খালেদাকে এর বেশি দয়া দেখানো সম্ভব না : প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি: খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যে (খালেদা জিয়া) আমাকে খুন করতে চেয়েছে, আমার বাবা-মা-ভাইদের হত্যার সঙ্গে জড়িত; তার জন্য যথেষ্ট দয়া দেখানো হয়েছে। যে আমার হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে; তার জন্য এর বেশি দয়া দেখানো আমাদের পক্ষে সম্ভব না।’
আজ মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ, তাকে বিদেশে পাঠাও। আহ্লাদের আর শেষ নেই! পৃথিবীতে কোন দেশে আছে! এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি জেলে ছিল। অন্তত আমি এটুকু দয়া করেছি, ঠিক আছে বয়োবৃদ্ধ মানুষ বা অসুস্থ, হাঁটতে চলতে উঠতে বসতে অসুবিধা, শুলে একজন না ধরলে উঠতে পারে না, জেলখানায় যখন এ অবস্থা দেখেছি, ঠিক আছে যেটুকু আমার ক্ষমতা আছে, এক্সিকিউটিভ যে পাওয়ার আমার আছে তার মাধ্যমে তাকে আমি তার বাসায় থাকার সুযোগটা করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘এখন তিনি সেজেগুজে, একেবারে মেকাপটেকাপ করে, ভ্রু এঁকে হাসপাতালে যান। এদিকে তার ডাক্তাররা আবার রিপোর্ট দেন—খুবই খারাপ অবস্থা, মানে একেবারেই যায় যায়… তার লিভার নাকি পচে শেষ। লিভার সাধারণত পচলে মানুষ কী বলে, সেটা আমি আর বলতে চাই না। কী খেলে তাড়াতাড়ি লিভার পচে সেটাও মানুষ জানে।’ 
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কাছে (বিদেশে যাওয়ার কথা) বলে কোন মুখে। জিয়াউর রহমান আমার বাবা-মা-ভাইদের হত্যা… ইনডেমনিটি দিয়ে খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল। এরশাদ এসে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দিলো। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিলো। ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬। সেই নির্বাচনের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। ভোটারবিহীন নির্বাচন খালেদা জিয়া করেছিল। সেই নির্বাচনে কর্নেল রশিদ, ফারুক আর হুদা প্রার্থী। ফারুককে জেতাতে পারেনি। রশিদ আর হুদাকে জেতাল। হুদাকে এনে পার্লামেন্টে বসাল এই খালেদা জিয়া।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দিয়ে পদোন্নতি দিয়েছিল এবং আরেকজনকে রাষ্ট্রদূত করে বিদেশে পাঠিয়েছিল খালেদা জিয়া। আমার বাবা ও মায়ের হত্যাকারীদের এনে সংসদে বসিয়েছিল।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখা করতে তার গুলশানের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন সে বিষয়টি জানিয়ে তিনি বলেন, শত হলেও তিনি একজন মা, এটা মনে করে, এই এতকিছু করার পরেও আমাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল বারবার। এই দেশে সব বোমাবাজির পেছনে তাদের হাত আছে। এতে কোনও সন্দেহ নাই।
তিনি বলেন, ‘সেই সময় আমার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল, সময় নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। আমি গেছি, আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কত বড় অপমান। খালি মনে হলো—তুমি খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমানের সঙ্গে অন্তত দুই মাস, এক মাস পরপরই আমাদের বাসায় গিয়ে বসে থাকতা। চেয়ার পেতেও বসতা না, লবিতে মোড়া ছিলে সেখানে বসতা। আর এখন আমাকে ঢুকতে দিবা না। আমার গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে গেট বন্ধ। আমাকে ঢুকতে দিলো না। জীবনে কখনও এমন ইনসাল্ট করবে… তারপরও তার জন্য দরদ দেখাতে হবে? দরদ তো দেখিয়েছি, আর কত? আর কত দয়া দেখাবো।’
খালেদা জিয়াকে নিয়ে তার নেতাকর্মীরা এখন আরেকটা নাটক সাজাচ্ছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে গাড়ি করে উনি হাসপাতালে গেলেন, হলুদ শাড়ি পরে। এখন রিপোর্ট খুবই খারাপ অবস্থা, বিদেশে না পাঠালে নাকি চিকিৎসা হবে না। এভার কেয়ার তো চমৎকার চিকিৎসা করিয়েছে। সবচেয়ে আধুনিক ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা তাকে দিচ্ছে। আসামিকে কে কবে বিদেশে পাঠায় চিকিৎসার জন্য। তাহলে তো কারাগারের কোনও আসামি আর বাদ থাকেবে না, সবাই দাবি করবে, আমাদের চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান। আমরা কী সবাইকে পাঠাবো?’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হলো, মামলা করতে দেওয়া হয়নি। আলামত নষ্ট করেছিল, জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছিল, যে এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল তার জন্য এত করুণা, দয়া চায় কীভাবে? সেটাই আমার প্রশ্ন। তারপরও তো আমরা করুণা করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অনেক দুঃখে কথাগুলো বললাম। অনেক অপপ্রচার হচ্ছে, দেশে বিদেশে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আমাদের নেতাকর্মীদের তার উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। আমরা সংঘাত চাই না। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেটা দেখিয়ে গেছেন।’
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি মো: ফারুক আহম্মেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.