প্রবাসে আলোকিত মুখ নাটোরের কৃতি সন্তান সিরাজুল ইসলাম

নাসিম উদ্দীন নাসিম: (নাটোর থেকে): নাটোরের সন্তান সিরাজুল ইসলাম। ছেলেবেলা থেকেই ছিলেন পড়াপাগল। নিজে তো পড়তেনই, অন্যদেরও পড়তে দিতেন। পড়তেন, লিখতেন আর সময় পেলেই শুনতেন বিবিসি। স্কুল-কলেজ নাটোরে করে ভর্তি হন ঢাকার নর্থ সাউথে। কম্পিউটার সায়েন্সের পঞ্চম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন সিরাজুল। বিবিএ, এমবিএ শেষ করে চেষ্টা করছিলেন বাইরে যাওয়ার। একসময় সুযোগও মিলে গেল। সুইডেনের অরেব্রো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন পিএইচডি ছাত্র হিসেবে।

পড়াশোনা ইউরোপে হলেও সিরাজুলকে বাংলাদেশে আসতে হয়েছে বারবার। কারণ তাঁর গবেষণার বিষয়ই ছিল বাংলাদেশের মোবাইল ভিত্তিক কৃষিবাজার। বর্তমানে বাংলাদেশের কৃষকরা কী কী সমস্যার মুখোমুখি হয় এবং মোবাইল ফোন কাজে লাগিয়ে কিভাবে তা সমাধান সম্ভব, মূলত সেটা নিয়েই কাজ করেছেন তিনি।

ঘুরেছেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, মাঠ পর্যায় থেকে তুলে এনেছেন কৃষকদের নানা তথ্য। ‘অ্যাগ্রিকালচার মার্কেট ইনফরমেশন সিস্টেমস’ নামের একটি আধুনিক বাজার ধারণার কথা বলেছেন সিরাজুল, যেখানে কৃষিবিষয়ক সব ধারণা মোবাইলের মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। মোটাদাগে বলতে গেলে, ফসল সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, সেগুলোর সঠিক ব্যবহার ও কৃষিপণ্যের দামদর সংগ্রহ করাই কৃষিবাজারের কাজ।

সিরাজুল ইসলাম মনে করেন, গবেষণাটির মাধ্যমে কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তিবান্ধব ব্যবসার সঙ্গে পরিচিত করার পাশাপাশি তাঁরা কিভাবে প্রযুক্তিকে গ্রহণ ও ব্যবহার করছেন, তা জানা সম্ভব হবে। তা ছাড়া একেবারেই দরিদ্র গ্রামীণ অঞ্চলে মানব উন্নয়নে আইসিটি কিভাবে ভূমিকা পালন করে, সেটিও জানা সম্ভব হবে। তার আগে বর্তমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশের কৃষকদের যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করা, কৃষকদের মোবাইল ব্যবহার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, বাজার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ইত্যাদি কাজ করতে হবে। তাঁর গবেষণাপত্রের শিরোনাম ছিল ‘সংযুক্তিহীনদের সংযুক্তকরণের মাধ্যমে সুযোগ নির্মাণ: বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য মুঠোফোনভিত্তিক কৃষিবাজার তথ্যসেবা প্রদান’।

এই গবেষণাপত্রই সিরাজুলকে এনে দেয় দারুণ এক সম্মাননা। ২০১২ সালে পান ‘বরিস লেনগেফর্স দ্বিতীয় সেরা ডক্টরাল থিসিস’ পুরস্কার। বরিস লেনগেফর্স মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার। সুইডেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির সেরা তিন গবেষণাপত্রই শুধু এ পুরস্কার পায়। এটির নামকরণ করা হয়েছে সুইডেনের প্রথিতযশা কম্পিউটার প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী অধ্যাপক বরিস লেনগেফর্সের স্মরণে। বরিস লেনগেফর্স (১৯১৫-২০০৯) ছিলেন স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সিস্টেমস অ্যান্ড সায়েন্স এবং স্টকহোমের রয়াল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অ্যামিরেটাস প্রফেসর।

তথ্যপদ্ধতিকে বিজ্ঞানে উন্নীত করার পেছনে পৃথিবীর যে কজন মানুষ অসামান্য অবদান রেখেছেন তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম। লিখেছেন বেশ কটি বইও। ‘সুইডিশ একাডেমি অব ইনফরমেশন সিস্টেম’ ২০১১ সালে চালু করে ‘বরিস লেনগেফর্স’ পদক। মূলত কৃষিবাজার নিয়ে গবেষণা ও স্বীকৃতিই সিরাজুলের সামনে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়।

অরেব্রো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেটিকস বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। এখন তিনি সহযোগী অধ্যাপক। বিদেশে থেকেও দেশের কাজ করে চলেছেন সিরাজুল। ২০০৮ সালে গড়ে তুলেছেন ‘বাংলাদেশ সেন্টার ফর ই-গভর্নেন্স’।

অলাভজনক ও অরাজনৈতিক এ প্রতিষ্ঠানের কাজ হলো জনপ্রশাসনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কার্যকর ও আধুনিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.