খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (রঃ) ওরশ শুরু পহেলা মার্চ

বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলাম প্রচারক সুফী সাধক, ওলিয়ে-কামেল সিরাজগঞ্জ হযরত শাহ সুফী খাজা বাবা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রঃ)-এর ২০২২ সালের ওরশ আগামী ১ মার্চ ১৬ ফাল্গুন মঙ্গলবার হতে শুরুহবে।
৩দিন ব্যাপি বাৎসরিক এ দিন বাদ ফজর খাজা এনায়েতপুরী (রঃ) মাজার জিয়ারতসহ ধর্মীয় নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর সত্য তরিকার আল্লাহ আকবার লেখা ঝান্ডা উড়িয়ে ঐতিহ্যের বাৎসরিক ১০৭ তম ওরশ শুরু হবে। যাহার ফলে দরবার শরীফ কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন গ্রহন করেছে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ওমিক্রমের বিস্তার রোধে সরকারের স্বাস্থ্য বিধি মেনে ছোট করা হয়েছে ওরসের কলেবর। ফলে দেশ বিদেশের অনুসারীদের মধ্যে নারী, বৃদ্ধ, শিশু ও অসুস্থ জাকের ভাই-বোনদের অনুষ্ঠানে না আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মাস্ক ছাড়া বিশ্ব শান্তি মঞ্জিল এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফের ৫টি প্রবেশ পথ দিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ রাখার পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কারের ব্যবস্থা রেখেছে কর্তৃপক্ষ দরবার শরীফ কর্তৃপক্ষ, এছাড়া করোনার ক্রমশ বিস্তারের ফলে বসছে না শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলা।
এদিকে, খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এনায়েতপুর-সিরাজগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরী করা হচ্ছে সুবিশাল তোরণ নির্মাণ, আলোকসজ্জা এবং ভক্তদের মাঝে মাস্ক বিতরনের প্রস্তুতি।
জানা গেছে, ভারতের প্রখ্যাত ওলিয়ে কামেল খাজা সৈয়দ ওয়াজেদ আলী (রঃ) এর শান্তি ও আদর্শের পথে ইসলাম প্রচারে ভোগ বিলাসী জীবন বিরোধী খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (রঃ) ইসলাম ও সুফীবাদের দর্শন ভারতের আসামসহ সারা বাংলায় প্রচারে খেলাফত প্রাপ্ত হন।
কিছুদিন অতিবাহিত হলে নিজ ভূমি সিরাজগঞ্জ এনায়েতপুরে খানকা স্থাপন করে শুরু করেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শান্তির তরিকা প্রচার ও সুফী বাদের বিস্তার কাজ, তারপর এনায়েতপুরেই তিনি বিয়ে করে শুরু করেন সংসার জীবন। জনক হন ৮ কন্যা এবং ৫ ছেলে সন্তানের। এদিকে ১৯১৫ সালে তার আত্বীয় ও অনুসারীদের পরামর্শ ও সহযোগীতায় এনায়েতপুর দরবারে শুরু করেন ওরশ শরীফ। এতে সারাদেশ থেকেই তার ভক্ত মুরিদানরা এখানে সমবেত হতে থাকেন, যাহা ধীরে-ধীরে অগনিত ভক্তদের আগমনে মহাসমাবেশে রুপ নেয়।
এমন সময় তার সংস্পর্শে এসে ১২শত পীর আওলিয়া খেলাফত প্রাপ্ত হন। যারমধ্যে ফরিদপুরের সদরপুরের প্রখ্যাত আটরশি পীর, চন্দ্রপাড়া পীর, ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ পীর, টাঙ্গাইল প্যারাডাইস পাড়া, কুমিল্লার ইসলামাবাদ, ঢাকার শ্যামলী বাগী, মাতুয়াইল, জামালপুরের সাধুরপাড়া মোসলেম নগর, যশোরের ঘুনী দরবার শরীফ, ভারতের আসামের গণি খলিফার দরবার শরীফ অন্যতম। তারা একই ভাবে খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রঃ) সুফীবাদের আদর্শ ও ইসলাম প্রচার করছেন।
