জন্মদিনে ভালোবাসায় সিক্ত হাবিপ্রবি উপাচার্য

হাবিপ্রবি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: জন্মবার্ষিকীতে শিক্ষক, কর্মকর্তা,কর্মচারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মু. আবুল কাসেম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) হাবিপ্রবির উপাচার্যের বহুমুখী উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায় আজ মঙ্গলবার (১৬ জুন) দিবাগত রাত থেকে ।
অধ্যাপক ড. মু. আবুল কাসেম ১৯৫৩ সালে বৃহত্তর রংপুর জেলার হাতীবান্ধা থানার বড়খাতা ইউনিয়নের আরাজী শেখ সুন্দর গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি এক কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর মেয়ে বর্তমানে স্বামীসহ অস্ট্রেলিয়াতে বসবাস করেন।
তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে বি.এসসি. এজি. (অনার্স) ডিগ্রি ও ১৯৭৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিভাগ থেকে এমএসসি (এজি এক্সস্ট এড) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি যুক্তরাজ্যোর রিডিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট-এ লেকচারার এবং ১৯৮১ সালে কৃষি সম্প্রসারণ ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৯৩ সালে তিনি অধ্যাপক পদে যোগদান করেন।
১৯৭৯ সালে তিনি “সম্প্রসারণ শিক্ষা, প্রশাসন ও তদারক” বিষয়ের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উইসকাসিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গমন করেন। ১৯৯৭-৯৮ সালে তিনি জেএসপিএস ফেলোশিপ নিয়ে জাপানের হিরোশিমা ইউনির্ভাসিটিতে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা কর্ম সম্পাদন করেন।
বিশ্বব্যাংক, ব্রিটিশ কাউন্সিল, ডিএফআইডি (ইউকে), ওয়াল্ড-ফিশ সেন্টার, এএআইডিএ অস্ট্রেলিয়ার আর্থিক সহায়তায় ১৫টি গবেষণা প্রকল্পের মূল গবেষক হিসেবে গবেষণা সম্পাদনা করেন। মোট ১২ জন ছাত্র তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রি ও ৫০ জন এর বেশি ছাত্র-ছাত্রী এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন।
আর্থ সামাজিক, যোগাযোগ, প্রশাসন, জেন্ডার ডেভেলপমেন্ট ও উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়ন বিষয়ে তিনি ১৫টি সংস্থায় কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগ এবং ভাষা বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ কেন্দ্র (বাউএক), কৃষি মিউজিয়াম, ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এ্যসুর্যান্স সেল (আইকিউএসি) এর পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কনফারেন্স ও ওয়ার্কশপ ও অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানী, জাপান, নেদারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, দক্ষিন কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ তিনি ২৪টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। দুইটি টেক্সট বই প্রকাশসহ আরো ৭টি সংকলিত বইয়ে তার লেখা প্রকাশিত হয়।
আন্তর্জাতিক জার্নালে ৩৪টি এবং দেশীয় জার্নালে তার ১৪৩টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তার ২৫টি গবেষণামূলক টেকনিক্যাল রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে এবং ৯টি পপুলার আর্টিকেল বাংলাদেশ অভজারভার ও ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ জার্নাল অব এক্সটেনশন এর এডিটর হিসেবে ৪ বছর ও প্রগ্রেসিভ এগ্রিকালচারিস্ট জার্নাল এর এডিটর হিসেবে ২ বছর দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ এক্সটেনশন সোসাইটির সভাপতি হিসেবে ৪ বছর দায়িত্ব পালন করেন। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয়ে উপাচার্য হিসেবে যোগদানের আগে তিনি বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পে কোয়ালিটি এ্যাসুর্যান্স স্পেশালিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
অধ্যাপক ড. মু. আবুল কাসেম হাবিপ্রবির দায়িত্ব নেয়ার পর নানা সমস্যায় জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়কে আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রত্যাশার কথাগুলো আজ বাস্তবায়িত। শতবাধা উপেক্ষা করে দায়িত্বের ৪ বছর শেষ হওয়ার আগেই সেশনজট অনেকটা কমিয়ে এনেছিলেন।
বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারনে আবার সেই অংশে বাধার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশামত প্রতিবছর করেছেন আন্তঃবিভাগ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,বৃক্ষ মেলা,হল ফেস্ট, বই মেলা,স্থাপত্য প্রদর্শনীসহ বিতর্ক প্রতিযোগিতা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের গুনগত শিক্ষাগ্রহণে অধ্যয়নের পরিবেশ এবং লেখাপড়ার মান কে করেছেন আরও মানসম্পন্ন।
বিশ্ববিদ্যালয়কে সাজিয়েছেন আধুনিক স্থাপত্য শৈলী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী,কর্মকর্তাদের পরিবহনের জন্য তাঁর মেয়াদে মাত্র সাড়ে তিন বছরে পরিবহন পুলে যুক্ত হয়েছে ১৩ টি যানবাহন ।
একাডেমিক ল্যাবগুলো পেয়েছে নতুন যন্ত্রপাতি,সৃষ্টি হয়ে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম। আবাসন ও শ্রেনী সংকট কমাতে নির্মিত হচ্ছে ১০তলা বিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন ও ৬ তলা বিশিষ্ট ছাত্রী হল। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের গুনগত শিক্ষাগ্রহণে অডিটোরিয়ামে করেছেন সভা- সেমিনার। শিক্ষক,কর্মকর্তাদের আরও বেশি দক্ষ করে গড়ে তুলতে করেছেন নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। যা আগে হাবিপ্রবিতে অবহেলিত ছিল।
কৃষি গবেষণা কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে করেছেন “কৃষি,মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ গবেষণা কমপ্লেক্স” প্রতিষ্ঠা । এ গবেষণা কমপ্লেক্সে ডেইরি, পোল্ট্রি,মৎস্য, এবং শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবেষণা করা হয়। বৃহত্তর দিনাজপুরের কৃষক পরিবারের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে “ভ্রম্যমান ভেটেনারি ক্লিনিক” চালু করেন তিনি।
কৃষক পরিবারের গৃহপালিত গবাদি পশু প্রাণীর চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে সকল সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন অত্যাধুনিক ভ্রাম্যমান ভেটেনারি ক্লিনিকটি হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বাংলাদেশে শুরু করে। তার এই উদ্যোগের ফলে বৃহত্তর দিনাজপুরের কৃষক পরিবারগুলো অত্যন্ত উপকৃত হচ্ছে।
বৃহত্তর দিনাজপুরের কৃষকদের কৃষি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন “কৃষক সেবা কেন্দ্র” । উপাচার্যের বাস্তবায়িত এই উদ্যোগও বাংলাদেশে প্রথম‌। বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের চাকরি, পিএইচডি, ফেলোশিপ, বিদেশে স্কলারশিপ ইত্যাদি সেবা এবং পরামর্শের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে “ক্যারিয়ার এডভাইজারী সার্ভিস” তিনি নিজ হাতে শুরু করেন। এই সার্ভিস এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রী বৃন্দ তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সঠিক দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন।
সাড়ে তিন বছরের ব্যবধানে হাজারো শিক্ষার্থীর মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন অধ্যাপক ড.মু.আবুল কাসেম। আজ উপাচার্য ও শিক্ষার্থীদের প্রিয় শিক্ষক ড.মু.আবুল কাসেম এর জন্মদিন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ভার্চুয়াল ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন তিনি। কেউ ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, আধুনিক হাবিপ্রবি স্বপ্নদ্রষ্টা, অনুপ্রেরনার বাতিঘরসহ নানান দৃষ্টিনন্দন শব্দশৈলী। সবশেষে ” সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে উপাচার্যকে জানিয়েছেন জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তা শুভ জন্মদিন স্যার । শুভ হোক আপনার আগামীর দিনগুলো “।
অন্যদিকে, সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড.মু.আবুল কাসেম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, “ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোবাসাই আমার কাজের শক্তি।সবার শ্রদ্ধা,ভালোবাসা নিয়ে আমি আমার জীবনের বাকী সময়টুকু কাটাতে চাই।
আর যে কয়েকদিন দায়িত্বে আছি সেই কয়টা দিনকে আমি কাজে লাগাতে চাই।শিক্ষক, শিক্ষার্থী,কর্মকর্তা ও কর্মচারী সকলকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। হাবিপ্রবিকে আধুনিক ও আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করতে চাই।আমার এই উন্নয়নের কাজে সবাইকে আমি পাশে চাই। সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশা করি “।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হাবিপ্রবি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি মোঃ মিরাজুল আল মিশকাত। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.