‘চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট’ খাইয়ে ইজিবাইক ছিনতাই করতেন তারা

বিশেষ প্রতিনিধি: চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খাইয়ে অজ্ঞান করে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১০। আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-১০-এর অধিনায়ক (সিও) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
গ্রেপ্তাররা হলেন, নুর ইসলাম, গোলাম রাব্বি, আব্দুর রহমান, মোছা. সিমা আক্তার ও শাহনাজ।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি ও মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের থেকে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত চেতনানাশক মিশ্রিত বিস্কুট, চেতনানাশক ওষুধ, ভুক্তভোগী ফিরোজের মোবাইল ফোন ও একটি চোরাই অটোরিকশা জব্দ করা হয়।
মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানান, কোরবানির ঈদকে ঘিরে সক্রিয় ছিনতাইকারীদের চক্করে পড়ে ইজিবাইক হারিয়েছেন ফিরোজ (২২) নামের এক চালক। এছাড়া ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন তিনি। তার পরিবার থানায় নিখোঁজের জিডি করার পর র‌্যাবের তদন্তে উঠে আসে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়েছিল মো. ফিরোজকে। এরপর তার ইজিবাইকটি ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় ছিনতাইকারী দল।
মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন আরও জানান, অজ্ঞান পার্টি চক্রটির দলনেতা শফিকুল ইসলাম পেশায় একজন সিএনজিচালক। পেশার আড়ালে তিনি চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অটোরিকশা ও ইজিবাইক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব দেন। তার কাছ থেকে চোরাই অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদক, চুরি, অসাধুভাবে চোরাই মালামাল বেচা-কেনাসহ চারটি মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তার নুর ইসলাম পেশায় ট্রাকের হেলপার। তিনি শফিকুলের নেতৃত্বে অটোরিকশা ও ইজিবাইক ছিনতাইয়ের জন্য চালকদের চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খাওয়ানোর দায়িত্ব পালন করে থাকেন। গোলাম রাব্বি পেশায় একজন ইজিবাইক চালক। তিনি চালকদের চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খাওয়ানো ও ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করেন। পেশায় অটোরিকশা চালক আব্দুর রহমান ছিনতাই করা অটোরিকশা চালানোর দায়িত্ব পালন করেন। তার কাছ থেকে ভুক্তভোগী ফিরোজের মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়। শাহনাজ বিস্কুটের ক্রিমের সঙ্গে মেশানোর জন্য নিষিদ্ধ চেতনানাশক ওষুধ অবৈধভাবে দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সংগ্রহ করেন। তিনি শফিকুল ইসলামের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সিমা আক্তার শাহনাজের সঙ্গে বিস্কুটে নিষিদ্ধ চেতনানাশক ওষুধ মেশানো এবং অটোরিকশা ও ইজিবাইক ভাড়া করে তাদের পরিকল্পিত স্থানে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করেন। এই চক্রে আর কেউ জড়িত কিনা তদন্তের পর জানা যাবে।
জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইকারীরা জানায়, গত ২৭ জুন শফিকুল, নুর ইসলাম, গোলাম রাব্বি, আব্দুর রহমান, সিমা আক্তার ও শাহনাজ ইজিবাইক ছিনতাই করার জন্য কেরানীগঞ্জ থানার হাসনাবাদ এলাকায় অবস্থান নেয়। নুর ইসলাম, গোলাম রাব্বি, সিমা ও শাহনাজ হাসনাবাদ গরুর হাটে যাওয়ার জন্য ফিরোজের ইজিবাইক ভাড়া করে। সেখানে যাওয়ার পর নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বিকে ফিরোজের সঙ্গে চা-বিস্কুট খেতে বলে সিমা ও শাহনাজ গরু হাটে চলে যায়। পরে নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বি তাদের কাছে থাকা চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুটের অনুরূপ এক প্যাকেট বিস্কুট চায়ের দোকান থেকে কিনে আনে।
তারা কৌশলে বিস্কুটের প্যাকেটটি পরিবর্তন করে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট ইজিবাইকচালক ফিরোজকে খাওয়ায়। একপর্যায়ে নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বি ভুক্তভোগী ফিরোজসহ ইজিবাইকে গিয়ে বসে। ফিরোজের শরীরে চেতনানাশক ওষুধের ক্রিয়া শুরু হলে তারা ইজিবাইকসহ ফিরোজকে কাউটাইল এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বি ভুক্তভোগীকে ফিরোজকে বেসামাল অবস্থায় গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে ইজিবাইক নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার পাগলা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে শফিকুল ইসলামের কাছে ইজিবাইকটি হস্তান্তর করেন। শফিকুল ইসলাম ইজিবাইকটি শহিদ নামের এক ব্যক্তির কাছে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমীন খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.