রাজবাড়ী প্রতিনিধি: রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলাম বিহীন পুরনো রড ও অ্যালুমিনিয়াম বিক্রির অভিযোগ উঠেছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইসরাত জাহান উম্মনের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, সরকারি মালামাল নিলাম প্রক্রিয়ায় বিক্রির নিয়ম থাকলেও তা অমান্য করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত ৫৭২ কেজি পুরনো রড ও অ্যালুমিনিয়াম স্থানীয় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি কালুখালীতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেন প্রয়াত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি। উদ্বোধনের পর থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত কমকর্তাদের বিরুদ্ধে।
গত ২৬ এপ্রিল সকালে কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মাসিস্ট আক্তারুজ্জামান স্থানীয় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী মো. রমজান আলী মোল্লাকে ডেকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বিভিন্ন নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত পুরনো ৫৭২ কেজি রড ও অ্যালুমিনিয়াম মালামাল বিক্রি করা হয়।
ব্যবসায়ী মো. রমজান আলী মোল্লা তফাদিয়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ মনতাজ আলী শেখের ছেলে। ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী ৫৪ টাকা কেজি দরে ৫৭২ কেজি রড ও ১৯০ টাকা কেজি দরে ১০ কেজি অ্যালুমিনিয়াম কিনে নেয়। পরে তিনি ওই পুরনো রড ও অ্যালুমিনিয়াম কালুখালী বাজারের অপর ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল দুপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে রাখা বিভিন্ন সময় কাজে ব্যবহৃত পুরানো রড শ্রমিক দিয়ে বাইরে বের করা হচ্ছে। এ সময় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী মো. রমজান আলী মোল্লা উপস্থিত থেকে ভ্যান ভর্তি করে পুরনো রড ও অ্যালুমিনিয়ার নিয়ে যায়।
ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী মো. রমজান আলী মোল্লা বিটিসি নিউজকে জানান, হাসপাতালে চাকরিজীবী আক্তারুজ্জামান আমাকে ফোন করে কিছু পুরনো রড বিক্রির কথা জানান। আমি দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে ৫৪ টাকা কেজি দরে ৫৭২ কেজি রড ও ১৯০ টাকা কেজি দরে ১০ কেজি অ্যালুমিনিয়াম কিনেছি এবং তা অন্য ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেছি। এ সময় হাসপাতালে ম্যাডাম, আক্তারুজ্জামানও উপস্থিত ছিল। মালামাল বিক্রিয়ের টাকা আমি হাসপাতালে চাকরিজীবী আক্তারুজ্জামানের কাছে দিয়েছি। সরকারি মাল কিনে এখন বিপদে পড়ে গেছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইসরাত জাহান উম্মনের কাছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কী পরিমাণ রড বিক্রি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বিটিসি নিউজকে বলেন, কোথাকার রড, কোথায় বিক্রি হয়েছে এটাই খুঁজে পাচ্ছি না। হাসপাতাল থেকে মালামাল চুরি না হলে বিক্রির বিষয়টি আমার জানার কথা।
তিনি আরও বলেন, একটু মিথ্যা খবর নিয়ে আমাকে হ্যারেজ করা কী ঠিক? এটা আপনাদের কাছ থেকে আশা করি না। ট্রেন্ডারবিহীন বিক্রি হয়েছে কী? বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখি অভিযোগটা কতটুকু সত্য। পরিস্কার-পরিছন্নতার কাজে মালামাল বিক্রিতে ট্রেন্ডার করতে হয় না, ওটা কমিটি করে বিক্রি করা হয়। আপনাকে সঠিক তথ্য দিতে পারছি না।
কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহুয়া আফরোজ বিটিসি নিউজকে বলেন, সরকারি দপ্তরের কোনো মালামাল টেন্ডারবিহীন বিক্রির নিয়ম নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কীভাবে টেন্ডারবিহীন পুরনো রড বিক্রির করেছেন বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি আজকেও হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সে বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কোনো কিছু জানায়নি।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন বিটিসি নিউজকে বলেন, এ বিষয়টি আমি জানি না। যদি বিক্রি করে থাকে তাহলে সরকারি বিধি মেনেই করা হয়েছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.