ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের অভিন্ন দাবি, খালেদার মুক্তি, বিজয় আমাদের অনিবার্য: ড. কামাল

 

সিলেট ব্যুরোজাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সমাবেশে থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জনগণকে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন জোটের নেতারা। প্রস্তাবিত সাত দফা দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মুক্তির জোরালো দাবি জানিয়েছেন প্রায় সব নেতাই।

আজ বুধবার দুপুর ২টায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দাবি আদায়ের আন্দোলনে যাওয়ার লক্ষ্যে পূর্বে প্রথমবারের মতো সিলেট নগরীর রেজিস্ট্রি মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশটি শুরু হয়।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু,, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, মো. শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আমান উল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামার হায়দার, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, এলডিপির মহাসচিব ডা. রেদোয়ান আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়কারী শহীদুল্লাহ কায়সার, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা আমীন, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, জেএসডির নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন প্রমুখ।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ঐক্যফ্রন্টের সিলেট কর্মসূচির সমন্বয়ক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আমরা ৭ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। সংবিধানের ৭নং অনুচ্ছেদে রয়েছে জনগণ দেশের মালিক। কিন্তু বর্তমানে জনগণের সেই মালিকানা নেই। এটা আদায় করে নিতে হবে। আমাদের ১ নম্বর দাবি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এর সাথে আরো ৬টি দাবি রয়েছে। এসব দাবির কথা গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘৭ দফাকে হালকাভাবে নেবেন না। এটা অনেক মূল্যবান। এটা জনগণের হারিয়ে ফেলা অধিকার, দেশের মালিকানা ফিরিয়ে আনার দাবি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল, জনগণ ক্ষমতার মালিক। সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের মুষ্ঠিমেয় মানুষের উন্নয়নে উন্নয়ন হয় না। আমরা চাই, ১৬ কোটি মানুষের উন্নয়ন। আমরা ইনশাআল্লাহ বিজয়ী হবো। আমাদের বিজয় অনিবার্য।’

ড. কামাল বক্তব্যের শেষপর্যায়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান।

প্রধান বক্তা হিসেবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সিলেটবাসী অনেক ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন। আজ আরেকটি ইতিহাসের জন্ম দিচ্ছেন। এই ইতিহাস হচ্ছে গণতন্ত্র মুক্তির ইতিহাস।’

তিনি বলেন, ‘আজ থেকে নতুন লড়াইয়ের শুরু হলো। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদের অধিকার। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, তফসিল ঘোষণার আগে পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। ইভিএম দেয়া চলবে না। ডিজিটাল চুরি করতে দেয়া হবে না। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা আ স ম আব্দুর রব বলেন, দেশ ডাকাতের হাতে পড়েছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার উসকানি দেবে। তাই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে হবে। আরেকবার গায়ে হাত দিলে সবাই রাস্তায় নামবে। এ লড়াই বাঁচার লড়াই, ভোটের লড়াই, সুষ্ঠু নির্বাচনের লড়াই।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা এবং এ জোটের সিলেট সমাবেশের সমন্বয়ক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, খেলার টিম ও রেফারি একসাথে চলতে পারে না। হয় খেলা ছাড়ুন না হয় রেফারির ভূমিকা ছাড়ুন।

নিখোঁজ থাকা বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী সম্পর্কে সুলতান মনসুর বলেন, ‘ইলিয়াস আলী একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। এমসি কলেজে থাকা কালে তিনি আমার অধীনে রাজনীতি করতেন। পরে তিনি ঢাকায় গিয়ে ছাত্রদলে যোগ দেন।’

তিনি বলেন, যেটি কারাগার নয় সেটিকে কারাগার বানিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। সরকার ও সরকার প্রধানকে খালেদা জিয়াকে মুক্তিসহ দেশে সকল প্রকার জুলুম অত্যাচার বন্ধ করে দ্রুত নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এসময় তিনি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তব্য শেষ করার আগে বলেন, আমি যতদিন বাঁচবো ততোদিন জনগণের সাথেই থাকবো।

 

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘সরকারকে সংলাপে বসতে বাধ্য করা হবে। তাদেরকে সমঝোতায় আসতে হবে। যদি সমঝোতায় না আসেন, তবে বুঝতে হবে দেশে গণতন্ত্র চান না। মানুষ এর উপযুক্ত জবাব দেবে।’

তিনি বলেন, ‘ঘুষ ও দুর্নীতি ছাড়া কোনো কাজ হয় না। বড় বড় দুর্নীতি হয়েছে। এগুলোর বিচার করতে হবে। আমরা ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি পয়সার হিসাব নেব। তারা ক্ষমতায় এসে বিদেশে সম্পত্তি করেছে।’

এসময় তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন।

নির্বাচন দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সরকার বলছে লাখ-লাখ, হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করেছে। তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে এত ভয় কেন?

তিনি বলেছেন, সারাদেশের মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে এক হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগকে একঘরে করে দেব। রাজপথে নেমেছি আমরা, খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করে ঘরে ফিরে যাব না।

 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ছাল-বাকল দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, আপনি দ্রুত পদত্যাগ করুন। নইলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে টের পাবেন।

সমাবেশে দুদু বলেন, জনগণের দাবি মেনে না নিলে আপনাদের ছাল-বাকলও থাকবে না।

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘কেউ যদি পারেন, (এই সমাবেশের) একটি ভিডিও প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়ে দেবেন। তিনি অবাক হবেন, এতো বাধার পরেও কিভাবে এতো মানুষ হলো সমাবেশে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন জেলে। তিনি নানা রোগে আক্রান্ত। ৭৩ বছর বয়সে তাঁর জেল খাটার কথা না। দেশে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। বিচার হয়নি। আমরা সবাই বলছি, তাঁর (খালেদা) মুক্তি চাই। আমরা শপথ নেই, কিভাবে বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আনতে পারি।’

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সরকার চোরের মতো, ডাকাতের মতো ভোট ডাকাতি করছে। সিলেটের মানুষ সাহস দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, মেধা দিয়ে আরিফুল হক চৌধুরীকে বিজয়ী করেছে। আজ আমাদের শপথ নেয়ার সময়, সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যদি বিজয়ী হই, আপনারা যদি সমর্থন করেন, তবে তিন মাসের মধ্যে দেখবেন দেশে ওষুধের দাম অর্ধেক হয়ে গেছে, চিকিৎসা খরচ অর্ধেক হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের জোয়ারে নৌকা টালমাটাল, ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘কাঠাল দিয়ে আমসত্ত্ব হয় না। শেখ হাসিনার আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। শেখ হাসিনার আমলে ভোট ডাকাতি হয়।’

তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ মুক্তি চায়। ইলিয়াস আলীসহ সকল নেতাকর্মীকে ফিরে পেতে চায়। দেশের জনগণ কখনো পরাজিত হয় না।’

এদিকে, নবগঠিত বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সমর্থন জানিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে যোগ দিয়ে একথা জানান এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘আজকে এই সমাবেশ থেকে অলি আহমেদের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে পূর্ণাঙ্গ সমর্থন জানাই। যে দাবি নিয়ে ঐক্য হয়েছে, তাতে আমাদের পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.