খুলনা আবু নাসের হাসপাতালের আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়ে জটিলতা

 

খুলনা ব্যুরো: খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে দৈনিক মজুরীভিত্তিক নিয়োগকৃত ১১৮জন আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়ে জটিলটা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এতে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবাও ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে, আউটসোর্সিং কর্মচারীদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি নিয়ে সম্প্রতি খুলনা উন্নয়ন ফোরামের সংবাদ সম্মেলনের পর চারজন কর্মচারীকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এর ফলে উন্নয়ন ফোরামসহ আরও কয়েকটি সংগঠন একত্রিত হয়ে বিবৃতি দিয়ে ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। যা বুধবার শেষ হচ্ছে।

এ অবস্থায় কি হতে পারে পরবর্তী কর্মসূচী সেটি নিয়েও রয়েছে শংকা। শেষ পর্যন্ত ঠিকাদারের নিয়োগকৃত ১০৩ জন কর্মচারীর সমন্বয়ে বড় ধরনের আন্দোলন শুরু হলে প্রকারান্তরে হাসপাতালের সেবার পরিবেশই যে বিনষ্ট হবে তেমন আশংকাও করেছেন কেউ কেউ। যদিও আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগের বিধি অনুযায়ী যে কোন দিন যে কোন কর্মচারীকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন কর্মচারী নেয়ার বিধান থাকায় নতুন কর্মচারী নিয়োগ হলে কর্মরত সকলেরই ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে এখনই দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়া হলে আবু নাসের হাসপাতালসহ অন্যান্য যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিং প্রথা চালু রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মরতরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বড় ধরনের আন্দোলন শুরু করতে পারে এমন আশংকাও করছেন অনেকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ-৫ অধিশাখার ২০০৮ সালের আউটসোর্সিং সংক্রান্ত নীতিমালার আলোকে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল চালুর এক বছরের মাথায় অর্থাৎ ২০১১ সাল থেকে প্রথমে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ প্রথা শুরু হয়। প্রথম বছরেই ওই হাসপাতালে ৭৫ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। নীতিমালা অনুযায়ী এসব কর্মচারীদের মধ্যে ৬৬ জন সরবরাহ করে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বাকী নয়জন দেয় আনসার ও ভিডিপি জেলা কার্যালয়। প্রতিজন কর্মচারীর জন্য দৈনিক বরাদ্দ থাকে ২১০ টাকা করে।

এভাবে চলে আসার পর ২০১৩-১৪ অর্থ বছর থেকে নতুন করে অপর একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আউটসোর্সিং কর্মচারী সরবরাহের সুযোগ পায়। এসময় প্রতিজন কর্মচারীর জন্য বরাদ্দ থাকে দৈনিক ২৮০ টাকা করে। এর মধ্যে আবার অতিরিক্ত সুপারভাইজার নিয়োগ করতে হয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকেই। যাদের মজুরি সরকারিভাবে ধরা না থাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানই তা বহন করে। সেই সাথে ১০ লাখ টাকা জামানত দিতে হয় সরকারকে। সিকিউরিটি ও লিমিটেড কোম্পানীর লাইসেন্সসহ জামানত এবং অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্মচারীদের শর্ত সাপেক্ষেই নিয়োগ দিয়ে আসছে।

তাছাড়া নীতিমালার ৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী দৈনিক মজুরীতে বর্তমানে এ হাসপাতালটিতে ১০৩জন কর্মচারীকে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সরবরাহ করছে টি ফোর এস ইন্টারন্যাশনাল লি: নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এখন পর্যন্ত ২০০৮ সালের নীতিমালা অনুযায়ী ওইসব কর্মচারীদের মজুরী দেয়া হচ্ছে বলেও ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী মো: গিয়াস উদ্দিন জানান। ওই হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত আরও ১৫ জনকে সরবরাহ করছে আনসার ভিডিপি।

সব মিলিয়ে ১১৮জন কর্মচারী আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে কর্মরত থাকলেও শুধুমাত্র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত ১০৩ জনকে নিয়েই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, গত ২০ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অপর এক প্রজ্ঞাপন জারি করে আউটসোর্সিং নীতিমালা প্রনয়ন করা হয়। ওই নীতিমালায়র ৭(২) ধারায় বলা হয়, কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ডোম, অফিস সহায়ক, মালি, বাবুর্চি, সহকারী বাবুর্চি, ধূপি, আয়া, বোতল ওয়াসার, ওয়ার্ড বয়, ডিসপেন্সারি বয়, লাইব্রেরি অ্যাটেনডেন্ট, নিরাপত্তা প্রহরী, হাজাম, পোলট্রি হাউজ অ্যাটেনডেন্ট, অ্যানিম্যাল কেয়ার টেকার, নাপিত, প্লাম্বার, হেড কারপেন্টার, প্যাকার, প্রধান নিরাপত্তা প্রহরী, ফায়ার ম্যান, পোল্ট্রি সহকারী, অ্যান্টি ম্যালেরিয়া কুলি, হেলপার, লোডার, এসকর্ট, অডিওভিজ্যুয়াল হেলপার বা টিন স্মিথ পদে কর্মরত কোন কর্মচারীর পদ পদোন্নতি, অবসর, পদত্যাগ, মৃত্যু বা অন্য কোন কারনে শূণ্য হলে তার বিপরীতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ২০০৮ সালের ওই অনুযায়ীই লোক নেয়া যেতে পারে।

২০১৬ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অপর এক নীতিমালায় আউটসোর্সিং কর্মচারীদের জন্য বেতন কাঠামোও পুন:নির্ধারণ করা হয়। এ নীতিমালা এখনও খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের বিশোষায়িত হাসপাতালে বাস্তবায়নও হয়নি। যেটি বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। কিন্তু তার আগেই কর্মচারীদের মজুরী বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে সেটি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সেবার মান ব্যাহত করতে পারে বলেও সংশ্লিষ্টরা আশংকা করছেন।

যদিও খুলনা উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান শরীফ শফিকুল হামিদ চন্দন বলেন, আবু নাসের হাসপাতালের আউটসোর্সিং কর্মচারীরা তাদের কাছে গিয়ে অভিযোগ করেছেন বলেই তারা এটি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। এখন কর্মচারীরা যেভাবে চাইবেন তারা সেভাবেই তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করবেন। চার কর্মচারীর পুনর্বহালের বিষয়ে দেয়া আলটিমেটাম সম্পর্কে তিনি বলেন, আউটসোর্সিং কর্মচারীদের সাথে পরামর্শ করেই পরবর্তীতে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করা হবে।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.