জয়পুরহাটপ্রতিনিধি: প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কঠোর নজরদারীতে কিছু সময় ঝিমিয়ে পড়েছিল জয়পুরহাটের আলোচিত কালাই উপজেলার কিডনি বেচা-কেনার হাট। বর্তমানে নতুন নতুন দালালদের তৎপরতায় আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। কিডনির হাট চাঙ্গা হওয়াতে নতুন করে অভিযান শুরু করেছে জেলা পুলিশ প্রশাসন।
শুক্রবার দিবাগত রাতে জয়পুরহাটের কালাই ও পাঁচবিবি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে কিডনি বেচাকেনা চক্রের সাথে জড়িত ৭ দালাল সদস্যকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশ।
আটককৃত দালাল চক্রের সদস্যরা হলেন: কালাই উপজেলার থল গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে সাহারুল ইসলাম (৩৮), একই উপজেলার উলিপুর গ্রামের ফরিদুল ইসলামের ছেলে ফরহাদ হোসেন ওরফে চপল (৩১), জয়পুর বহুতি গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে মোশারফ হোসেন (৫৪), ভেরেন্ডি গ্রামের জাহান আলীর ছেলে শাহারুল ইসলাম (৩৫), জয়পুর বহুতি গ্রামের মৃত মোবারক হোসেনের ছেলে মোকাররম হোসেন (৫৩), দূর্গাপুর গ্রামের মৃত বছির উদ্দিন ফকিরের ছেলে সাইদুল ইসলাম ফকির (৪৫) এবং পাঁচবিবি উপজেলার গোড়না আবাসনের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (৪০)।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মাছুম আহম্মদ সাংবাদিকদের জানান, অবৈধভাবে কিডনি বেচাকেনা বন্ধ করতে শুক্রবার দিবাগত রাতে জয়পুরহাটের কালাই ও পাঁচবিবি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে নতুন ও পুরাতন মিলে মোট ৭ দালাল সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
আটককৃত দালালরা দীর্ঘদিন ধরে জয়পুরহাট জেলাসহ পাশ্ববর্তী নওগাঁ, গাইবান্ধা, দিনাজপুর এলাকার নিরীহ, ঋণগ্রস্ত ও হতদরিদ্র মানুষদের ফুসলিয়ে টাকার লোভ এবং অল্প সময়ে বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে নারী এবং পুরুষদের কিডনি বিক্রি করে আসছিল। এসব নিরীহ মানুষরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দালালদের খপ্পরে পরে প্রথমে ৪/৫ লাখ টাকায় চুক্তিতে তাদের মূল্যবান কিডনি বিক্রি করে দেন। ভারত ও দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে তাদের কিডনি দিয়ে নামমাত্র চিকিৎসা নিয়ে যখন দেশে ফিরেন, তখন দালালরা বিমাবন্দরেই তাদের হাতে ১/২ লাখ টাকা হাতে ধরে দিয়ে সেখান থেকে বিদায় করে দেন।
পরবর্তীতে কিডনি দাতারা নিজের অঙ্গ বিক্রি করে ঝুঁকি নিয়ে জীবন অতিবাহিত করলেও লাভবান হচ্ছেন এসব দালালরা। আবার নিজের কিডনি বিক্রি করে প্রতারিত হয়ে নতুন করে দালাল বনে যাচ্ছেন এসব কিডনি দাতারা।
তিনি আরও বলেন, কিডনি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবদে স্বীকার করেছেন আটককৃত দালালরা। কিডনি বেচাকেনা প্রতিরোধে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান। অবৈধভাবে কিডনি বিক্রি শতভাগ বন্ধ করা না গেলেও অনেকটাই বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ফারজানা হোসেন, সদর সার্কেল মোসফেকুর রহমান, পাঁচবিবি সার্কেল ইশতিয়াক আলমসহ পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.