গাইবান্ধার সাঘাটায় যমুনা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত 

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: হাজার হাজার দর্শকের আনন্দ উচ্ছাসের মধ্যদিয়ে গাইবান্ধার সাঘাটায় হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। রোদেলা শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা।
যমুনা পাড়ে অপরূপ শোভা বিলিয়ে ফুটেছে শরতের কাশফুল। সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের চিনিরপটল গ্রামে যমুনা নদীর দুই পাড়ে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরের ভিড়। সবার মাঝে উৎসবের আমেজ।
আর নদীর বুকে কারুকাজ ও নানা রঙে সাজানো ছিপছিপে ২০টি নৌকা। সেসব নৌকার কত যে সুন্দর নাম। প্রতিটি নৌকায় বৈঠা হাতে ৪০ থেকে ৫০ জন মাঝি। দাঁড়ের মাঝি নৌকার পেছনে, মাঝখানে নির্দেশক। ঢোল-কাঁসা-করতাল-মন্দিরা বাজিয়ে বাদক আর গায়েনরা মাঝিদের উৎসাহ দিতে নৌকার মাঝখানে।
কোনো নৌকায় মাঝিদের গায়ে একই রকম গেঞ্জি, সবার মাথায় আবার একই রঙের রুমাল বা গামছা বাঁধা। গাইবান্ধার ঐতিহ্যবাহী এই নৌকা বাইচে উৎসবমুখর মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনায় যমুনা নদীতে এ যেন এক প্রাণের মেলা।
আজ বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গাইবান্ধা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সরকার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নৌকা বাইচ উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর কবির, সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান, জেলা পরিষদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আজ বুধবার সকাল থেকেই এ প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-যুবা দলবেঁধে সমবেত হয়েছিলেন যমুনা নদীর পাড়ে। এতে উৎসব-আনন্দে মুখর হয়ে উঠেছিলো পুরো এলাকা।
প্রতিযোগিতায় জেলার বিভিন্ন এলাকাসহ বাইরের জেলা থেকেও অংশ নেয় বেশ কয়েকটি নৌকা। নানা রঙ্গের নৌকা ছাড়াও প্রতিযোগীদের সাজ-পোশাক, বাদ্য-বাজনা নৌকা বাইচের প্রধান আকর্ষণ ছিল।
ঘুড়িদহ ইউনিয়ন ছাড়াও আশেপাশের বেশক’টি ইউনিয়ন ও গাইবান্ধার অন্য ছয়টি উপজেলা থেকেও অনেক দর্শক এ বাইচ দেখতে আসেন। নৌকা বাইচ চলাকালে যমুনা নদীর পাড়ে হাজার হাজার উৎসাহী দর্শক এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এই নৌকা বাইচ উপভোগ করেন।
প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। গাইবান্ধার সাঘাটায় দীর্ঘদিন যাবত প্রতিবছর স্থানীয়দের উদ্যোগে একই স্থানে ঐতিহ্যবাহী এই নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
আয়োজকরা বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘এটি এ বাইচের নবম আয়োজন। এলাকার অধিকাংশ লোকই বছর ধরে এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। অনেকে গ্রামের বাইরে তাদের কর্মস্থলে বসবাস করলেও, এই দিন তারা একত্রিত হন, কাটান একেবারেই গ্রাম্য পরিবেশে আর গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে।’
প্রতিবছর যমুনা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচে এই প্রাণের মেলায় আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার অপেক্ষায় থাকেন এখানকার মানুষ। অপেক্ষায় থাকেন কখন হাঁক ছাড়বে মাঝি-মাল্লারা ‘জোরসে বাও বাইচের নাও…’।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মোঃ শাহরিয়ার কবির আকন্দ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.