ছেলে কোথায়? জানতে চেয়ে বৃদ্ধা মা’র চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: প্রায় ১৫ বছর আগে মা-বাবার অমতে ছেলে বিয়ে করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আলাতুলি ইউনিয়নে। বিয়ের কিছুদিন পর হতে ছেলে তার শ্বশুর বাড়িতে থাকা শুরু করে। ছেলের এমন আচরণে মা-বাবা কষ্ট পেলেও নিরবে সয়ে গেছেন। কিন্তু গত ৪ বছর আগে ২০১৭ সালে হঠাৎ বৌমা ফোন দিয়ে জানায়, তাদের ছেলে বিএসএফ এর গুলিতে মারা গেছে। লাশ নিতে হলে আপনাদের আসতে হবে। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে মার।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় জানতে পারে ঘটনা সত্যি নয়। বৌমা টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য চালাকি করেছে। তিক্ততার সৃষ্টি এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ছেলের সন্ধান চেয়ে মা একটি অভিযোগ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তার কারণে সে মামলা খারিজ করে দেয় মহামান্য আদালত। উল্টো পুলিশ বাদি হয়ে মাকে আসামী করে মামলা করে। সে মামলাতে মা মুক্তি পায়। তারপর বৌমা বরকে, বরের মা-বাবাকে আসামী করে যৌতুকের মামলা করে। সে মামলা এখনও চলমান। গত ৪ বছরে এত ঘটনা ঘটে গেলেও অদ্যাবধি ছেলের মুখ দেখতে পায়নি মা। এসব ঘটনা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলন করেন, রাজশাহীর তানোর উপজেলার কুঠিপাড়া গ্রামের তোফাজ্জল ইসলামের স্ত্রী মোসাঃ খাদিজা বেগম (৫৫)।
আজ রোববার (২৯ আগষ্ট) মডেল প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনে মা খাদিজা বেগম বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে আমার ছেলে আফজালের (৩৭) সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আলাতুলি ইউনিয়নের বকচর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের মেয়ে রোকশানার (৩২) বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই আমার ছেলে তার শ্বশুর বাড়িতেই (ঘর জামাই) থাকে। তার জাতীয় পরিচয়পত্রে শ্বশুর বাড়ির ঠিকানা দেয়া আছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বৌমা রোশনারা জানায়, আপনার ছেলে আফজাল বিএসএফ এর গুলিতে মারা গেছে। ছেলের লাশ নেয়ার জন্য আলাতুলি সিমান্তে গিয়ে খোঁজ নিলে; জানা যায় সেদিন কাউকে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করেনি।
কান্নাজড়িত কন্ঠে মা খোদেজা জানায়, তারপর থেকে অদ্যাবধি আমার ছেলে আফজালের খোঁজ মিলেনি। খাদিজা জানান, আমার ছেলের খোঁজ চাইতে বার বার বৌমা রোশনারার পরিবারের কাছে বারবার শরনাপন্ন হই। কিন্তু ছেলের কোন খোঁজ না দিয়ে উল্টো বৌমা রোকশানা আমাদের ৩ জনের বিরুদ্ধে (আমিসহ আমার স্বামী তোফাজ্জুল ও নিখোঁজ ছেলে আফজাল) যৌতুকের মামলা দায়ের করে। আমি জামিনে মুক্তি পেলে, আমার স্বামী আর ছেলে জামিন পায়নি। তারা বর্তমানে পরোয়ানাভুক্ত (ওয়ারেন্ট) আসামি হয়ে পলাতক জীবন যাপন করছে। আদালতের নির্দেশে তানোর থানা পুলিশ চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আমার বাড়ির মালামাল জব্দ (ক্রোক) করে।
খাদিজা আরও জানান, আমার ছেলের খোঁজ না পেয়ে রোশনারাসহ তাদের পরিবারের মোট ৬ (ছেলের বউ) জনের বিরুদ্ধে অপহরনের মামলা দায়ের করেছি। তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার করা মামলায় ৬ জন আসামিদের সাথে যোগসাজস করে এবং সুবিধাভোগ করে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষি দেয়। অতঃপর বিজ্ঞ আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়। পরে ওই তদন্তকারী কর্মকর্তা কোর্টে আমার বিরুদ্ধে অপহরণের মামলাটি মিথ্যা বলে, একটি মামলা করেন। তার করা মামলার ভিত্তি না থাকায়, আদালত আমাকে সেই মামলায় মুক্তি দেয়। আমি পরের বাড়িতে ঝি এর কাজ করে সংসার চালায়। এসকল ঘটনায় আমি স্বর্বশান্ত হয়ে পড়েছি। আমি আদালত থেকে মুক্তি পেলেও মন থেকে মুক্তি পাইনি, আমি আমার ছেলের খোঁজ চাই, আর আদালত থেকে যৌতুকের মিথ্যা মামলা থেকে পরিত্রাণ চাই।
এবিষয়ে জানতে বৌমা রোসনারার সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। আলাতুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান কামাল বলেন, ছেলে এবং মেয়ে সম্পর্কে খালাতো ভাইবোন। তাদের দুই পরিবারের মধ্যে ঝামেলা চলছে বলে জানেন তিনি। তবে তিনি তাদের কোন শালিসে যোগ দেন নাই। এবিষয়ে ছেলে ও মেয়ের মামা কামরুল এবং সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল বিস্তারিত বলতে পারবে। মামা কামরুল ইসলামের মোবাইলে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.