চলনবিলে শ্রমিক সংকট মেটাচ্ছে কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার মেশিন

নাটোর প্রতিনিধি: শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে সময় লাগে বেশি, আবার এক সাথে ধান কাটা শুরু হলে পাওয়া যায়না পর্যাপ্ত পরিমানে শ্রমিক। এতে করে অকাল বন্যায় এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগে নস্ট হয়ে যায় চলনবিল এবং হালতিবিলের কৃষকদের কষ্টাজিত বোরো ধান।তবে দ্রুত সোনার ফসল ঘরে তুলতে এবং শ্রমিক সংকট মেটাবে ধান কাটা মেশিন কম্বাইন হারভেস্টার এবং রিপার মেশিন।

এতে করে শ্রমিক সংকট মেটার পাশাপাশি বোরো ধান উৎপাদনে খরচ কমবে কৃষকের। এজন্য সরকার দেশের করোনার সময় শ্রমিক সংকট মেটাতে কৃষিকে আধুনিক প্রযুতিতে ধান কাটতে ভূর্তিকি দিচ্ছে অন্তত ২’শ কোটি টাকা।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, হাওর অঞ্চলের পর দেশের খাদ্য চাহিদার বড় যোগান আসে চলনবিল এবং হালতিবলি থেকে। বছরের একটি ফসল বোরো ধান কাটতে গিয়ে শ্রমিক সংকটের কারনে হিমশিম খেতে হয় কৃষককে।

একসাথে ধান কাটার মৌসুম শুরু হওয়ার কারনে শ্রমিকের চাহিদা বেড়ে যায়। আর চাহিদার পাশাপাশি বেড়ে যায় পারিশ্রমিক। এতে করে বোরো ধান উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হয় কৃষককে।তবে এই চিন্তা অনেকটা লাগব করতে পারে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার।

কম্বাইন হারভেস্টার এবং রিপার মেশিনে খুব সহজেই এখন ধান ঘরে তুলতে পারবে এখানকার কৃষকরা।কৃষি বিভাগ বলছে, একটি হারভেস্টার বা রিপার মেশিন ঘন্টায় তিন থেকে চার বিঘা জমির বোরা ধান কাটতে পারে।

এতে করে ৮ থেকে ১০লিটার ডিজেল তেল খরচ হয়। আর প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্যে মাত্র ৬৫টাকা। এতে করে ৮ থেকে ১০লিটার ডিজেলের মূল্যে আসছে মাত্র ৬৫০টাকা। কিন্তু এই তিন থেকে চার বিঘা জমির ধান শ্রমিক দিয়ে কাটতে গেলে বিঘা পতি কৃষককে খরচ করতে হবে তিন থেকে চার হাজার টাকা।

দূরত্ব ভেদে খরচ বেড়ে যায় আরও বেশি। এতে করে খরচও বেড়ে যায় ধান উৎপাদনে। তাছাড়া শ্রমিক সংকটের কারনে কৃষক সঠিক সময়ে ধান ঘরে তুলতে পারেনা। যার ফলে প্রকৃতিক দূর্যোগের কারনে ধান নস্ট হয়ে যায়।

এজন্য করোনার সময় শ্রমিক সংকট মেটাতে এবং দ্রুত বোরো ধান ঘরে তুলতে সরকার প্রতিটি মেশিনের ওপর ১৪লাখ টাকা ভুর্তিকি প্রদান করেছে।

সিংড়া উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, প্রতি বছরই বোরো ধান কাটতে শ্রমিক সংকট তীব্র আকার ধারন করে। কৃষকরা শ্রমিক সংকটের কারনে সময়মত ধান ঘরে তুলতে পারে না। যার যার কারনে অকাল বন্যায় কৃষকদের ধান নস্ট হয়ে যায়। তবে কম্বাইন হারভেস্টার এবং রিপার মেশিন দিয়ে খুব দ্রুত কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে পারছে।

একটি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন এক ঘন্টায় ৩বিঘা জমির ধান কাটতে পারে। অথচ শ্রমিক দিয়ে কাটলে ৪ থেকে ৬জন শ্রমিক সারাদিন এক বিঘা জমির ধান কাটতে পারে। এতে করে প্রচুর সময়ে লেগে যায়। খরচও বাড়ে কৃষকদের। এজন্য কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রসারের প্রতিটি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের দাম যেখানে ২৯ থেকে ৩০লাখ টাকা, সেখানে সরকার প্রতিটি মেশিনের ওপর ১৪লাখ টাকা করে ভুর্তকি দিয়ে যাচ্ছে। তবে এই মেশিনের আমদানী খরচ কমানো সম্ভব হলে প্রান্তিক চাষী পর্যায়ে পৌছানো সম্ভব।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এই বছর নাটোর জেলায় বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৫৭হাজার ৭০হেক্টর। আর এবার বিঘা পতি ধান উৎপাদন ধরা হয়েছে ২০ থেকে ২২মন। এতে জেলায় মোট ধান উৎপাদন হবে ৩লাখ ৮৫হাজার ২২ মেট্রিক টন।

জানা যায়, দ্রুত সময়ে চলনবিল এবং হালতিবিলের কৃষকদের বোরো ধান ঘরে তুলতে ইতোমধ্যে কৃষকদের মধ্যে ১৪টি কম্বাইন হারভেস্টার এবং ২টি রিপার মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। এরধ্যে সিংড়ায় ৬টি কম্বাইন হারভেস্টার এবং একটি রিপার, নলডাঙ্গায় ৩টি কম্বাইন হারভেস্টার, সদরে ৪টি কম্বাইন হারভেস্টার, গুরুদাসপুরে ২টি কম্বাইন হারভেস্টার এবং দুটি রিপার, কড়াইগ্রাম ও লালপুরে ১টি করে কম্বাইন হারভেস্টার বিতরণ করা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, খাদ্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিল এবং হালতিবিলের কৃষকদের দ্রুত বোরো ধান ঘরে তুলতে কৃষকদের মধ্যে ভুর্তকি মূল্যে ১৪টি কম্বাইন হারভেস্টার এবং দুটি রিপার মেশিন বিতরণ করা হয়েছে।

তবে চাহিদার তুলনায় অতি সামান্য হওয়ার কারনে আমরা মন্ত্রণালয়ে আরো ২৮টি কম্বাইন হারভেস্টার এবং দুটি রিপার মেশিনের চাহিদাপত্র দিয়েছে। মেশিনগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের হাতে আসলে কৃষকরা শ্রমিক সংকট মিটিয়ে দ্রুত ঘরে ধান তুলতে পারবে। পাশাপাশি বোরো ধান উৎপাদন খরচ কমবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.