করোনার আশীর্বাদে, মিশকাত একজন সফল উদ্যোক্তা! 

হাবিপ্রবি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: কোভিড-১৯ এর প্রভাবে যখন দিশেহারা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তখন করোনার সময়কে কাজে লাগিয়ে অনেকেই হয়ে উঠেছেন সফল উদ্যোক্তা। এমনই এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) পরিসংখ্যান বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত মোঃ মিরাজুল আল মিশকাত। তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র গণমাধ্যম সংগঠন হাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মিশকাতের সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনের গল্প তুলে ধরবো আজকের পর্বে!
আপনার উদ্যোক্তা হওয়ার হওয়ার পিছনে কার অবদান?
২০২০ সালে যখন কোভিড-১৯ শুরু হল তখন অনেক দিন বাসায় অপেক্ষায় ছিলাম কবে নাগাদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে। প্রায় তিন মাস অলস সময় অতিবাহিত করার পর মা ও নানির পরামর্শে উদ্যোক্তা হিসাবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করি। মূলত আমার গ্রামের বাসা হাড়িভাঙ্গা আমের জন্য প্রসিদ্ধ অঞ্চল হওয়ায় কাজটি আরো সহজতর হয়ে যায়। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় সম্পৃক্ত থাকায় মার্কেট প্লেস তৈরি করতে খুব বেশি সময় লাগে নি। মূলত পরিবারের সার্পোট আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পথকে সুগম করেছে।
একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি কতদূর এসেছেন?
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবছর তৃতীয় বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছি। আমার অনলাইন প্লাটফর্মের নাম উত্তরের আমঘর। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর অশেষ রহমতে সৎ নিয়ত ও পরিশ্রমের মাধ্যমে একটি জায়গা তৈরি করে নিতে পেরেছি। পাশাপাশি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছি। কথা ও কাজের মধ্যে মিল থাকায় এবং প্রোডাক্ট কোয়ালিটি ভালো হওয়ায় ক্রেতারা সন্তুষ্ট উত্তরের আমঘরের উপর।
এতদূর কিভাবে আসলেন?
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাহিরে আমার একটি পরিচিতি আছে। সেই পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে আমি গ্রাহকদের ভালো মানের প্রোডাক্ট দিয়েছি একদম সুলভ মূল্যে। প্রোডাক্টে ত্রুটি থাকলে ছিলো রিফান্ডের ব্যবস্থা। মূলত নীতি-নৈতিকতা বিশ্বাসযোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা এই বিষয়গুলো এবং মানুষের দোয়া আমাকে এতদূর নিয়ে এসেছে বলে মনে করি।
কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে?
অনলাইন বিজনেস সব সময় চ্যালেঞ্জিং বিষয়। কারণ অনলাইনে মানুষ হরহামেশা প্রতারিত হয় বলে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকবার আমি নিজেও প্রতারণার শিকার হয়েছি। তবে খাদ্য দ্রব্য নিয়ে কাজ করায় কন্ডিশনে আম পাঠানো সম্ভব হয় না। এছাড়া মিঠাপুকুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব বেশি উন্নত না হওয়ায় পন্য পরিবহনে খুব বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হয়। তবে শুরুতে বেশি প্রতিবন্ধকতা থাকলেও সময়ের সাথে সাথে সকল সমস্যার অবসান হতে চলছে। আশা করি দ্রুতই সকল সমস্যার সমাধান ঘটবে। কখনও যদি ভুল করেও খারাপ প্রোডাক্ট চলে যায় তখন গ্রহককে রিফান্ডের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপায় ক্রেতার সন্তুষ্টি।
কি কি আম নিয়ে কাজ করেন?
আমার গ্রামের বাসা হাড়িভাঙ্গা আমের জন্য প্রসিদ্ধ অঞ্চল। পারিবারিক ভাবে প্রায় ৩০ একর জমিতে হাড়িভাঙ্গা আম সহ সাদাআম, ল্যাংড়া, ফজলি, বারি-৪, গৌরমতি, গোপালভোগ, আম্রপলি, কপিল বাংরি সহ বিভিন্ন জাতের সুস্বাধু আম উৎপাদন করা হয়। তাই পরিবারিক ভাবে সব আমই অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করা হয়।
বিগত বছরে কত টাকার আম বিক্রি করেছেন?
উত্তরের আমঘর থেকে দুই ভাবে আম বিক্রি করা হয়। অফলাইনে যে আম গুলি বিক্রি করা হয় সেগুলো সব পাইকারি মূল্যে সরবরাহ করা হয়। আর অনলাইনে যে গুলি সরবরাহ করা হয় তা খুচরা মূল্যে। পাইকারি ও খুচরা মিলে প্রায় ১৬ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি ২০২১ সালে। প্রত্যাশা করছি এবছর আরো বেশি টাকার আম বিক্রি করা সম্ভব হবে উত্তরের আমঘরের মাধ্যমে।
উদ্যোক্তা হিসাবে আপনার লক্ষ্য কি?
উদ্যোক্তা হিসেবে আমার লক্ষ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। আজ হয়তো ছোট পরিসরে শুরু করেছি তবে আগামীতে অনেক বড় করে কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।অনলাইন জগতে অনেক বড় একটি প্লাটফর্ম তৈরি করা ইচ্ছা আছে যেখানে শত শত মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বর্তমানে ৮ জন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি।
আগামীতে পরিকল্পনা আছে যাতে শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি। তবে যেখানেই থাকি আর যাই করি মূলত লক্ষ্য মানুষের সেবা করা। আগামীতে যেন মানুষের সেবায় নিজেকে আরো ভালোভাবে নিয়োজিত করতে পারি সেজন্য সকলের দোয়া চাই।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হাবিপ্রবি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি মোঃ মিরাজুল আল মিশকাত। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.