চেয়ারম্যান মামুনের অত্যাচারে অতিষ্ট ২ শতাধিক জেলে পরিবার, অবৈধ চাঁদা আদায়, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বিলকুজাইন দিয়ে চলাচলে স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় ও দাবীর অভিযোগ উঠেছে।

এনিয়ে থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগও হয়েছে। তবে জেলেদের অভিযোগ মাছ ধরতে পোরশা থানা এলাকায় বিলে যেতে মোটা অংকের চাঁদা দিতে হয়েছে, বর্তমানে চাঁদা দিতে রাজি হওয়ায় উল্টো তাদের উপর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানী করছে প্রকৃত মৎস্যজীবী না হয়েও ভূয়া মৎস্য সমিতির নামে লিজ নেয়া বিলকুজাইন এর ইজারাদাররা।

প্রতিকার চেয়ে গোমস্তাপুর থানায় ১২ অক্টোবর/২০ জেলেরা অভিযোগ করলেও ১৩ অক্টোবর/২০ করা ইজারাদারদের করা অভিযোগে জেলেদের মধ্যে একজনকে পুলিশ আটক করে এবং আদালতে সোপর্দ করে।

অবশ্য আটক জেলে আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। সরকারীভাবে পরিচয়পত্রধারী জেলেরা দিন আনে দিন খায়, খেটে খাওয়া জেলেদের উপর অত্যাচারের বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো ইজারাদারদের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগী জেলেরা।

জেলে ও ইজারাদার উভয়ের অভিযোগ ও সরজমিন ঘুরে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বিলকুজাইন প্রকৃত মৎস্যজীবী না হয়েও ভূয়া মৎস্য সমিতি ‘উন্নয়ন প্রকল্প’র নামে ‘দুবইল মৎস্যজীবী সমিতি’র নামে লিজ নেয় ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে বঙ্গাব্দ ১৪২২ থেকে ১৪২৭ পর্যন্ত সরকারের আওতায় থাকা ৮১.২৬ একর (বিলকুজাইন (ক) এর দাগ নম্বর-১, ৩১, ৬১, ২৪৩, ২৪৫, ২২৪, ২২৫, ১৫১৯, ১৭৩৮, ১৬০৭, ৫১৮, ২০১৭, ৬৯৩, ৬৯৬, ৭৬৮, ৭৬২, ৭৭২, ৭৪১, ৭৪৭, ৫৯১, ৫৯৯, ১৮০৪, ১৮২২, ১৮১৩, ১৭৯৬, ১৭৯৯, ১৬৪৬, ১৬৪৯, ১৬৫৫, ১৭৩২, ১৭৭৫, ১৭৭৪, ১৭৭৭, ১৭৮৩, ১৭৮৫, ১৭৮৬, ১৭৬২, ১৬৭৮, ১৬৮২, ১৬৭১, ১৭৫১, ১৭৫২, ১৭২১, ২০১৫, ২০২৮, ২০৩৪, ২০৪৩, ২০৭২, ২০৭৩, ২০৭৬, ২০৮১, ২০৮৬, ২০৯৬, ২১১৪, ২১১৭, ১১২৮, ২১৪৯, ২১৬৮, ২১৮২, ২১৮৬, ২১৯৫, ২১৯৮, ২২০১, ২২১৪, ২২৩৪, ১৬৬৬ এবং (ভাটুসিংড়া) (খ) এর দাগ নম্বর-২৬, ৫০, ২৬/১২৪, ২৬/১২৫, ৪৪।

সমিতির সভাপতি মো. মফিজ উদ্দিনের নেতৃত্বে বিলকুজাইন এ মাছ চাষ করে আসছে। রাধারনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মামুনুর রশিদ এর প্রায় অর্ধেক অংশ রয়েছে এবং তাঁর নেতৃত্বেই বিলকুজাইন পরিচালনা হচ্ছে এমন কথা সমিতির সদস্যরা ও স্থানীয় জেলেরা বললেও স্বীকার করতে নারাজ চেয়ারম্যান মামুন।

