খুলনায় টিকা ক্যাম্পেইনে একদিনে ৫৪ হাজার ৭১৩ জন নিলেন করোনার ভ্যাকসিন

খুলনা ব্যুরো: হালকা বৃষ্টি, প্রতিকুল আবহাওয়া আর চলমান বিধি-নিষেধের মধ্যেও পরীক্ষামূলক টিকা ক্যাম্পেইনে ছিল সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া। সকাল নয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা থাকলেও অনেক কেন্দ্রে দুপুরের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় ২শ’ করে করোনা ভ্যাকসিন। এজন্য অনেকেই কেন্দ্রে গিয়েও ফেরত যেতে বাধ্য হন।
গত শনিবার নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের ৯৩টি এবং জেলার নয়টি উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নের ৬৮টি কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক এ টিকা ক্যাম্পেইন কার্যক্রমে পরিচালিত হয়। আগামী ১৪ আগষ্ট আবারো নগরীর ওয়ার্ড এবং জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে এ টিকা কার্যক্রম হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে নগরীর পাঁচটি এবং জেলার নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্থায়ী ক্যাম্পে প্রতিদিন নিয়মিত করোনা ভ্যাকসিন বা টিকা কার্যক্রম চলমান থাকবে। যেখানে সুরক্ষা ওবেসাইটের মাধ্যমে আবেদন করে তারিখ পাওয়া সাপেক্ষে টিকা দেয়া যাচ্ছে।
এদিকে, খুলনার সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গতকাল নগরীতে ২৩ হাজার ৮৭৮ এবং জেলায় ৩০ হাজার ৮৩৫ অর্থাৎ সর্বমোট ৫৪ হাজার ৭১৩ জন করোনা ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্রটি বলছে, করোনাভাইরাস থেকে জনসাধারণকে রক্ষায় সারাদেশে গণটিকা কার্যক্রম হবে মূলত: আগামী ১৪ আগষ্ট। গতকাল রবিবার (০৮ আগস্ট) পরীক্ষামূলক এ টিকা কার্যক্রম চলে। স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে জড়িত বিভিন্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়োজিত করা হয় এ টিকা কার্যক্রমে। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ৩১টি ওয়ার্ডে ৯৩টি কেন্দ্রে স্বাস্থ্যর্কীদের নিয়োজিত করে পরীক্ষামূল টিকা কার্যক্রম চলে।
কেসিসির সাবেক প্যানেল মেয়র ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, তার ওয়ার্ডের তিনটি কেন্দ্রে ৬শ’ টিকা দেয়া হলেও দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যেই তা শেষ হয়ে যায়। জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া লক্ষ্য করা গেছে বলেও তিনি জানান। তবে পরীক্ষামূলক এ কার্যক্রমে বয়স্ক ও প্রতিবদন্ধীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। ২৫ বছরের উর্ধ্বের জনসাধারণ অনেকে কেন্দ্রে আসলেও তাদেরকে করোনার টিকা দেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে যে সাড়া দেখা গেছে তাতে টিকা আরও প্রায় দ্বিগুন দেয়া সম্ভব ছিল বলেও তিনি মনে করেন। তার ওয়ার্ডের আওতাধীন তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে সোনাডাঙ্গা ময়লাপোতার নুরানী মহল্লা কেন্দ্রের একজনকে টিকা দেয়া নিয়ে কেউ কেউ গুজব ছড়ায় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, জনসাধারণের মধ্যে যেখানে টিকা দেয়ার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে, প্রতিকুল আবহাওয়া উপেক্ষা করেও যখন সাধারণ মানুষ কেন্দ্রে এসে টিকাদান কার্যক্রমের সাথে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে সেখানে এ ধরনের গুজব কাম্য নয়।
কেসিসির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো: শমসের আলী মিন্টু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, তার ওয়ার্ডেও তিনটি কেন্দ্র পরিচালিত হয়। দুপুর দেড়টার মধ্যেই সব টিকা শেষ হয়ে যায়। তিন কেন্দ্রে ৬শ’ লোককে টিকা দেয়া হলেও আরও প্রায় সমপরিমান লোক ফিরে গেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। অর্থাৎ পরিকল্পিতভাবে আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে টিকা ক্যাম্প করা হলে আরও বেশি লোককে টিকা দেয়া সম্ভব হতো বলেও তিনি মনে করেন।