জোরপূর্বক অন্যের জমি আ’লীগ অফিসের নামে রেজিষ্ট্রি করলেন এমপি পুত্র

 

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের বড়াইগ্রামে ভয়ভীতি দেখিয়ে অন্যের জমি জোর করে আওয়ামীলীগ অফিসের নামে রেজিষ্ট্রি করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আ’লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে আসিক আব্দুল্লাহ শোভন এবং তার ক্যাডারদের বিরুদ্ধে।

রেজিষ্ট্রি করে নেওয়া ওই জমিটি প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে রেজিষ্ট্রি করা হলে আপত্তি জানায় সাব রেজিষ্টার। পরে বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামীলীগের নামে জমিটি রেজিষ্ট্রি করে নেওয়া হয়।

জমির মালিক রুবেল হোসেন অভিযোগ করেন, হঠাৎ করে বাড়িতে উপস্থিত হয়ে এমপি ছেলেসহ আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতা কর্মি রুবেল তার বড়ভাই আব্দুর রহিম ও বোন রোজিনা বেগমকে জোর করে নাটোরে নিয়ে এসে দলিলে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়।

তারা অভিযোগ করেন, দলিলে কি লেখা হয়েছে তা তাদের জানতে দেওয়া হয়নি।বড়াইগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ইসাহাক আলী জানান, তিনি বড়াইগ্রাম উপজেলার বিশ্বরোড সংলগ্ন রয়না ভরট হাট এলাকায় ভরট মৌজার হাল ১৫৩২দাগের সাড়ে ৬ শতাংশ জমি কেনার জন্য রয়না এলাকার আব্দুল হকের ছেলে রুবেল ও তার অংশীদারদের সাথে ১১ লাখ ৮ হাজার টাকা দর দাম চুড়ান্ত করে বায়না দেন।

তার ইচ্ছা ছিল সেখানে একটি দ্বিতল বাড়ি তৈরি করে উপরে তিনি বসবাস করবেন এবং নিচের অংশ দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করবেন। কিন্তু নানা ব্যস্ততায় সে জমি রেজিষ্ট্রি করে নেয়া হয়নি। জমির মালিক বিশ্বস্ত হওয়ায় এ বিষয়ে তার মনে কোন দুশ্চিন্তা ছিলনা।

কিন্তু গত রোববার হঠাৎ করে নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের নির্দেশে তার ছেলে আসিক আব্দুল্লাহ শোভন, বড়াইগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক সাবান মাহমুদ, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস পারভেজ , বড়াইগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা মান্নানের ভাতিজা রুবেলসহ ৮/১০ জন সন্ত্রাসী জোর করে তার বায়নাকৃত জমির মালিক রুবেল, হামিদ ও রোজিনাকে জমি রেজিষ্ট্র করে দেওয়ার জন্য নাটোরে আসতে বলে।

কিন্তু তারা অস্বীকৃতি জানালে তাদের প্রাণ নাশের ভয়ভীতি দেখিয়ে নাটোরে নিয়ে আসা হয়।এ বিষয়টি ফোনে ইসাহাক আলীকে রুবেল জানালে তিনি বড়াইগ্রাম থানা পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেন। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ থানায় বসিয়ে রাখলেও পুলিশ কোন উদ্যোগ নেয়নি।

ফোনে তিনি এই জমিটি রেজিস্ট্রি না করার জন্য সাব রেজিস্টার ও পুলিশ সুপারের কাছে অনুরোধ করলেও কোন কাজ হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ তাকে কোন রকম সহযোগিতা করেননি।

রুবেল হোসেন জানান, সোমবার বেলা ১১ টার দিকে হঠাৎ করে এমপির ছেলে আশিক আব্দুল্লাহ শোভনসহ আওয়ামীলীগের ৮/১০জন নেতা কর্মি তাদের জোর করে নাটোরে নিয়ে এসে জমি রেজিষ্ট্র করে দিতে বাধ্য করেন। এসময় তিনি জমি রেজিষ্ট্রি করে দিতে অস্বীকার করলে সাবান তার মাথার ওপরে পা তুলে লাথি দেখায় এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে আমরা রেজিষ্ট্র করে দেই।

দলিলে কি লেখা হয়েছে তা তাদের পড়তে দেয়া হয়নি। রুবেল জানান, তিনি ও তার অংশীদাররা ইসাহাক আলীর কাছে থেকে ১১ লাখ ৮ হাজার টাকা নিয়েছেন।কিন্তু এমপির ছেলে শোভন ও আওয়ামীলীগের নেতা কর্মিরা যারা জোর করে জমি রেষ্ট্রি করে নিয়েছেন তারা কোন টাকা পয়সা দেননি।

নাটোর সদরের সাবরেজিষ্টার সামসুজ্জামান সরকার সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, তার কাছে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর নামে সাড়ে ৬শতাংশের এক খন্ড জমি রেজিষ্ট্র্রি দলির উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু যেকোন ভিআইপির নামে জমি রেজিষ্ট্রি পূর্বে তার অনুমতি দরকার বলে আপত্তি জানালে তারা বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামীলীগের নামে জমিটি রেজিষ্ট্রি করান।

তিনি বলেন, জমির মালিকদের জোর জবরদস্তি করা হয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না।বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলিপ কুমার দাস জানান, ইসাহাক আলীর সাথে এমপির দ্বন্দ্ব রয়েছে। তবে জমির মালিকের সাথে কোন সমস্যা হয়নি। জমির মালিককে থানায় ডেকেছিলাম, তাকে মারপিটের কোন কথা স্বীকার করেনি।

তাছাড়া জমির মোট দাম ১২লাখ টাকা, এখন পর্যন্ত ১১লাখ ৮হাজার টাকা দিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের নামে জমির মালিক জমি রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছে। তবে সংসদ সদস্যের ছেলে জমি দখল করে জোর পূর্বক জমি রেজিষ্ট্রি করেনি বলে দাবী করেন ওসি।

তবে এবিষয়ে এমপির ছেলে আসিক আব্দুল্লাহ শোভন বলেন, আমরা উপযুক্ত জমির দাম দিয়ে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছি। জোর পূর্বক দখল করিনি। কিছু ব্যক্তি আমাদের সুনাম নস্ট করার জন্য মিথ্যা অপ্রচার করছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.