জীবনের ঝুঁকিতে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা 

খুলনা ব্যুরো: করোনা ভাইরাস চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিনের চাহিদা ১০০ সেট পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট বা পিপিই। কিন্তু এসেছে ৭০ টি সেট। ফলে জীবনের  ঝুঁকি নিয়েই চিকিৎসা কার্যক্রম  চালাতে হবে  ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
বিশেষ করে সন্দেহজনক অবস্থায় কোন রোগী হাসপাতালে আসলেও তাকে যথাযথভাবে দেখভাল করা যাবে তার কোন সুযোগ নেই এ হাসপাতালে।
হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়,  করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট বা পিপিই সেট। ওই সেটের মধ্যে থাকার কথা ক্যাপ, গগল্স, এন-৯৫ কোডের মাস্ক, গাউন, বুট এবং গ্লোভস।
কিন্তু শুধুমাত্র গাউন, সার্জিক্যাল মাস্ক, সু কভার এবং ক্যাপ ছাড়া কিছুই আসেনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাও প্রতিদিন যেখানে চাহিদা প্রায় একশ’ সেট সেখানে মাত্র এসেছে ৭০ সেট। এতে ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালাতে হবে ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
সব মিলিয়ে অনেকটা নাজুক অবস্থার মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে করোনাভাইরাস সনাক্তকরণ ও চিকিৎসা পদ্ধতিটি। বিশেষ করে সন্দেহজনক অবস্থায় কোন রোগী হাসপাতালে আসলেও তাকে যে যথাযথভাবে দেখভাল করা যাবে তার কোন সুযোগ নেই এ হাসপাতালে।
এ অবস্থায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসকসহ হাসপাতালের সাথে সম্পৃক্ত সকলেই। বিশেষ করে অন্যান্য রোগী ও রোগীর দর্শনার্থীরাও ঝুঁকির বাইরে নেই।
খুমেক হাসপাতালের স্টোর কীপার মো: শরিফুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ৭০ সেট পিপিই সেট এসেছে ঢাকাস্থ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। যা হাসপাতালের আন্ত ও বহি:বিভাগে বরাদ্দ দেয়ার কার্যক্রম চলছে।
এছাড়া আজ শনিবার (২১ মার্চ) এক মাসের চাহিদা প্রস্তুত করে ঢাকায় পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল। এক মাসে অন্তত দু’হাজার একশ’ সেট পিপিই’র প্রয়োজন রয়েছে।
অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বহি:বিভাগের একজন চিকিৎসক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় আপাতত বহি:বিভাগকে সংকুচিত করার চিন্তা ভাবনা করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে  হাসপাতালের পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের নিয়ে একটি বৈঠকও হয়। বৈঠকে বহি:বিভাগকে আপাতত তিনটি বিভাগে বিভক্ত করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। মেডিসিন, সার্জারী ও গাইনী এই তিনটি বিভাগ ছাড়া অন্য সব বিভাগ বন্ধ রাখা হতে পারে।
তাছাড়া জ্বর, ঠান্ডা, কাশি নিয়ে আসা রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট করে চিকিৎসা সেবা দেয়ারও চিন্তা-ভাবনা চলছে। এজন্য ওই বিভাগের জন্য থাকবে আলাদা চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয়সহ অন্যান্য জনবল। যারা জ্বর, কাশি’র রোগীদের পিপিই সেট পড়েই চিকিৎসা দেবেন।
যদি সন্দেহ হয় যে, ওই রোগী করোনায় আক্রান্ত হতে পারে তাহলে তাৎক্ষণিক তাকে পাঠানো হবে ঢাকাস্থ আইইডিসিআরসহ সংশ্লিষ্ট চারটি প্রতিষ্ঠানে।
যে চারটি প্রতিষ্ঠানেই কেবলমাত্র করোনা সনাক্তকরণ যন্ত্র রয়েছে। আর খুলনায় পিসিআর মেশিন দেয়া হলে তার মাধ্যমে যদি করোনাভাইরাস সনাক্ত করা যায় তাহলে তাদের জন্য অন্য কোন জায়গায় পৃথক করে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সে ক্ষেত্রে ফুলবাড়িগেটের কলেরা হাসপাতাল অথবা যক্ষা হাসপাতালকে নির্ধারণ করা হতে পারে।
তখন ওই দু’টি হাসপাতালের রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে সেখানে শুধুমাত্র করোনা আক্রান্ত রোগীদের রাখা হতে পারে। যদিও সেটি হতে হবে করোনা সনাক্তকরণের জন্য পিসিআর মেশিন আসার পর।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা: এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ঢাকা থেকে যে পিপিই সেট পাঠানো হয়েছে তা’ দিয়ে মাত্র একদিন চলবে।
এজন্য নতুন করে চাহিদা প্রস্তুত করে গতরাতে হাসপাতালের দু’জন কর্মীকে ঢাকায় সিএমএসডিতে (কেন্দ্রীয় ওষুধ সংরক্ষণাগার) পাঠানো হয়েছে। এছাড়া খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাথেও যোগাযোগ করা হচ্ছে যাতে সেখান থেকেও কিছু পিপিই সেট পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু খুমেক হাসপাতালে করোনা সনাক্তকরণের জন্য পিসিআর মেশিন নেই সেহেতু কোন রোগীর ক্ষেত্রে সন্দেহ হলেই হয় তাকে ঢাকায় পাঠানো হবে। অথবা তার শরীর থেকে রক্তের স্যাম্পল নিয়ে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে।
সেক্ষেত্রে ওই রোগীকে আইসোলেশনে রাখা হবে খুমেক হাসপাতালের আইসিইউ ভবনের দোতলায়।
তবে ঝুঁকি এড়াতে হাসপাতালের বাইরের কোন একটি পৃথক স্থান খোঁজা হচ্ছে উল্লেখ কওে হাসপাতালের পরিচালক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, জায়গা পেলেই দ্রুত সেখানে স্থানান্তর করা হবে।
উল্লেখ্য, কোন ব্যক্তি আজ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার শরীরে শুধুমাত্র উপসর্গ দেখা দেবে ১৪ দিন পর। অর্থাৎ ওই ১৪ দিন পর যদি তিনি সনাক্ত হন যে, তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তখন তাকে চিকিৎসা দেয়া হলেও এর আগে ওই ১৪ দিনে তিনি যেসব স্থানে গিয়েছেন যাদের সংস্পর্শে গিয়েছেন প্রত্যেকেই করোনায় আক্রান্ত হবেন।
অর্থাৎ এটি যে কতটা ভয়ানক তা অনুমান করা খুবই কঠিন। এজন্য সচেতনতা ছাড়া এ থেকে বাঁচার উপায় কম বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.