আমাদের কর্মীরা ক্লান্ত, কিন্তু হতাশ নয় : গয়েশ্বর

ঢাকা প্রতিনিধি: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘আমাদের হতাশ হওয়ার কারণ নাই। আমাদের কর্মীরা ক্লান্ত, কিন্তু হতাশ নয়। আমাদের নেতাকর্মীরা যে রকম অত্যাচার-নির্যাতনকে সহ্য করে এখনো বুক টান করে দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীনতা রক্ষায়। এই স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা প্রতিবেশিদের নাই, কারও নাই।’
আজ শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ট্রাক ওপর তৈরি অস্থায়ী সমাবেশ মঞ্চে বেগম খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত বিশাল ব্যানারে লেখা ছিল ‘মা আমায় দিচ্ছে ডাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। সমাবেশ শেষে বিশাল মিছিল কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্টুরেন্ট মোড় হয়ে নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘প্রতিবেশীদের দালালি করে শেখ হাসিনা বেশি দিন টিকতে পারবে না। কারণ, যারা নাকি অন্যায়ভাবে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকে তাদের পরিণতিটা কী বিভিন্ন দেশে ইতিহাস পড়েন; তাহলে বুঝবেন। যত জুলুম, যত লুটপাট, আঘাত শুরু করছেন আপনার সাঙ্গ-পাঙ্গদের দিয়ে শুরু করছেন, ক্ষমতাচ্যুতের পর কারো কাছ থেকে সাহায্য পাওয়া বা ক্ষমা চাইবেন সুযোগ পাবেন না।’
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘বিএনপি কি রিমোট কন্ট্রোলে চলে? হ্যাঁ বিএনপি রিমোট কন্ট্রোলে চলে। সেই রিমোট কনট্রোল কার হাতে? দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অথবা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে। যিনি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেই তারেক রহমানের হাতে।’
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনাদের রিমোট কন্ট্রোল কোথায়? আপনাদের সরকারের রিমোট কন্ট্রোল কার হাতে? মোদির (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) হাতে, না অজিত দোভালের (ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা) হাতে, নাকি অমিত শাহের (ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী) হাতে? তাদের রিমোট কন্ট্রোলে আপনাদের চলতে হয়।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব বলছিলেন না, ‘‘সারা বিশ্বের মানুষ যেভাবে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে ষড়যন্ত্র করতেছিল, ভারত যদি আমাদের পাশে না থাকত এই নির্বাচন আমরা করতে পারতাম না।’’ তাই না? ভারতই আপনাদের রাখছে, ভারতই আপনাদের রাখবে এই তো? তার মানে দেশের গণতন্ত্রের অবস্থা কী? গণতন্ত্র মানে- বাই দ্যা পিপল, ফর দ্যা পিপল, অব দ্যা পিপল। আর আপনাদের কথা শুনে মনে হয়, ডেমোক্রেসি মিনস বাই দ্যা ইন্ডিয়া, ফর দ্যা ইন্ডিয়া, বাই দ্যা ইন্ডিয়া। না কী? এর বেশি কিছু মনে হয় না।’
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৭ জানুয়ারির নির্বাচন (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ) থেকেও কম। ঠিক ভোট ফেয়ার হয়েছে, সেখানে যে যেখানে পারছে সে সেখানে সিল মারছে। বাইরে ফিট-ফাট আর ভেতরে সদরঘাট- এই হচ্ছে উপজেলা নির্বাচনের অবস্থা।’
সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যার প্রসঙ্গ টেনে দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে এর দেশকে রক্ষায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতো ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বানও জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, ‘আগে ছিল বিডিআর। মানে বাংলাদেশ রাইফেলস। এখন বিজিবি মানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। এখন রাইফেল নেই।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘বাংলাদেশটা আজ কাঁটাতারে ঝুলছে। যেমনটি ফোলানীকে হত্যা করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, তেমনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাও আজ কাঁটাতারে ঝুলছে। দেশটাকে নিয়ে, স্বাধীনতাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে, এ থেকে রক্ষা পেতে হলে ৭১-এর মতো জেগে উঠতে হবে।’
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দুর্নীতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আজকে এসব চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের পুলিশ ধরে না, তাদের নামে মামলা হয় না। আর আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আপনারা যে আচরণ করেছেন ক্ষমতার পরিবর্তন হলে তার ১০ ভাগের একভাগ করলে আপনাদের সঙ্গে করলে তা সহ্য করতে পারবেন? তাই সীমা লঙ্ঘন করবেন না। তাই বলছি জনগণের সঙ্গে থাকুন, ন্যায়ের পথে থাকুন।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক, দক্ষিণ বিএনপির ইশরাক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানি, যুবদলের এম মোনায়েম মুন্না, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া প্রমুখ।
এই সমাবেশে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মীর সরাফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, শামীমুর রহমান শামীমসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মো: মাসুদ রানা খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.