কসবায় বাদৈর ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার টাকার তালিকায় চেয়ারম্যান এবং প্রবাসী স্বজনদের নাম 

বিশেষ প্রতিনিধি: করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও কর্মহীন দরিদ্র পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের আড়াই হাজার টাকার নামের তালিকা প্রণয়নে কসবা উপজেলার ০৩নং বাদৈর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে।
বাদৈর ইউনিয়নের সর্বত্র সকল শ্রেনীর লোকের মুখে চেয়ারম্যানের এহেন কাজের সমালোচনা শোনা যাচ্ছে। ভূয়া নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র সহ মোবাইল ব্যবহার করে আত্মসাৎ, বিত্তবান ও প্রবাসীদের নাম অর্ন্তভূক্তি, গরীবদের বঞ্চিত এবং স্বজনপ্রীতি করে একই পরিবারে একাধিক নাম অর্ন্তভূক্ত করাতে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়-করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ উপহার হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে কসবা উপজেলার ০৩নং বাদৈর ইউনিয়নের ৪০২ জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়।
উক্ত তালিকা প্রণয়নে অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু জামাল খান বিধি বর্হিভূতভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রস্তুত করেছেন। ৪০২ জনের উক্ত তালিকার ক্রমিক নং ১৭০ নাম হোসনা বেগম, স্বামী- বাকির মিয়া, আইডি নং- ১৯৮৭১২১৬৩১৮৪৮০৬১১ এর অনুকুলে মোবাইল নম্বর ০১৭২৪৪৭৬৩৫৬ এবং ক্রমিক নং ৩৭১ নাম- লিজা আক্তার, স্বামী/পিতা- সালাউদ্দিন আইডি নং- ৭৭৮৮৮৮৫০৩১ এর অনুকুলে সংযুক্ত মোবাইল নাম্বার- ০১৭৫৯৮৫০৪৫৫-এ যোগাযোগ করে জানা যায় নাম ও আইডিধারী এই ব্যক্তি নয় অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার পরিকল্পনা করে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে উক্ত দুইটি ক্রমিকে ভুল তথ্য সংযোগ করা হয়েছে। তালিকার ক্রমিক নং ১৮৭ এবং ২১৬ তে বর্নিত আল-আমিন এবং রুমা আক্তার দুজন স্বামী-স্ত্রী বর্তমান।
স্বজনপ্রীতি করে টাকা পাইয়ে দেওয়ার জন্য স্বামীকে ৮নং এবং স্ত্রীকে ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দেখিয়েছে।অনুরুপ কাজটি করা হয়েছে ক্রমিক নং ৩৯৬ এবং ৩৯৮ এর বেলায়। ৩৯৬ ক্রমিকধারী মোঃ শিশু মিয়া এবং ৩৯৮ ক্রমিক ধারী মরিয়ম বেগম হলেন স্বামী-স্ত্রী। এছাড়া এই দম্পত্তির দুই ছেলে প্রবাসে ভাল অবস্থানে রয়েছে এবং সমাজে বিত্তবান হিসেবে পরিচিত।
উপরোক্ত বর্ণনার ব্যাতিক্রম হয়নি অত্র ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার মোঃ রতনের পরিবারের ক্ষেত্রে। ২৮৫ নং ক্রমিকে বর্ণিত খালেদা আক্তার যথাক্রমে মেম্বারের  স্ত্রী।  ২২০ নং ক্রমিকে বর্ণিত শামীমা নাসরিনের স্বামী ওমর ফারুক একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার (লেদার)।
তিনি একটি স্বনামধন্য কোম্পানীতে অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। একই পরিবারের একাধিক নামের তালিকাটি তিনি আরোও দীর্ঘ করেছেন চেয়ারম্যান সাহেবের ভাগিনা-কোটিপতি বাবার সন্তান ৩৭০ নং ক্রমিকে বর্ণিত আশিকুর রহমান এবং ৩৬৮ নং ক্রমিকে বর্ণিত ভাগিনা বউ শিরিন আক্তারের নাম সংযুক্ত করনের মাধ্যমে।
উল্লেখ্য যে, আশিকুরের বাবা বিগত প্রায় ২/৩ যুগের পূর্ব থেকেই সমাজে কোটিপতি হিসেবে সমাধৃত।অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু জামাল খান কর্তৃক প্রণিত তালিকায় গরীবদের বাদ দিয়ে ক্ষমতা আকড়িয়ে রাখার আশায় ধনী ও বিত্তবানদের নাম অন্র্Íভূক্ত করা হয়েছে দ্বিধাহীনভাবে, যেমন-ক্রমিক নং ৩৪২ এ উল্লেখ্য জুনায়েদ খান একজন ছাত্র বটে। তাহার ৪ ভাই প্রবাসী এবং এক ভাই সরকারী চাকুরীজীবি। ওরা যৌথ পরিবারে বসবাস করে।
