করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় রাজশাহীতে বাড়তি সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় কোয়া রেন্টাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত, কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় রাজশাহীতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। রাজশাহী ও এর আশেপাশের জেলার মানুষের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিভিন্ন হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠান।

আক্রান্তদের জন্য একটি সম্পূর্ণ হাসপাতালসহ এরইমধ্যে অন্তত সাতটি সেবাকেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

দেশে করোনো আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর থেকে জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্তরা দৌঁড়াচ্ছেন হাসপাতালে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বর্হিঃবিভাগে রোগীর ভিড় বেড়েছে। তবে এখনও রাজশাহীতে করোনা আক্রান্তের কোনো খবর নেই। সন্দেহভাজন কারও নামও আসেনি।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, করোনার সম্ভাব্য সব পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন। এ নিয়ে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক বৈঠক করা হয়েছে। সরাসরি চিকিৎসায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক-নার্সদের জন্যও নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা।

রাজশাহীর পাশে থাকা জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোনামসজিদ স্থলবন্দরে হ্যান্ড থার্মাল ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজশাহী বিভাগে করোনা আক্রান্তদের জন্য অন্তত ৩৫০ শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রোগী বেশি হলে স্কুল বা ফাঁকা কোনো জায়গা প্রস্তুত করারও পরিকল্পনা রয়েছে।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, করোনা রোগী পেলে আমরা সংক্রমন ব্যাধি (আইডি) হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল, ডেন্টাল ইউনিট, পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সহ অন্তত সাতটি সেবাকেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। পাশাপাশি রাখা হয়েছে অতিরিক্ত চিকিৎসক ও নার্স। তাদের নিরাপত্তায়ও বিশেষ পোশাক সরবরাহ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের সভা হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়- বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরকে ২৫০ থেকে ৩০০ এবং জেলা পর্যায়ে কমপক্ষে ১০০ শয্যা প্রস্তুত রাখার। সেই অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। যদি সংক্রমিত হয় এবং তা ব্রেক আউট করে, তবে আমরা কোনো ফাঁকা স্থানে স্কুল বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে সেবাকেন্দ্র বানিয়ে নেব। বিভিন্ন সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানতে চাইলে জেলা রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, করোনা ভাইরাসের জন্য কোনো ওষুধ নেই। সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। যারা বিদেশ থেকে আসছেন তাদের অন্তত ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন থাকতে হবে। সরাসরি সে যাতে পরিবারের সঙ্গে না মেশে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বিদেশ থেকে যারা আসবে তাদের আমরা পরীক্ষা করবো।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, দেশে তিনজনের আক্রান্তের খবর থাকলেও রাজশাহীতে কোনো রিপোর্ট নেই। তবে যেহেতু আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, তাই খুব সাবধানতার সঙ্গে কাজ করছি। যদি ব্যাপকভাবে সংক্রমিত হয়, তবে নির্ধারণ করে রাখা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের ক্যাম্প রাখা হবে। উপজেলা থেকে মহানগর পর্যন্ত এ ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

এদিকে রাজশাহীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহভাজনদের স্থানীয় তিনটি স্টেডিয়ামে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। এছাড়া এ ভাইরাসে নিশ্চিত আক্রান্ত হওয়া রোগীদের ইনফেকশন ডিজিস (আইডি) হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে। এখন পর্যন্ত এই বিভাগে কোন রোগী না পাওয়া গেলেও, পূর্ব পস্তুতির অংশ হিসেবে প্রথমিক ভাবে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

কোয়ারেন্টাইনের জন্য স্টেডিয়াম তিনটি হলো- সপুরা এলাকায় অবস্থিত জেলা মুক্তিযোদ্ধা স্টেডিয়াম, তেরোখাদিয়া এলাকায় অবস্থিত শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান স্টেডিয়াম ও মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স স্টেডিয়াম।

স্টেডিয়ামগুলোকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করার কারণ হিসেবে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক জানান, চিহিৎসা কেন্দ্রগুলোতে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করা হলে অহেতুক রোগী ও তাদের স্বজনদের মাঝে প্যানিক সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া যদি রোগী পাওয়া যায় তবে তাদের পৃথক ভাবে যত্ন নেয়ায় যাবে। তাই এই ব্যবস্থা।

এদিকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় গতকাল সোমবার রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হককে সভাপতি ও রাজশাহী জেলার সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হককে সদস্য সচিক করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওদের সমন্বয়ে পৃথক কমিটি করা হয়েছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.