খালেদা জিয়ার সু-চিকিৎসা হচ্ছে না জেলখানায়, আইনজীবী জয়নুল

 

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতকে জামিনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, ‘অবস্থা গুরুতর বেগম খালেদা জিয়ার । চিকিৎসা হচ্ছে না জেলখানায় । আমরা দেখা করেছি খালেদা জিয়ার সঙ্গে । তাঁর হাত ফুলে উঠেছে। নাড়াতে পারছেন না ঘাড় । কথাও বলতে পারছেন না। অথচ অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন, বিশ্রামে আছেন খালেদা জিয়া । মানুষের জন্য আদালত, আদালত সবকিছুই দেখবেন।’

আজ বুধবার দ্বিতীয় দিনের শুনানি চলছে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে আপিলের ওপর । শুনানিতে খালেদা জিয়ার জামিনের সপক্ষে বক্তব্য দিতে গিয়ে তাঁর আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতের কাছে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার এখন ৭৩ বছর বয়স । আদালতের চোখ আছে, মন আছে, বিবেক আছে। পাবলিক পারসেপশন আছে।  আমাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই এই কোর্ট ছাড়া।’

জয়নুল আবেদীন খালেদা জিয়ার জামিনের সপক্ষে উচ্চ আদালতের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন। ‘অনেক মামলায় জামিন হয়ে গেছে, জয়নুল আবেদীন অভিযোগ করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তো আপিল করে না।’ তিনি দুদকের আপিল না করার বিষয়টি আদালতের কাছে তুলে ধরেন সরকারদলীয় দুজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার মামলায় জামিন ও খালাসের বিরুদ্ধে ।

আজ সকালে জয়নুল আবেদীন বলেন শুনানির শুরুতে, অ্যাটর্নি জেনারেল কোন অথোরিটি নিয়ে শুনানিতে অংশ নিয়েছেন এই মামলায় ? তখন আদালত তাঁর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারাই তো রাষ্ট্রপক্ষকে সংযুক্ত করেছেন। দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ যখন এক হয়, তখন ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে আমাদের সংশয় দেখা দিয়েছে জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন‘।’

তিনি আদালতকে আরও বলেন, ‘লঘু দণ্ডের যেসব মামলায় হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন, সে ক্ষেত্রে উচ্চ আদালত সাধারণত হস্তক্ষেপ করেন না।’ এ ছাড়া খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন তাঁর শুনানির শুরুতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি আদালতের কাছে দাবি করেন, ১/১১ সরকারের সময় এই মামলা শুরু হয়েছিল।

এ সময় তিনি পত্রিকার খবর পড়ে আদালতকে বলেন, ‘এখন সারা দেশে নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতে লাখ লাখ মামলা ঝুলে আছে। অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতের ওপর দায় দিয়ে অশুভ পাঁয়তারা করছেন।’ আদালতের উদ্দেশে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি, হাইকোর্ট কোনো মামলায় জামিন দিলে আপিল বিভাগ সেখানে হস্তক্ষেপ করেন না। করার নজির নেই।’

প্রধান বিচারপতি তাঁর উদ্দেশে বলেন, ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মামলায় হাইকোর্ট জামিন দিলেও আমরা তা আটকে দিয়েছি।’ খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ নির্দোষ। এই মামলা-সংশ্লিষ্ট কোনো কাগজপত্রে তাঁর কোনো স্বাক্ষর নেই। এই মামলা যখন শুরু হয়েছিল, তখন ছিল মাইনাস টু ফর্মুলা।এখন ফর্মুলা মাইনাস ওয়ান।

আজ সকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘হাইকোর্টে কোনো মামলায় জামিন হলে উচ্চ আদালত সাধারণত সেখানে কোনো হস্তক্ষেপ করেন না। বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল, তিনি কোনো পার্টির অ্যাটর্নি জেনারেল না।’ এই মামলায় বিচারিক আদালত তাঁর রায়ে কিছু ভুল করেছেন বলে দাবি করেন এ জে মোহাম্মদ আলী।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানি শুরু করেন দ্বিতীয় দিনের শুরুতে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে । আজও আদালতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন গতকাল মঙ্গলবারের মতো । জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে।

খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক আপিল করে, যার ওপর গতকাল শুনানি শুরু হয়। গত ১৯ মার্চ আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন ওই আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেন। এ ছাড়া আপিল শুনানির তারিখ ৮ মে ধার্য করেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.