খাদ্যে ভেজাল ও অতি মাত্রায় কীটনাশকের প্রয়োগে দিন দিন বাড়ছে নিরাপদ খাদ্যের ঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বাজার ভেজাল খাদ্যে ছেয়ে গেছে। শিশুরা যে দুধ খেয়ে বেড়ে উঠছে তাতেও এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ধরা পড়েছে। এর ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও নিরাপদ খাদ্যের ঝুঁকিতে রয়েছে। সকলেরই স্বাস্থ্য হুমকির মুখে। ইতোপূর্বে রাজশাহীতে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মুচলেকা আদায় করা হয়েছে।

এরই মধ্যে রাজশাহীর ২টিসহ ১৩টি কোম্পানীর পণ্য বিক্রি, বিতরণ, সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ স্টান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। পাশাপশি খাদ্যে ভেজাল নিয়ে সরকার এখন হার্ডলাইনে। খাদ্যে ভেজালের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে সরকার।

প্রায়ই কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে উঠে আসছে, ভেজাল খাদ্য গ্রহণের কারণে মানুষ কীভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু বাজারে ভেজাল কমছে না। বেশির ভাগ মানুষ মনে করে ভেজাল ক্রমেই বাড়ছে। তার পরও বেঁচে থাকার প্রয়োজনে তারা এসব খাদ্যই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। ভেজালমুক্ত হবেÑএ আশায় অনেকে নামিদামি ব্র্যান্ডের খাদ্যপণ্য বেশি দাম দিয়ে কিনছেন। কিন্তু লাভ কী? সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বহু নামিদামি প্রতিষ্ঠানের পণ্যও নিম্নমানের।

খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) বাজার থেকে ২৭ ধরনের ৪ শ ৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করেছিল। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ৩ শ ১৩টি পণ্যের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। তার মধ্যে ৫২টি প্রতিষ্ঠানের পণ্য নিম্নমানের বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে, সরিষার তেল, বোতলজাত পানি, সেমাই, নুডলস, সফট ড্রিংকস, গুঁড়া মসলা, লাচ্ছা সেমাই, আয়োডিনযুক্ত লবণ, চানাচুর, বিস্কুট, সুজি, মধু প্রভৃতি।

সরিষার তেলের নামকরা ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে, তীর, জিবি, পুষ্টি, রূপচাঁদা ইত্যাদি। আছে প্রাণ অ্যাগ্রোর লাচ্ছা সেমাই, মধুবন ও মিঠাইয়ের মিষ্টি, এসিআই, মোল্লা সল্ট, মধুমতী, দাদা সুপার, তিন তীর, মদিনা, স্টারশিপ, তাজ ও নূর স্পেশালের আয়োডিনযুক্ত লবণ; ফ্রেশ, প্রাণ, ড্যানিশ, সান, ডলফিন ও মনজিল গ্রুপের হলুদের গুঁড়া। অথচ এসবের অনেকগুলোই বাজারে চলছে।

অবস্থাদৃষ্টে প্রশ্ন জাগে, নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলোই যদি তাদের খাদ্যপণ্যের মান ঠিক না রাখে তাহলে অন্যান্য অনামি, বে-নামি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ভাল মান আশা করা যায় কিভাবে?

জনমানুষের উদ্বেগ ও ভেজালের ভয়াবহ ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে উচ্চ আদালত থেকে একাধিকবার সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও প্রতিনিয়ত ফসলের জমিতে বালাইনাশকের যথেচ্ছা ব্যবহার বাড়ছে। ফসল উৎপাদন নির্বি ঘ্ন করতে এতে অহরহই ব্যবহৃত হচ্ছে কীটনাশক। খাদ্য উৎপাদন নির্বিঘ্ন করতে কৃষক ফসলে কীটনাশক দিচ্ছে। এতে ঝুঁকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। এমনকি ফসলে ব্যবহৃত রাসায়নিক বালাইনাশকে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে হুমকিতে পড়ছে মানুষের জীবন।

দেশের খাদ্যভান্ডার খ্যাত বরেন্দ্র অঞ্চল। এ এলাকা কৃষিনির্ভর ও খাদ্যে উদ্বৃত্ত এলাকা। এ এলাকার খাদ্য উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে এবং নিরাপদ খাদ্যের জন্য রাসায়নিক সার ও রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার কমিয়ে জৈবসার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার বাড়ানো জরুরি, খাদ্য বিশেষজ্ঞরা এমনটাই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। যেহেতু জনসংখ্যা বাড়ছে। এর সাথে খাদ্যের চাহিদাও বাড়ছে।

ফসল উৎপাদনে আধুনিক প্রযুিক্ত, রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ব্যবহারও বাড়ছে। এরই মধ্যে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে ঠিকই কিন্তু নিরাপদ খাদ্যের জন্য সরকারিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও বাস্তবায়ন পুরাপুরি নিশ্চিত হয়নি। যথাযথ পদক্ষেপ ও জনগণের সচেতনতার অভাবও এজন্য দায়ি বলা যায়। জনগণকে সচেতন করে তুলতে না পারলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা কঠিন হবে।

বর্তমানে ফসলে রাসায়নিক বালাইনাশক প্রয়োগ ছাড়া কৃষক উৎপাদনের কথা চিন্তা করতে পারে না। কিন্তু রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে প্রথমত তা বাতাসে মিশে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। খেতে বৃষ্টির পানির সাথে প্রথমে পুকুর, খাল-বিল পরে নদী ও সাগরে গিয়ে মিশে পানিকে বিষাক্ত করে তোলে। এই বিষাক্ত পানি পান করে বা ব্যবহারের ফলে মানুষ, জীব-জন্তুর চরম ক্ষতি হয়। পানিতে বসবাসরত মাছসহ সকল জীব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এমনকি মারাও যাচ্ছে।

রাসায়নিক বালাইনাশক শাক সবজিতে ব্যবহারের পর বাজারে বিক্রিতে কোন বাধা থাকে না। তা ব্যবহারের ফলে মানুষ ভয়াবহ রোগ যেমন আমাশয়, জন্ডিস, হৃদরোগ, টাইফয়েড, রক্তচাপ, কিডনি নষ্ট ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ধানের জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করায় চালের মাধ্যমে তা মানবদেহের প্রবেশ করে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এছাড়া জমির খড় গাভীকে খাওয়ানোর পরে গাভীর দুধ পরীক্ষা করেও কীটনাশক পাওয়া গেছে।

এই অবস্থায় নগরীতে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ সময় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য দ্রব্য ধ্বংস করা হয়েছে। মানুষ এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.