ক্রমিক নং ৩৪৪ এর পাশে সুজেল খান একজন প্রবাস ফেরত অবিবাহিত যুবক। তাহার বাবা সরকারী চাকুরীজীবী ও দুই ভাই এখনও প্রবাসী। যাহারা গ্রাম ও  এলাকায় স্বাবলম্বী, বিত্তবান এবং অভিজাত পরিবারের বলে পরিচিত। এদিকে ক্রমিক নং ২২৭ হেনা বেগম স্বামী- কামাল আহাম্মেদ ও ক্রমিক নং২৮৪ মাঈন উদ্দিন, পিতা –আব্দুল আজিজ, ক্রমিক নং ৩৯৫ মোঃ শফিক  পিতা-ধন মিয়া প্রবাসে অবস্থানরত।
এছড়া ক্রমিক নং ১৯১ কবির ভূইয়া পিতা- গোলাম আকবর ভূইয়া যারনাকি বর্তমানে পাঁচ ছেলে প্রবাসে বড় ছেলে ঢাকার বড় ব্যবসায়ী।আবু জামাল খান চেয়ারম্যানের প্রণিত তালিকাটি আরো একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছেন।  ৩৪৬ নং ক্রমিকে বর্ণিত মোঃ সাফিজুর রহমান খান, পিতা- সাদেক আহম্মদ খান (সাবালক খান) এর নামটি অর্ন্তভূক্তির মাধ্যমে। কারণ বর্ণিত৩৪৬ নং ক্রমিকধারী হালে বাংলাদেশ রূপালী ব্যাংকের একজন অফিসার (ক্যাশ)। কোম্পানীগঞ্জ শাখা।
সর্বশেষ চেয়ারম্যান সাহেবের পরিবারের যাহারা দরিদ্রের তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হয়েছে তাদের বর্ণনা। ১৭৬ নং ক্রমিকে বর্ণিত ইয়াছিন খান, চেয়ারম্যানের আপন ভাতিজা। পাকা বাড়ী, কোটি টাকার ব্যবসা সহ কি নাই ইয়াসিনের? তাছাড়া ইয়াসিনের বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকুরীজীবী। ৩৩৬ নং ক্রমিকে বর্ণিত তাহমিনা আক্তারের স্বামী প্রবাসী।
তিনি চেয়ারম্যানের ভাতিজা ইয়াছিনের শ্বাশুরী, অর্থাৎ চেয়ারম্যানের বেয়াইন। এছাড়া ৩৪১ নং ক্রমিকে বর্ণিত আছমা চৌধুরী চেয়ারম্যান সাহেবের আপন চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী। যিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে দু‘তলা
বিশিষ্ট নিজ বাড়ীতে বসবাস করেন। ৩৭২ নং ক্রমিক ধারী চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই কাইয়ুম খান ও তার ছেলে উভয়ে প্রবাসী, পৈত্রিক সম্পত্তি অঢেল, শহরে বাড়ি, ছেলে চড়ে ৫লক্ষ টাকার মটর গাড়িতে। তাছাড়া ক্রমিক নং ৩৮০ ও ৩৮৬ আপন দুই ভাই, ৩৪৩ ক্রমিকধারীর স্বামী প্রবাসী, উচ্চবিলাসী জীবন যাপন করেন, ২২৪ ক্রমিক নং এর এক ছেলে সেনাবাহিনী, এক ছেলে প্রবাসী, বিত্তবান। এসব লোক ঈদ উপহার পেলেও অসহায় গরীবরা বঞ্চিত। এছাড়াও অত্র ইউনিয়নের অপরাপর ওয়ার্ড সমুহের তালিকার বিশ্লেষণ আরোও জঘন্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদৈরইউপি চেয়ারম্যান আবু জামাল খান অভিযোগ অস্বীকার করে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের তালিক তিনি তৈরি করেননি। ইউপিসদস্য ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ তৈরিক রেছেন। এই তালিকায়তার কোনো স্বজনের নাম নেই এবং তালিকায় কোনবিত্তবান বা প্রবাসীর নামও নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার তালিকায় বাদৈর ইউপি চেয়ারম্যানের স্বজনপ্রীতির ও অনিয়মের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি জানার পর যাচাই বাচাই করার জন্য তাৎক্ষনিকভাবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বলেছি অভিযুক্ত নামের তালিকায় যারা আছেন চেয়ারম্যান সরাসরি  আমার অফিসে নিয়ে আসতে আমি তাদেরকে দেখব। আর চেয়ারম্যান যদি তাদেরকে সরাসরি হাজির করে না দেখতে পারে তাহলে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
সচেতন জনতা ইউনিয়নবাসী এমন অসম বন্টনের জন্য নিরপেক্ষ, সুষ্ঠ তদন্তের আলোকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে আশাবাদী।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি মোঃ লোকমান হোসেন পলা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.