুসিক্ত মুসল্লির আল্লাহ দরবারে ফরিয়াদের মধ্য দিয়ে আখেরি মোনাজাত সম্পন্ন

ঢাকা প্রতিনিধিআজ শনিবার সকাল ১১টা ৫ মিনিটে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি, হেদায়েত, হেফাজত, রহমত, মাগফিরাত, নাজাত, দেশ ও বিশ্ব মানবতার কল্যাণ কামনায় টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে লাখ লাখ অশ্রুসিক্ত মুসল্লির আল্লাহ দরবারে ফরিয়াদের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা জোবায়ের। মোনাজাত চলে দীর্ঘ ১৫ মিনিট প্রায়।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার পর ইজতেমার ময়দানের খিত্তা, রাজপথ, আশপাশের ভবন যে যেখান থেকে পরেছেন দুই হাত তুলে ইজতেমার মোনাজাতে শরিক হয়েছেন।

এর আগে সকালে পাকিস্তানি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ খোরশেদ উর্দূতে হেদায়েতি বয়ান করেন। পরে তা বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন।

বিশ্ব ইজতেমায় গভীর আবেগপূর্ণ আখেরি মোনাজাতে গোটা দুনিয়ায় পথভ্রষ্ট মুসলমানের সঠিক পথের দিশা এবং তাবলিগের কাজে সবাইকে নিয়োজিত হওয়ার তওফিক কামনা করে মহান আল্লাহ রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত প্রার্থনা করা হয়।

ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ কামনায় দেশ বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করেন। মহামহিম ও দয়াময় আল্লাহ’র সন্তুষ্টি লাভে আকুতি ব্যক্ত করেন। ধনী-গরিব, মালিক-শ্রমিক নির্বিশেষে সর্বস্থরের লাখ লাখ মুসল্লি সবকিছু ভুলে দু’হাত তোলে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেন।

জোবায়ের ও সাদ অনুসারীদের পৃথকভাবে পরিচালিত শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) একটানা ৪ দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দু’দিন করে তারা ইজতেমা পরিচালনা করছেন। প্রথম জোবায়ের অনুসারীদের আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকে ঢাকা ও গাজীপুরের আশ-পাশের জেলা থেকে হাজার হাজার মুসল্লি ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতে অংশ নেয়।

ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতে কাঙ্খিত আবেগঘন অযুত কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে রাহমানুর রাহিম আল্লাহর মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব। মনীব-ভৃত্য, ধনী-গরিব, নেতাকর্মী নির্বিশেষে সব শ্রেণী পেশার মুসল্লি। আখেরি মোনাজাতে লাখ লাখ মুসল্লি দু’হাত তুলে আল্লাহ কাছে আকুতি-মিনতি করেন। কৃতকর্মের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা, আত্মশুদ্ধি, দুনিয়ার সব বালা মুসিবত, বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি, দেশ ও বিশ্ব মানবতার কল্যাণ কামনায় দুই হাত তুলে মহান আল্লাহর দরবারে রহমত প্রার্থনা করেন।

এ সময় ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে মহামহিম ও দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় লাখ লাখ মুসল্লিরা আকুতি জানান। আল্লাহ দরবারে দু’হাত তুলে গুনাহগার, পাপী বান্দা প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চেয়ে কান্নায় বুক ভাসান হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলিম।

মোনাজতের সময় ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। জায়গা না পেয়ে হাজার হাজার মুসল্লি ময়দানের পাশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, কামারপাড়া সড়কসহ আশ-পাশের অলি-গলি, ফুটওভারব্রিজ, বাসা-বাড়ি, কলকারখানা, মার্কেট ও যানবাহনের ছাদে, তুরাগ নদে নৌকায় অবস্থান নিয়ে দুই হাত তুলে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।

এর আগে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা আসেন তুরাগ তীরে। ফজরের নামাজের পর থেকেই বিশেষ ট্রেন, বাসসহ বিভিন্নভাবে এসে ইজতেমা মাঠ ও তার আশপাশে অবস্থান নেন মুসল্লিরা।

বিশ্ব ইজতেমার আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে, তুরাগ তীরে একটানা ৪দিনব্যাপী ৫৪তম ইজতেমায় দু’টি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতসহ প্রথম দু’দিন ইজতেমা পরিচালনা করেন মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা। পরের দু’দিন সাদ অনুসারীরা ইজতেমা পরিচালনা করবেন। সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সাল থেকে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মাঠে মুসল্লিদের স্থান সংঙ্কুলান না হওয়ায় ২০১১সাল থেকে টঙ্গীতে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম বছর যারা (যে ৩২ জেলার মুসল্লি) টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতেন তারা পরবর্তী বছর সেখানে যেতেন না। ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার পাশাপাশি জেলায় জেলায় আঞ্চলিক ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.