কুড়িগ্রামে সাবেক মেম্বারের হুমকীতে আতঙ্কিত একটি সংখ্যালঘু পরিবার

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: ছেলের হত্যা চেষ্টাকারী গ্রেফতারের আগেই জামিন নিয়ে এসে আবারো প্রাণনাশসহ ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকী দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এতে শঙ্কায় দিন পার করছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নেওয়াশী বাজার সংলগ্ন পূর্ব রাবাইটারী গ্রামের সংখ্যালঘু শ্যামলাল রবিদাস ও তার পরিবারের লোকজন। শ্যামলাল রবিদাস নিজ বাড়িতেই বাই সাইকেল মেরামতের কাজ ও ছেলে সুভাষচন্দ্র রবিদাস নেওয়াশী বাজারে জুতা সেলাই এর কাজ করেন।

মামলা সুত্রে জানা গেছে, একই উপজেলার বোয়াইলভীড় গ্রামের মৃত খয়ের মামুদের ছেলে সাবেক মেম্বার বজলে রহমানের সাথে ভিটেমাটির ১৩ শতাংশ জমির সীমানা জটিলতার বিরোধ চলছে।

সেই বিরোধের জের ধরে গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ভাড়াটে মাস্তান দিয়ে সুভাষকে দোকান থেকে তুলে বাজারের রফিকুল ইসলামের ফাঁকা রুমে নিয়ে গিয়ে মারধর ও গলা চেপে হত্যার চেষ্টা করে। তার গোঙ্গানি শুনে স্থানীয় লোকজন তাকে মূমুর্ষূ অবস্থায় উদ্ধার করে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করান। পরে তার বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।

কিন্তু আসামিরা ওই মামলায় জামিন নিয়ে এসে পুনরায় প্রাণনাশসহ ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শুভাষ চন্দ্র। আবারো নির্যাতনের শিকার হওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত রয়েছেন শ্যামলাল রবিদাস ও তার পরিবারের সদস্যরা।

স্থানীয় ছিট রাবাইতারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোখলেছুর রহমান, নগরাজপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম, নুরজামাল (৫৯), আহাম্মদ আলী (৫৮), আজাদ আলী (৪৮) জানান, তাদের ২৬ শতক ভিটেমাটি শ্যামলালের বাবা খুম লাল রবিদাস ও চাচা খোকা লাল রবিদাসের মধ্যে সমানভাবে ভাগ হয়।

পরে খোকা লাল রবিদাসের চার ছেলে হরিদাস রবিদাস, কালিদাস রবিদাস, মন্টু রবিদাস ও হরিচরণ রবিদাস মিলে ১৩ শতক ও খুম লাল রবিদাসের এক ছেলে শ্যামলাল রবিদাস ১৩ শতক জমি পায়। ৭/৮ মাস আগে শ্যামলালের চাচাতো ভাই কালিদাস রবিদাস সেই জমিতে থাকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দেয়া জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের সরকারি ঘর ভেঙ্গে দিয়ে স্থানীয় প্রভাব শালী সাবেক মেম্বারের কাছে বিক্রি করে অন্যত্র চলে যায়।

বজলে মেম্বার সেই জমি ক্রয়ের পর তার সেই ঘর ভেঙ্গে অংশের চেয়েও বেশি জায়গা দখল করে পাকা ঘর স্থাপন করেন। তখন শ্যামলাল রবিদাস মেম্বারকে তার ১৩ শতক জমি সঠিক রেখে সরিয়ে ঘর তোলার কথা বলেন। সে কথা কর্ণপাত না করলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে বিচার প্রার্থনা করেন শ্যামলাল।

স্থানীয় লোকজন কয়েকবার বৈঠক করলেও তা মানেনি মেম্বার। গায়ের জোর দেখিয়ে তার ঘরের টিনের চাল ভেঙ্গে ঘেঁষে ঘর উত্তোলন করেন। ছেলে সুভাষ এর প্রতিবাদ করায় মেম্বার তার ভাড়াটে মাস্তান দিয়ে সুভাষ কে দোকান থেকে তুলে নিয়ে মারধর করেন। একটি অসহায় পরিবারের উপর জুলুম-নির্যাতনের সুষ্ঠ বিচারের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও ভুক্ত ভোগীর পরিবার।

সুভাষের বাবা শ্যামলাল রবিদাস ও তার ছেলে সুভাষ চন্দ্র রবিদাস বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানায়, উপজেলার ছিট রাবাইটারী গ্রামের আইয়ুব আলী সরকারের ছেলে খাইরুল ইসলাম সরকার(৩২), রাবাইটারী গ্রামের মৃত আজগার আলী মাস্টারের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৫), মৃত আবু তালেবের ছেলে সিরাজুল ইসলাম পাঠান (৩৩), রামরাম সেন গ্রামের মনসের আলীর ছেলে ফারুক হোসেন (২৮) জামিনে এসে তারা আমাকে আবারো হত্যা সহ বাড়ী জালিয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এতে আমি নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি।

এ ব্যাপারে সাবেক মেম্বার বজলে রহমানের সাথে কথা হলে তিনি সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, সেদিনের মারধরের ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না এবং যারা সুভাষকে মারধর করেছিলেন তাদের সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। তিনি কালিদাসের কাছ থেকে জমি ক্রয় করে নিয়েছেন। সেখানে অবস্থিত প্রধান মন্ত্রীর দেয়া সরকারি ঘরের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে জানান, যার ঘর সে ভেঙ্গে নিয়ে গেছে।

মামলার তদন্ত কারী কর্মকর্তা এস আই হাবিবুর রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, বাদী থানায় জিডি করলে বিবাদীদের জামিন না মন্জুরের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি মো. হাফিজুর রহমান হৃদয়। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.