ক্রিকেটকে চিরতরে বিদায় জানালেন হরভজন

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল গুঞ্জন। শেষমেশ সত্যি হল সেই আশঙ্কাই। ক্রিকেট প্রেমীদের অবিস্মরণীয় সব স্মৃতি উপহার দিয়ে খেলা থেকে বিদায় নিলেন হরভজন সিং।
আজ শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেন ভাজ্জি।
এদিন নিজের টুইটার হ্যাণ্ডেলে হরভজন লেখেন, ‘সব ভালো জিনিসেরই একটা শেষ থাকে। আজ আমি সেই খেলাকে বিদায় জানাচ্ছি, যেটা আমাকে জীবনে সবকিছুই দিয়েছে। ২৩ বছরের দীর্ঘ এই যাত্রাকে যাঁরা মনোরম ও স্মরণীয় করে রাখতে সাহায্য করেছেন, তাঁদের সকলকে কৃতজ্ঞ জানাই। আন্তরিক ধন্যবাদ আপনাদের।’
একইসঙ্গে ইউটিউবে একটি ভিডিও-ও পোস্ট করেছেন হরভজন। তাতে ভাজ্জি বলেছেন, ‘ভারতের জার্সি পরে যখনই খেলতে নেমেছি, তার থেকে বড় অনুপ্রেরণা আর ছিল না। কিন্তু একটা সময় আসে, যখন জীবনে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। জীবনে সামনে এগোতে হয়। গত কয়েক বছর ধরেই আমি একটা ঘোষণা দিতে চাইছিলাম। ভাবছিলাম যে, কবে আপনাদের সঙ্গে এই মুহূর্তটা ভাগ করে নেব। আজ আমি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। হয়তো অনেকদিন আগেই অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু অফিসিয়ালি ঘোষণা করতে পারিনি।’
ওই ভিডিওতে হরভজন আরও বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই সক্রিয় ক্রিকেট খেলিনি। কলকাতা নাইট রাইডার্সের সঙ্গে আমার দায়বদ্ধতার কারণেই আগে ঘোষণা দিতে পারিনি। কিন্তু মৌসুমের মাঝপথেই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। বাকিদের মতো আমিও ভারতের জার্সিতেই অবসর নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সবার ভাগ্য সমান হয় না। কিন্তু যে দলের হয়েই আজ পর্যন্ত খেলেছি, তাদের হয়ে শতভাগই দিয়েছি।’
হরভজন সিং ১৯৯৮ সালে বাঙ্গালোরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট দিয়েই অভিষেক করেন। প্রথম ম্যাচে দু’টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। পরের মাসেই শারজায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। এরপর দু’ধরনের ফরম্যাটেই ভারতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠেন ভাজ্জি। বিশেষত, ভারতের মাটিতে অনিল কুম্বলের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য জুটি গড়ে তোলেন তিনি।
কেরিয়ারের শুরুর দিকে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে তদন্তের মুখে পড়তে হয়েছিল হরভজনকে। পাশাপাশি শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগও উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজে কুম্বলে চোট পাওয়ায় তৎকালীন ভারতীয় দলের অধিনায়ক সৌরভ দলে নেন হরভজনকে। সেই সিরিজে দুরন্ত খেলেছিলেন হরভজন। গোটা সিরিজে ৩২ উইকেট নেওয়াই শুধু নয়, ইডেন গার্ডেন্সে তাঁর সেই হ্যাটট্রিক এখনও লোকের চোখে ভাসে। স্টিভ ওয়ের দলের বিজয়রথ থামিয়ে দিয়েছিল ভারত। ভিভিএস লক্ষ্মণ এবং রাহুল দ্রাবিড়ের ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি হরভজনের বোলিংয়ের কথাও ভুললে চলবে না।
ক্যারিয়ারে একাধিক বার চোটের কবলে পড়েছেন ভাজ্জি। ফিরেও এসেছেন। ২০০৩ বিশ্বকাপজয়ী দলেও ছিলেন। কিন্তু ফাইনালে রিকি পন্টিংয়ের হাতে বেদম মার খাওয়াটাই তাঁকে সমালোচনার মুখে ঠেলে দেয়। কিন্তু সেই ধাক্কাও একসময় কাটিয়ে ওঠেন হরভজন।
পিছু ছাড়েনি বিতর্কও। ২০০৭-০৮ সালে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের সঙ্গে তাঁর সেই ঝামেলার কথা বহুল-চর্চিত। ক্রিকেটবিশ্বে যা পরিচিত ‘মাঙ্কিগেট’ নামে। এরপর ২০০৮ সালে আইপিএল-এর একটি ম্যাচে শ্রীশান্তকে চড় মারার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।
এরপর ২০১৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শেষ টেস্ট খেলেছিলেন। শেষ একদিনের ম্যাচও খেলেছিলেন ওই বছরেই। ২০১৬ সালে দেশের হয়ে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তাঁর প্রতিপক্ষ ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত।
১৭ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১০৩টি টেস্টে তাঁর শিকার ৪১৭টি উইকেট। ২৩৬টি একদিনের আন্তর্জাতিকে হরভজনের উইকেট সংখ্যা ২৬৯। আর ২৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২৫টি উইকেট নিয়েছেন ভাজ্জি।
ভারতের হয়ে খেলা ছাড়াও আইপিএল-এর একাধিক দলে দেখা গেছে তাঁকে। চলতি বছর আইপিএল-এর প্রথমার্ধে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে তিনটি ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্য়াঙ্গালোরের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ খেললেও কোনও উইকেট পাননি ভাজ্জি।
তাই সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজিত প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় পর্বে তাঁকে আর কোনও ম্যাচ খেলায়নি কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্ট।
হরভজনের ঘনিষ্ঠ মহলকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের দাবি, আইপিএল-এ কোনও দলের পরামর্শদাতা, মেন্টর কিংবা অ্যাডভাইজরি গ্রুপের সদস্য হয়ে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন এই কিংবদন্তি স্পিনার। নিলাম থেকে কোন ক্রিকেটারকে নেওয়া উচিত সে ব্যাপারেও মূল্যবান পরামর্শ দেবেন হরভজন সেই সংশ্লিষ্ট দলকে।
আইপিএলের বেশিরভাগ সময়টা মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সেই কাটিয়েছেন ভাজ্জি। আইপিএল-এ হরভজন ম্যাচ খেলেছেন ১৬০টি, উইকেটের সংখ্যা ১৫০। সেরা বোলিং চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে ১৮ রানে ৫ উইকেট। ২০১৩ সালের আইপিএল-এ ১৯ ম্যাচে ২৪ উইকেট পান। ২০১৫ সালের আইপিএল-এ ১৮টি, ২০১০ সালের আইপিএলে ১৭টি এবং ২০১১ ও ২০১৪ সালের আইপিএল-এ ১৪টি করে উইকেট দখল করেন। ২০০৮ থেকে ২০১৯ সালের আইপিএল অবধি টানা খেললেও ব্যক্তিগত কারণে ২০২০ সালে মাঠে নামতে চাননি। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.