এবার ভাঙন আতঙ্কে যমুনা পাড়ের মানুষ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি স্থানে ইতোমধ্যে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন শুরু হওয়ায় এবার যমুনা পাড়ের মানুষেরা নদী ভাঙার আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

করোনাভাইরাস দুর্যোগে নদী ভাঙন আতঙ্ক যুক্ত হয়ে মহাসংকটের শঙ্কায় চিন্তিত সিরাজগঞ্জের যমুনাপাড়ের মানুষেরা। নির্ঘুম রাত কাটছে এদের।

বন্যার পানি কমলেও নতুন করে এ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে।প্রতি বছর নদী ভাঙন আর বন্যার সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় সঞ্চয় হাতে রাখলেও এবারে সে সঞ্চয় করোনার লকডাউনে শেষ হয়ে গেছে।

প্রতিদিন ভাঙনের কবলে পড়ছে বসতভিটা, ফসলি জমি, বাগানসহ নানা স্থাপনা।গত কয়েক দিনের ভাঙনে কাজীপুর উপজেলায় শহীদ এম মনসুর আলী ইকো পার্কের কাছে ঢেকুরিয়া পয়েন্টে শহর রক্ষা বাঁধের পাশে ৫০ মিটার বিলীন হয়ে গেছে। এতে বেশ কিছু পরিবার ভাঙন আতঙ্কে বাড়িঘর সরিয়ে নেয়।

কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রহিম সরকার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, গত ২৩ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় বাঁধে ধস দেখা দেয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার ধসে যায়। এতে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী নাটুয়ারপাড়া হাট, স্কুল-কলেজসহ পুরো এলাকা। গত মাসেও ওই বাঁধের প্রায় ২শ মিটার নদীতে ধসে গেছে।

কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হাসান সিদ্দিকী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ঢেকুরিয়া নদী তীর রক্ষা বাঁধের নিম্নাংশে ধস দেখা দেওয়ায় তীরবর্তী বেশ কিছু পরিবার আতঙ্কে বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিয়েছে। ইতোমধ্যে সেই ধস রোধ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।অপরদিকে চৌহালী উপজেলার সদিয়া চাঁদপুর, বাঘুটিয়া ও খাস পুখুরিয়া ইউনিয়নে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। ইতোমধ্যে ওই তিনটি ইউনিয়নের চার শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। চাঁদপুর ও বোয়ালকান্দি গ্রামের প্রায় ২৫/৩০টি বাড়ি-ঘর ভাঙনের কবলে পড়েছে।

এছাড়াও শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর, খুকনী ও কৈজুরী ইউনিয়নের যমুনা তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙন চলছে।

চৌহালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম সিরাজ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ইতোমধ্যে চাঁদপুর গ্রামের ১৫টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। বোয়ালকান্দি গ্রামের বেশ কটি বাড়ি-ঘর ও একটি মসজিদ যমুনায় বিলীন হয়েছে।

চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের একটি টিনসেড ঘরও নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বিদ্যালয় ভবন কাম আশ্রয়কেন্দ্রসহ আরও দুটি ভবন রয়েছে নদী থেকে মাত্র কয়েক ফুট দূরে।

শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, কয়েক বছর ধরেই কৈজুরী থেকে ব্রাহ্মণগ্রাম পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন চলছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বাড়তে থাকায় চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে তীব্র স্রোত ও ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে ঢেকুরিয়া ও নাটুয়াপাড়ায় বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। তবে বালুভর্তি জিওব্যাগ ডাম্পিং করে ধস ঠেকানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শাহজাদপুর উপজেলার ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে কৈজুরী প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার নদী তীর অরক্ষিত থাকায় সেখানে ভাঙন রয়েছে। এছাড়া কাজিপুরে পাটাগ্রাম এলাকাতেও অরক্ষিত রয়েছে ৫ কিলোমিটার। এ দুটি তীর রক্ষায় এক হাজার ১শ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি মো: সুলতান হোসেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.