ঝিনাই নদীর ‘পেটে’ বাজার, সঙ্গে ১৮ বাড়ি

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: ঝিনাই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ফতেপুর বাজারের অনেকাংশ। সঙ্গে নদী গিলে নিয়েছে ১৮টি বাড়ি। সব হারিয়ে নিঃস্ব এখন এসব পরিবার। মালামালসহ দোকান হারিয়ে অসহায় হয়েছে পড়েছেন দোকানিরা।
এ সবের সঙ্গে ফতেপুর-কুরণী পাকা সড়কটির কমপক্ষে ১০০০ ফুট নদী গর্ভে চলে গেছে। যার ফলে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার সঙ্গে ফতেপুরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গত ২০ জুন ওই এলাকায় ঝিনাই নদীর ভাঙন শুরু হয়। এরপর থেকেই চলছে ভাঙন। এতে একে একে বিলীন হয়ে গেছে ২০ দোকান, ১৮ বাড়িসহ সড়ক।
এখনো হুমকির মুখে ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফতেপুর ইউপি কার্যালয়, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, দোতলা সরকারি রয়েল মার্কেট বাজার, ফতেপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ভাঙনরোধে ব্যবস্থা না নিলে যে কোন সময় সরকারি-বেসরকারি এসব ব্যবস্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ফতেপুর বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী গবিন্দ পাল বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘ভাঙনে সব শেষ হয়ে গেছে। চোখের সামনে কয়েক মিনিটেই আমার দোকাটঘর ভেঙে নদীতে হারিয়ে গেল। বসে বসে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না।’
ঝিনাই নদীর এই ভাঙনে কুরনি-ফতেপুর পাকা সড়কের এক টাকার (হিলড়া) বাজার নামক স্থানে বেশ কিছু অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়েছে। ফলে উপজেলা সদরের সাথে এলাকার উত্তরাংশের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নদী গর্ভে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে নিঃস্ব মানুষগুলো এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পাননি বলে জানা গেছে।
বানকাটা গ্রামের ওমর শরীফ জানান, ইউপি চেয়ারম্যান ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদীর পার ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে বানকাটা ও ফতেপুর পালপাড়া গ্রামের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকা রাস্তাও ভেঙে নদীতে চলে গেছে।
ড্র্রেজার দিয়া বালু তোলায় ঝিনাই নদীর ফতেপুর এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে বলে মিনু রানী পাল, শংকরী পরানী পাল, জগৎ মায়া পাল, সাথী রানী পাল, রাধা রানী পাল, চায়না রানী পাল, কমলা রানী পাল অভিযোগ করেন।
তারা বলেন, ‘আমরা পাল বংশের মানুষ। পালেরা মইরা গেলে কার কি আসে যায়। নদী থ্যাইকে মেশিন দিয়ে বালু তুলে, মানা করলে মারতে আসে, পুলিশের ভয় দেখায়। এখন রাস্তার সাথে আমাদের বাড়িঘরও নদীতে চইলে গেছে। আমাগো দেখার কেউ নাই। আমাগো যাওয়ারও জায়গা নাই।’
সৌদি প্রবাসী শফিকুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে জানান, প্রবাস জীবনের অর্জিত সমস্ত অর্থ দিয়ে বাড়িটি করেন। মুহূর্তের মধ্যে ঝিনাই নদীতে চলে গেছে। এই বয়সে আর অর্থ উপার্জন করে বাড়ি করা সম্ভব নয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা ওই ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তারা বাজারের পূর্ব পাশের ৫০ মিটার এলাকায় ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করেছেন বলে জানা গেছে।
বালু তোলার বিষয়ে ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বিটিসি নিউজকে বলেন, এসিল্যান্ডের অনুমতি নিয়েই ওখানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হয়েছে। সব নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা বিনতে মতিন বিটিসি নিউজকে বলেন, ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর টাঙ্গাইল প্রতিনিধি লুৎফর রহমান উজ্জল। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.