ইজারা নেয়া এলাকায় (নালা) মাছ চাষ করলেও বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধি হয়ে পুরো ভেসে যায় বিলটি। বর্ষায় হাজার হাজার বিঘা জমিতে পানি থাকে। ফলে পাশর্^বর্তী নওগাঁ জেলার পোরশা, ভারতের কিছু অংশ নিয়ে বিলে পানি একত্রিত হয়ে যায়। বর্ষায় বিলকুজাইন এর সীমানা নিয়ন্ত্রণেও থাকে না। এই ভাসমান বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে স্থানীয় জেলেরা।

কিন্তু বিলকুজাইন দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাইরে মাছ ধরতে নৌকা নিয়ে যাতায়াতের জন্য স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে সমিতির সভাপতি মো. মফিজ উদ্দিনের নেতৃত্বে বিলকুজাইন এর ইজারাদাররা।

জেলেদের সরজমিন অভিযোগ, সমিতির নামে বিলকুজাইন লিজ নেয়া হলেও রাধানগর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ এর নেতৃত্বে চলছে চাঁদা আদায়, বিল নিয়ন্ত্রণসহ সবকিছু। মামুন চেয়ারম্যানের নির্দেশেই এলাকার সরকারী কার্ডধারী এবং ইউপি চেয়ারম্যানের দেয়া পরিচয়পত্রধারী জেলেদের উপর অমানষিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এলাকার জেলেদের পরিবারের মহিলাসহ অন্যান্য লোকজনের উপরও অত্যাচার চালাচ্ছে মামুন চেয়ারম্যানের লোকজন ও সমিতির সদস্যরা।

ফলে চরম অনিশ্চয়তা ও দূর্বিসহ জীবন যাপন করছেন জেলে পরিবারগুলো। এসব অভিযোগ দিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করে এলাকার জেলে আব্দুস সালাম।

লিখিত অভিযোগে এপর্যন্ত জেলেদের কাছ থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেছে সমিতি এবং বর্তমানে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা না দেয়ায় জেলেদের বিল কুজাইন দিয়ে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে এলাকার ২ শতাধিক জেলে পরিবার।

অন্যদিকে, জেলেদের অভিযোগ, চাঁদা দিয়েই শেষ নয়, মাছ ধরে আসার সময় নৌকায় থাকা সেরা মাছটিও উঠিয়ে নেয় মামুন চেয়ারম্যানের লোকজন।

অন্যদিকে, জেলেদের অভিযোগের পরই সমিতির সভাপতি মফিজ উদ্দিন স্বাক্ষরিত গোমস্তাপুর থানায় পাল্টা একটি এজাহার জমা দেয় জেলেদের বিরুদ্ধে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা ও জোরপূর্বক ১’শ মন মাছ মেরে নেয়ার অভিযোগ দিয়ে।
প্রেক্ষিতে জেলেদের মধ্যে মো. সাজাহান আলীকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ।

এলাকার জেলে পরিবারগুলোর মাঝে চরম আতংকের সৃষ্টি হয়। এঘটনায় হতবাক হয়ে যায় জেলে পরিবারগুলো। জেলে পরিবারের সদসদের অভিযোগ, যে দরিদ্র জেলেরা মাছ ধরে দিন চালায়, তারাই বিলের ১’শ মন মাছ মেরে নেয়া বা ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবীর বিষয়টি নিয়েও চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে জেলেদের পরিবারের মাঝে।

এছাড়াও এলাকার পাতিহাঁস খামারী তোফাজ্জলের ২টি খামারে ১২’শ ও ১৭’শ পাতিহাঁস নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন। বিলের পানিতে হাঁস চরিয়ে খামার গড়ে তুললেও বর্তমানে বিলে পাতিহাঁসগুলো নামতে দিচ্ছেনা মামুন চেয়ারম্যানের লোকজন ও ইজারাদাররা। ফলে প্রায় ২ হাজার ৯’শ পাতিহাঁস নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে পাতিহাঁস খামারী মো. তোফাজ্জল হোসেন।