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: স্বপন কুমার হালদার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, গত শনিবার (০৭ আগস্ট) টিকা ক্যাম্পেইনে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া লক্ষ্য করা গেছে। নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের ৯৩টি কেন্দ্রে এবং নিয়মিত চলমান থাকা পাঁচটি কেন্দ্রে গতকাল ২৩ হাজার ৮৭৮ জনকে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া হয়। এছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪০৭জন এবং জেনারেল হাসপাতালে ২৩৩ জনকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হয়। অবশ্য নগরীর পাঁচটি নিয়মিত কেন্দ্র ও ৯৩টি অস্থায়ী কেন্দ্রে আমেরিকান মডার্নার প্রথম ডোজের টিকা দেয়া হলেও দ্বিতীয় ডোজের জন্য দেয়া হয় ভারতীয় অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, জেলার নয়টি উপজেলায় গত  শনিবার (০৭ আগস্ট) মোট ৩০ হাজার ৮৩৫ জনকে করোনা ভ্যাকসিন দেয়া হয়। তবে উপজেলায় দেয়া হয় চায়নার সিনোফার্ম’র টিকা। সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্য মতে, গতকাল দাকোপে তিন হাজার ২৫৫ জন, বটিয়াঘাটায় দুই হাজার ৫৭৯, দিঘলিয়ায় তিন হাজার ৮১৫ জন, ডুমুরিয়ায় আট হাজার ৬৮২ জন, ফুলতলায় দুই হাজার ৬৭৬ জন, কয়রায় তিন হাজার ৮৯৭ জন, পাইকগাছায় এক হাজার ৫১৯ জন, রূপসায় দুই হাজার ৯১২ জন এবং তেরখাদায় এক হাজার ৫শ’ জনকে টিকা দেয়া হয়। এছাড়া জেলার কয়রায় ৭৪৯জনকে করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: রবিউল হাসান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, গত শনিবার (০৭ আগস্ট) একদিনের জন্য নগরীতে ওয়ার্ড পর্যায়ে এবং জেলার উপজেলাগুলোতে ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনার টিকা দেয়া হলেও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেন্দ্রে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচী চলমান থাকবে। যতদিন সকল মানুষকে টিকার আওতায় না আনা যাবে ততোদিন এ কর্মসূচি থাকবে বলেও তিনি জানান। কেসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, নগরীর পাঁচটি কেন্দ্র তথা খুমেক হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ লাইন হাসপাতাল এবং উপশম হাসপাতালে নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচী চলমান থাকবে। যেখানে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে টিকাকার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ যেতে হবে।
যদিও গত শনিবার (০৭ আগস্ট) টিকা ক্যাম্পেইনে শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্রসহ গেলেই টিকা দেয়া গেছে। তবে সে ক্ষেত্রেও কেন্দ্রে বসে তাৎক্ষণিক আবেদন করেই জনসাধারণকে টিকা দেয়া হয়েছে। গতকাল যারা কেন্দ্রে গিয়েও টিকা দিতে পারেননি কোন কোন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ব্যবস্থাপনায় তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রগুলো রেখে দেয়া হয়েছে। যা দিয়ে অনলাইনে আবেদন করে দেয়া হবে তাদের ব্যবস্থাপনায়। এমনটি জানিয়েছেন কেসিসির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো: শমসের আলী মিন্টু।
খুলনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের টিকাদান কর্মসূচির জন্য গঠিত কমিটির সূত্রটি বলছে, বর্তমানে খুলনায় যে টিকা মজুদ রয়েছে তাতে হয়তো আর এক সপ্তাহ চলতে পারে। তবে এর মধ্যে আবারো টিকা চলে আসবে বলেও ওই সূত্রটি জানায়। এছাড়া যারা আগে ভারতীয় অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ দিয়ে দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাদেরকেও টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। কেননা ইতোমধ্যেই চাহিদার বেশি টিকা এসেছে। যা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্টোরে মজুদ আছে।
অপরদিকে, গত শনিবার (০৭ আগস্ট) টিকাদান কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধিশাখার অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খোন্দকার। তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, স্কুল হেলথ্ ক্লিনিক, খালিশপুরের লাল হাসপাতাল এবং ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকাদান কেন্দ্র পরিদর্শন করেন বলে খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ জানান।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.