এরপর মহান মুর্শিদ খাজা বাবা ইউনুছ আলী (রঃ) বাংলা ১৩৫৮ সনের ১৮ ফাল্গুন পরলোক গমন করেন। অতীতে তার দরবারে প্রতি ইংরেজী বছরের শুরুতেই ওরশ হলেও গতবারের মত এবারও ১০৭ তম ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হবে ৭০ তম ইন্তেকাল দিবসে। তবে ৩দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু ২ দিন আগে হতেই শুরু হবে। এ লক্ষে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহন করেছে এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফ কর্তৃপক্ষ।
ক্রমশ করোনা বৃদ্ধির ফলে অনুষ্ঠানের কলেবর সংক্ষিপ্ত হওয়ায় ভারতের আসাম হতে অনেক ভক্ত এবছর আসতে পারবে না। তবে দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে অগনিত ভক্তবৃন্দের আগমন ঘঠবে। এজন্য ওরশ শরীফের আয়োজনের সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে’ বিশ্ব শান্তি মঞ্জিল সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফকে সাজানো হচ্ছে অনন্য সাজে নানা ফুলের সৌরভে।
সয়দাবাদ-বেলকুচি-এনায়েতপুর আঞ্চলিক সড়কে, খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল গেইটসহ মাজারে প্রবেশ পথে করা হচ্ছে ৩টি দৃষ্টিনন্দন তোরণ ও দরবারে প্রবেশ মুখে প্রায় ২ কিলোমটার জুড়ে আলোকসজ্জার কাজ।
চলছে ওযু-গোসলের জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, খাবার মাঠ সংস্কার। সু-বিশাল খাবার মাঠটিতে একসাথে এক বৈঠকে ১৫ হাজার মানুষ খেতে পারবে। এখানে ২০ ঘন্টাই থাকবে খাবারের সব আয়োজন, এছাড়া পাকশালার প্রসস্থতাও বাড়ানো হয়েছে। ৪টি পাকশালায় ২০০টির মত চুলায় চলবে সর্বক্ষন রান্নার কাজ। এতে ৫ শতাধীক বাবুর্চি স্বেচ্ছাশ্রমে রান্নার কাজে নিয়োজিত থাকবে প্রতিক্ষণ। খাবার পরিবেশনে অর্ধ লক্ষাধিক মাটির থালার সানকি রাখা হয়েছে প্রস্তুত।
এছাড়া জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ হতেও গ্রহন করা হয়েছে নানা নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দরবারের ২ শতাধিক চৌকষ মোজাদেদ্দীয়া আনসারসহ অন্তত ১০ হাজারের মত মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত থাকবেন। বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে করোনার বিস্তার ঠেকাতে এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফের ৫টি প্রবেশ পথে। এখানে আগত সকল ভক্তদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কারের পর প্রত্যেকের মাঝে বিতরন করা হবে মাস্ক বলে জানিয়েছেন দরবার শরীফ কর্তৃপক্ষের মুরাদ আহমেদ খান, পেশ ইমাম মাওঃ আব্দুল আওয়াল, আনিসুর রহমান কমান্ডার ও মাহফুজুর রহমান বাবলু।
তারা জানান, মিলাদ-দোয়া মহাফিল, হামদ-নাত, গজল, জিকির-ধর্মীয় আলোচনার এ ওরশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে ১০টি বিশেষ নির্দেশনা গ্রহণ করা হয়েছে। আয়োজন ছোট করার পাশাপাশি মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ছাড়া কাউকে দরবারে প্রবেশ করতে দেয়া হবেনা।
এদিকে গত বছরের মত এবারও নারী, বৃদ্ধ, শিশু ও অসুস্থদের ওরশে আসা নিষেধ করা হয়েছে। আশা করছি অতীতের ধারাবাহিকতায় সকলের সহযোগীতায় এবারের ওরশ শরীফ ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শেষ হবে।
আগামী ১৮ ফাল্গুন ৩ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় আখেরী মোনাজাতে দরবার শরীফের বর্তমান গদ্দিনিশী’ হুজুর পাক হযরত খাজা কামাল উদ্দিন নুহু মিয়ার মোনাজাত পরিচালনায় বিশ্ব মানবতার মঙ্গল কামনায় ঐতিহ্যের এ ধর্মীয় অনুষ্ঠান সমাপ্তি হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি এম মুছা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.