পাতিহাঁস খামারী মো. তোফাজ্জল হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ৩ জন বেকার যুবক মিলে পাতিহাঁসের খামার গড়ে তুলেছি এবং বিলকুজাইন এলাকায় পাতিহাঁসের চাষ করছি। বিলের পানিতে পাতিহাঁসগুলো ছেড়ে দিলে সামুক খায় এবং সাঁতার কাঁটে। বিলের মাছের কোন ক্ষতি করে না।

উল্টো পাতিহাঁসের বিষ্টা মাছের খাবারের কাজে লাগে। তারপরও মামুন চেয়ারম্যানের লোকজন ও সমিতির ইজারাদাররা বেশ কিছুদিন খেকেই হাঁসগুলো বিলের পানিতে ছাড়তে বাধা দিচ্ছে। সম্প্রতি কয়েকদিন থেকে জোরালোভাবে বিলে ভাসমান পানিতেও হাস ছাড়তে সরাসরি নিষেধ করেছে।

আজ শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) সকালেও জোরালোভাবে হুমকী দিয়েছে, আগামীকালের মধ্যে বিল এলাকা থেকে পাতিহাঁসগুলো নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য। সরকার বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য নানাভাবে সহযোগিতা করছেন, আর স্থানীয় চেয়ারম্যান ও তাঁর ছত্রছায়ায় লোকজন আমাদের খামার ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে। এভাবে খামারের হাঁসগুলো অন্যস্থানে নিয়ে গিয়ে খামার করা সম্ভব নয়, আমাদের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। তিনি খামার রক্ষায় বিষয়টির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবী জানান।

নওগাঁ জেলার পোরশা থানার বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, পাশর্^বর্তী এলাকার গরিব অসহায় জেলেরা মাছ ধরতে আসে ভাসমান বিল দিয়ে। আমার নিজেরই প্রায় ১’শ একর জমির উপর পানি ভাসমান। এছাড়াও এলাকার অনেক মানুষের নিজস্ব জমির উপর পানি ভাসমান। বিলকুজাইন এর সীমানার বাইরে এসব জমির উপরই জেলেরা মাছ ধরে থাকে। অথচ রাধানগর চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তাঁর লোকজন দরিদ্র জেলেদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছে। তাদের সহযোগিতা করার কারণে আমাকেও একটি মিথ্যা মামলায় আসামী করেছে।

তিনি বলেন, প্রায় ১০ হাজার একর জমির উপর ভাসমান বিলে মাছ ধরে জেলেরা। জেলেরা অভিযোগ করলো প্রতিকার পাওয়ার জন্য, কিন্তু উল্টো একটি মিথ্যা অভিযোগে জেলেদের মধ্য থেকেই একজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিষয়টি ভাবনার বিষয়। আসলে গরিবের দিকে নজর দেয়ার মানুষের বড়ই অভাব।

বিষয়টি নিয়ে রাধানগর ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমার এলাকার সমিতির লোকজন বিল কুজাইন লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছে। আমার কোন অংশ নেই বিলে। এলাকার মানুষ হিসেবে তাদের সহযোগিতা করি মাত্র। অভিযোগের বিষয়ে বলেন, জেলেরা অভিযোগ করেছে কি না আমার জানা নেই, ইজারাদারদের অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা।

এব্যাপারে গোমস্তাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জসিম উদ্দিন এর সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এর সাথে কথা বলার জন্য বলেন। বিলকুজাইন নিয়ে জেলেদের অভিযোগ ও পাল্টা ইজারাদারদের অভিযোগ বিষয় জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান পিপিএম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে জেনে এবং উভয়ের কাগজপত্র দেখে বিস্তারিত বলা যাবে। বিলকুজাইন এর ইজারাদারদের হাতে সরকারী ভাবে পরিচয়পত্রধারী জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, না দিলে মাছ ধরতে যেতে বাধা, পাতিহাঁস খামারীকে হাঁস পালনে বাধা দেয়া এবং অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, জেলেদের কাছ থেকে বা খামারীর কাছ থেকে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.